Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফসলি জমিতে পুকুর খনন

শামিম হোসেন, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে উদ্বেগজনক হারে ফসলি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে চলছে অবৈধ পুকুর খনন। ফলে একদিকে কমে যাচ্ছে দুই ফসলি ও তিন ফসলি জমির পরিমান। আর অন্য দিকে যেখানে-সেখানে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করায় ফসলের মাঠে সৃষ্টি হচ্ছে পানিবদ্ধতা। এতে ব্যাহত হচ্ছে ফসলি জমিতে চাষবাস। এ দিকে আবাদি জমিতে অবাদে অবৈধ পুকুর খনন রোধে প্রশাসনের তেমন তৎপরতা না থাকায় প্রশাসনের ভ‚মিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে।
জানা যায়, গত ১০ থেকে ১১ বছরে ফসলি জমিতে অবৈধ পুকুর খনন করায় উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ফসলি জমি কমেছে প্রায় ৬০০ হেক্টর। আর পুকুর খননের ফলে উপজেলার মাধবপুর, শ্রীকৃষ্ণপুর, বোয়ালিয়া, মঙ্গলবাড়িয়া, বাঁশবাড়িয়া, তাড়াশ পৌর এলাকার ফসলি মাঠ, কাউরাইল, শোলাপাড়া, সরাপপুর, বোয়ালিয়া, ভায়াট, লালুয়ামাঝিড়া, কামারশোন, জাহাঙ্গীরগাতী, খুটিগাছা, নওগাঁ, সাকইদীঘি, বিনসাড়াসহ নিচু এলাকার হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি পানিবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ওই সমস্ত এলাকার খাল, ব্রিজ ও পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হওয়ায় ফসলি মাঠে পানিবদ্ধতার কারণে জমিতে জেগে উঠেছে আগাছা। এতে অনেক জমিতে বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। তাছাড়াও পুকুর খনন করায় ফসলি মাঠ থেকে বর্ষার পানি সময় মতো নামতে না পারায় রবিশস্য চাষ করতে পারেনি কৃষকরা। বিলম্বিত হচ্ছে ইরি-বোরো আবাদও।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত উপজেলার আটটি ইউনিয়নের বিভিন্ন ফসলি মাঠে প্রায় দেড় সহস্রাধিক পুকুর খনন করা হয়েছে। এ পুকুর খননের ফলে প্রায় ৫৫০ থেকে ৬০০ হেক্টর আবাদি জমি কমে গেছে। এ ছাড়াও বর্তমানে এ বছর আবারও উপজেলার বিভিন্ন ফসলি মাঠে পুকুর খনন শুরু হয়েছে।
একাধিক স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, এলাকার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃষকদের বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে তাদের আবাদি জমি বার্ষিক লীজ নিয়ে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করছেন। যেখানে কৃষকেরা ধান চাষে প্রতি বিঘা জমিতে বছরে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার লাভ করে থাকতো, সেখানে পুকুর খনন করে প্রতি বিঘায় বছরে লীজ হিসেবে পায় ১৫-২০ হাজার টাকা। তাই বেশি মুনাফার লোভে কৃষকরা অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে জমি লীজ দিয়ে পুকুর খনন করছেন।
উপজেলার তাড়াশ সদর ইউনিয়নের মাধবপুর, শ্রীকৃষ্ণপুর ও ভায়াট গ্রামের কৃষক রবিউল করিম, জালাল উদ্দিন, মহর প্রামানিক, জফের আলীসহ একাধিক কৃষক বলেন, প্রতিবছর এলাকার শতশত বিঘা ফসলি জমিতে অবৈধ ভাবে পুকুর খনন করছে। এতে ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। আর যত্রতত্র পুকুর খনন করায় আবাদি জমিগুলোতে পানিবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। ফলে আগে যে জমিতে রবিশষ্য চাষ করা হতো এখন পানিবদ্ধতার কারণে ধান চাষ করাই কঠিন হয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ লুৎফুন্নাহার লুনা বলেন, ‘জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না’ সরকারি নির্দেশ অমান্য করে তিন ফসলি কৃষি জমিগুলোকে পরিনত করা হচ্ছে পুকুরে। প্রতিবছর পুকুর খনন করার ফলে আবাদি জমি দিন দিন কমে যাচ্ছে। এতে আশঙ্কাজনক হারে কমছে কৃষি জমি। ফলে ফসল উৎপাদনও কমে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ফসলি জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন প্রতিরোধে অভিযান অব্যবহত রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