পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর নতুন শহর পূর্বাচলের ৪নং সেক্টরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) আগামী ১ জানুয়ারি শুরু হতে যাচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। এখানে তেমনভাবে জনবসতি গড়ে না উঠায় সাধারণ মানুষের যাতায়াতের জন্য সচরাচর কোনো পরিবহন নেই। কুড়িল বিশ্বরোড মোড় থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথে সাধারণ মানুষের একমাত্র শেষ ভরসা বিআরটিসি (আর্টিকুলেটেড) বাস ও রিকশা। এসব বাহন পেতে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
এরআগে চলতি বছরের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থায়ী প্যাভিলিয়ন উদ্বোধন করেছেন। তবে এ মেলার প্রবেশ মুখের দুই মহাসড়বে নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় দর্শনার্থী, ক্রেতা ও বিক্রেতাদের যাতায়াত ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন ভুক্তভোগিরা। রাজধানী থেকে মেলার নতুন জায়গায় যাওয়ার একমাত্র পথ হচ্ছে বিশ্বরোড-কাঞ্জনব্রিজ সড়ক। ১০০ ফুট চওড়া খাল খনন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় সড়কে ব্যাপক যানজট হচ্ছে। সড়ক ভোগাবে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের। সরেজমিনে মেলার প্রস্তুতি দেখে এমনই চিত্র দেখা যায়। যদিও এবারের মেলায় চলাচলের সুবিধার্থে কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে মেলা প্রাঙ্গণে বিআরসিটিসির বাস চলবে। ডিসেম্বরের মধ্যেই পূর্বাচলের রাস্তা সংস্কার করে চলাচলের জন্য উপযোগী করার আশ্বাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর কুড়িল ফ্লাইওভার এলাকা থেকে ৩শ ফুট সড়কের উন্নয়ন কাজ চলমান। এতে উভয়পাশে দীর্ঘদিন ধরে যানজটের কবলে পড়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন এ সড়কে যাতায়াতকারী পথচারী ও যানবাহন। আবার পূর্বাচলের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া এশিয়ান হাইওয়ে বা ঢাকা বাইপাস রোডের ৪ লেনে উন্নীত হওয়ার কথা থাকলেও অগ্রগতি নেই কাজে। ফলে পুরনো দুই লেনের সড়কটিতে মালবাহী ট্রাক চলাচল করায় নিত্য যানজট চিত্র এখানকার ভোগান্তির কারন। এমন পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ প্যাভিলিয়ন প্রস্তুত হচ্ছে তাদের স্টল নির্মানের মাধ্যমে। স্থায়ী স্টলের সাজসজ্জা আর অস্থায়ী স্টলের নির্মাণ কাজের মধ্যে ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্তব্যরত শ্রমিক ও স্টল বরাদ্দ পাওয়া ব্যবসায়ীরা। তবে প্রস্তুত নয় চারপাশের যাতায়াত পরিবেশ। ইতোমধ্যে সড়কগুলো হয়ে পড়েছে খানা খন্দে ভরপুর।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রউফ মালুম বলেন, অপেক্ষার প্রহর শেষে করোনা মহামারী পরিস্থিতি কাটিয়ে আগামী ২০২২ সালের ১ জানুয়ারী শুরু হবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। এবারই প্রথম গ্রামের লোকজন সরাসরি সুযোগ পাচ্ছে এ মেলার সুবিধা নিতে।
রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছালাহউদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, আমরা রূপগঞ্জবাসি এ মেলায় যাতায়াত পথ ও আগত দর্শনার্থী, ব্যবসায়ীসহ সকলের পর্যাপ্ত সহযোগীতা অব্যাহত রাখবো। তবে এখনো স্থানীয় রাস্তাঘাটের উন্নয়ন বাকি। খানাখন্দ মেরামত জরুরী। তবে এ বছর কিছুটা কষ্ট হলেও পরবর্তী বছরে সেই ভোগান্তি আর থাকবে না।
সরেজমিন ঘুরে আরো দেখা যায়, রাজধানীর কুড়িল থেকে ৩শ ফুট সড়কটিতে সেনাবাহিনী পরিচালিত উন্নয়ন কাজ চলছে। সংশ্লিষ্টদের দাবী, ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে উন্নয়ন কাজের মাটি সড়কে পড়ার পর ধুলোবালি আবার কোথাও পানি জমে পুরো রাস্তা জুরেই অনুপযোগী পরিবেশ। আবার অন্যান্য জেলা থেকে যাতায়াতের জন্য এশিয়ান বাইপাশ মহা সড়কটিও দুই লেনের থাকায় সব সময় যানজট লেগে থাকে। রূপগঞ্জের ভুলতা গাউছিয়া এলাকা দিয়ে সিলেট, নরসিংদী, চট্টগ্রামের মালবাহী গাড়ী প্রবেশ করে গাজীপুর দিয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলে প্রবেশ করে। এ সড়কে সাধারনত যাত্রীবাহী গাড়ীর সংখ্যা কম। তবে এ সড়কটিও পুরো নিরাপদ নয়। স্থানে স্থানে ভাঙ্গাচোড়া ও বেহাল দশা বিদ্যমান। একইভাবে ডেমরা কালীগঞ্জ সড়কের রূপগঞ্জ অংশের বেশির ভাগই ভেঙ্গে পড়েছে। ফলে স্থানীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
