বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
![img_img-1719370170](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1596721670_35.jpg)
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
আবুল কাসেম হায়দার
১৯৫৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর প্রথম চীন সফর করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। ঠিক একই বছর ১৯৫৬ সালে চীনের প্রধানমন্ত্রী ১০ দিনের সফরে পাকিস্তান সফর করেন। তাই চীনের সঙ্গে আমাদের সর্ম্পক বহু দিনের। চীন আমাদের পরম বন্ধু হিসেবে সব সময় আমাদের সাথে রয়েছে।
চীনে আমাদের রফতানি মাত্র ৯০০ মিলিয়ন ডলার। আমাদের আমদানি ১০-১১ বিলিয়ন ডলার। বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে চীনের সঙ্গে। চীনের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অনেক বড়। তৈরি পোশাক শিল্পের যে আমদানি প্রয়োজন তা আমাদের দেশের পুরো রফতানি চীনে করলেও বাণিজ্য ঘাটতি মিঠবে না। শুধু তৈরি পোশাক শিল্পে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা লাভ করলে আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পের উৎপাদন ক্ষমতা কয়েকগুণ বৃদ্ধি করতে হবে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ১৪ অক্টোবর ১২ ঘণ্টার সফরে বাংলাদেশে আসেন। শি জিনপিং তার বক্তব্যে বলেন, চীন ও বাংলাদেশের সফরে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। ২০১৭ সাল হলো চীন ও বাংলাদেশের বন্ধুত্বের বছর। আমাদের এই দুই দেশ ভালো প্রতিবেশী ও বন্ধু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর উক্ত কথাগুলো চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন। বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে ২৭টি ঋণ ও কাঠামো চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। যে সব শর্তে এই সব চুক্তি হয়েছে সেগুলো হচ্ছে : বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ব্লু ইকোনমি, বিসিআইএমসি, সড়ক ও সেতু, রেলওয়ে, বিদ্যুৎ, মেরিটাইম, তথ্য প্রযুক্তি, শিল্প উন্নয়ন, সামর্থ্য বৃদ্ধি ও সিল্ক উন্নয়ন। বেসরকারি খাতে ১৩ বিলিয়নের ১৩টি বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। দুই নেতা ৬টি প্রকল্প উদ্বোধন করেন।
সফরের এক অংশে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে চীনের পক্ষ থেকে ভূ-রাজনীতিতে চীনের সমর্থনের জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া অনুরোধ করেন। অবশ্য চীনের সঙ্গে বিএনপির সর্ম্পক অনেক পুরাতন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মূলত চীনের সাথে সর্ম্পকের গোড়া পত্তন করেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের পর ২৩ দফা যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশ মনে করে, এই উদ্যোগ ২০২১ সালে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত করার জন্য বেশ সহায়ক হবে।
সারা বিশ্ব আজ চীনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। চীন বিশ্বকে কাঁপিয়ে তুলেছে। পশ্চিমা দেশসমূহ চীনের উন্নতিতে জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছে। চীন তাই তাদের জন্য একটি চিন্তার কারণ। কিন্তু চীন আমাদের উন্নয়নের বন্ধু। আমাদের চলার পথের সাথী। বিগত কয়েক বছর ধরে চীনের প্রবৃদ্ধি প্রায় ১০ শতাংশ। ১৯৮০ সালে চীন ও ভারত উভয়ের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৩০০ ডলার। বর্তমানে চীনের মাথা পিছু আয় ৬ হাজার ডলার। আর ভারতের মাথা পিছু আয় ২ হাজার ডলার। এই সকল সূচকে চীন অনেক অনেক এগিয়ে। আর এই সাফল্য বিশ্বের অনেক দেশকে বেশ চাপের মুখে রেখেছে। চীনের প্রেসিডেন্টের এই সফর বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক সফর। ইতিহাসে তা মাইল ফলক হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। বাংলাদেশ সব সময় এক চীন নীতিতে বিশ্বাসী। এই বিশ্বাসের কথা প্রধান মন্ত্রী তার আলোচনায় বলেছেন।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ অবকাঠামো, শিল্প, বিদ্যুৎ জ্বালানি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং কৃষির মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সহযোগিতায় ঐক্যমতে পৌঁছেছে। আমাদের ও চীনের মধ্যেকার সুসর্ম্পক ধীরে ধীরে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি পণ্য শুল্কমুক্ত দেওয়ায় চীনে রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে রফতানি ১৩০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। যা ২০১২ সালে ছিল মাত্র ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার। চীনে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা করার জন্য আগ্রহী। প্রতি বছর বিভিন্ন পর্যায়ে চীনে ২০০ ছাত্র-ছাত্রী বৃত্তি নিয়ে লেখা পড়া করতে যাচ্ছে। এই বন্ধুত্বপূর্ণ সর্ম্পক বৃদ্ধি পেলে বৃত্তির পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে। ছাত্র-ছাত্রীদের চীনে গিয়ে লেখাপড়া শেখার আগ্রহ বাড়বে। তাতে দুই দেশের সর্ম্পক উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যেতে সহজ হবে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ চীন বিমান চলাচল সহজ হয়েছে। প্রচুর চীনা ব্যবসায়ী সহজে বাংলাদেশে আসতে পারছেন। চীনা প্রেসিডেন্টের সফর সঙ্গী ছিলেন ৮৬ জন। এই বিশাল সংখ্যক ব্যবসায়ী সফর সঙ্গী থাকার কারণে আমাদের মধ্যে আলাদা আলোচনা অনেক হয়েছে। ব্যবসার বিনিয়োগ দরজা সহজে খোলছে। ইতোমধ্যে ১৩টি ব্যবসায়িক ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এই চুক্তিগুলোকে বাস্তবে রূপ দেয়া আমাদের বড় কাজ। এই ঋণ চুক্তি যত সহজে বাস্তবায়ন করা হবে, ততই আমাদের বাণিজ্য সর্ম্পক বৃদ্ধি পাবে। আমাদের বৈদেশিক নীতি হচ্ছে সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব। কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়। অন্য দিকে চীনের ‘এক চীন’ নীতিকে আমরা সকল দিক থেকে সমর্থন করায় চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বের হাত এগিয়ে রয়েছে।
আমাদের রফতানি পণ্যে ব্যাপক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সহজে চীনে যে সকল দ্রব্য আমরা রফতানি করতে পারি, তার পরিধিও বিস্তৃত করতে হবে। তৈরি পোশাক শিল্পে চীনে রফতানিতে প্রবেশ করার চেষ্টা সব চেয়ে বেশি করার প্রয়োজন। চীনের বিশাল মার্কেটে সামান্য একটু অংশ আমরা লাভ করতে পারলে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি নেমে আসবে শূন্যে। এই খাতকে আমাদের প্রথম ও প্রধান খাত হিসেবে টার্গেট করা প্রয়োজন।
য় লেখক : সাবেক সহ-সভাপতি এফবিসিসিআই, বিটিএমএ, বিজেএমইএ, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি
ধয়যধরফবৎ@ুড়ঁঃযমৎড়ঁঢ়নফ.পড়স
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।