জানা গেছে, ঢাকা বিভাগের নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচলের ৪ নম্বর সেক্টরের ৩১২ নম্বর রোডের ০০২ নম্বর প¬টে নির্মাণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার। মোট ৩৫ একর জমির ২০ একরের ওপর নির্মাণাধীন এই সেন্টারে আধুনিক কার পার্কিং, সম্মেলন কক্ষ, সভাকক্ষ, প্রেস সেন্টার, অভ্যর্থনা কক্ষ, বাণিজ্য তথ্যকেন্দ্র, আধুনিক সুবিধাসংবলিত ডরমিটরি রয়েছে। এ ছাড়া এক্সিবিশন সেন্টারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক সিসি টিভি, আধুনিক ব্যবস্থাসহ বিদ্যুতের নিজস্ব সাব সেন্টার, সার্ভিস রুম, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, কালভার্ট ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে।
এক্সিবিশন সেন্টারটির প্রকল্প পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, মেলাপ্রাঙ্গণ প্রস্তুত। ইপিবি মেলার লেআউটসহ অন্যান্য কাজ করবে। মেলায় যাতায়াত পথ ভোগান্তিহীন করতে সংশ্লিষ্ট দফতরে জানিয়েছি। বাণিজ্যমেলাকে কেন্দ্র করে কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে পূর্বাচলের মেলাকেন্দ্রে বিআরটিসির বাস চলাচল করবে। মাসব্যাপী এই রুটে বিআরটিসির ৩০টি বাস চলাচলের জন্য চিঠি দিয়েছে ইপিবি।
এ বিষয়ে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী উজ্জল মল্লিক বলেন, সম্প্রতি রাজউকের চেয়ারম্যান ও ঊর্ধ্বতন ইঞ্জিনিয়ার ও ইপিবির কর্মকর্তারা মিলে সভা করেছি। সেখানে ডিসেম্বরের মধ্যে পূর্বাচলের ১৩ কিলোমিটার রাস্তা চলাচলের জন্য উপযোগী করার সিদ্ধান্ত হয়। যা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে প্রায়। ফলে দুই লেন করে দুইপাশে চার লেনে গাড়ি চলবে। কোনো কোনো জায়গায় হয়তো বেশিও থাকবে। এখনই অনেক জায়গায় প্রধান সড়ক দিয়ে চলাচল করা যাচ্ছে। আর প্রধানমন্ত্রী সরাসরি বাণিজ্যমেলা কেন্দ্রে গেলে এই সড়ক সংস্কারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টার কথা বলা হয়েছে।
মেলার দায়িত্বরত কর্মকর্তা প্রকৌশলী মামুন আহমেদ বলেন, এবারের বাণিজ্যমেলায় প্রায় তিনশ স্টল থাকার কথা ছিলো। তবে মানুষের চলাচল নির্বিঘœ করতে সেখানে দুইশ স্টল বানানো হয়েছে। তাই এক স্টল থেকে আরেকটির দূরত্ব এবং মানুষের চলাচলের বিষয়টি মাথায় রাখা হয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ইপিবির সচিব ও মেলার পরিচালক মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, আগামী ১ জানুয়ারি থেকে মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলা হবে। এখানে যাতায়াত ভোগান্তি এ বছর কিছুটা থাকতেই পারে। তবে আমরা বিআরটিসিকে চিঠি দিয়েছি। শাটল সার্ভিস চালু করার জন্য। তা কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচ থেকে মেলা পর্যন্ত চলবে।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, আগারগাঁয়ে যেভাবে মেলা জমে উঠত এখানে সেভাবে জমবে না। কারণ যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই খারাপ। যাদের প্রাইভেট গাড়ি রয়েছে তারা ভাঙ্গাচোরা সড়কে আসতে পারলেও সাধারণ মানুষ সহজে আসতে পারবে না। কারণ সচরাচর বাস নেই। অন্য পরিবহনও নেই।
উল্লেখ্য যে, ১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে অস্থায়ী জায়গায় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। তবে সেটা স্থায়ী ছিলো না। তাই স্থায়ী প্যাভিলিয়ন হিসেবে গত ৭ ফেব্রæয়ারি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির কাছে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারটি হস্তান্তর করেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। পরে গত ২১ অক্টোবর প্রদর্শনী কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারটি নির্মাণে মোট ব্যায় হয়েছে ৭৭৩ কোটি টাকা। যার মধ্যে চীনের অনুদান ৫২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, বাংলাদেশ সরকারের ২৩১ কোটি টাকা ও ইপিবি নিজস্ব তহবিল থেকে ২১ কোটি ২৭ লাখ টাকা অর্থায়ন করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।