Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

শের-ই-বাংলায় চিকিৎসাধীন অভিযান-১০’এর অগ্নিদগ্ধ ৭০ যাত্রী

অনেকেরই নিকটজন সহযাত্রীর খোজ নেই

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ৫:৩৯ পিএম | আপডেট : ৫:৫৮ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১

ঢাকা থেকে বরগুনাগামী যাত্রীবাহী নৌযান ‘এমভি অভিযান-১০’এর অগ্নিদগ্ধ হতভাগ্য ৭০ যাত্রীর বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা চললেও তাদের অনকেরই সহযাত্রী সহ নিকটজনের সন্ধান মিলছে না। এদের অনেকেই সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ীতে নিকটজনের কাছে, আবার কেউ ঢাকায় চিকিৎসা শেষে বাড়ীতে ফেরার জন্য ঐ অভিশপ্ত নৌযানের যাত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু মৃত্যুর মুখোমুখি এক ভয়াল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে এখন তাদের ঠাই হয়েছে হাসপাতালের বেডে। অনেকেই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে। আবার কারো কারো সহযাত্রী নিকটজনেরা কোথায় তা বলতে পারছেন না।


এ অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে শরীর ও মনের অতন্ত দূর্বল সময় অতিক্রম করছেন অগ্নিদগ্ধ বেশীরভাগ রোগী। তবে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পরে সংকটাপন্ন অবস্থায় তাইফা নামের একটি শিশুর মৃত্যু ঘটেছে ঢাকা নেবার পথে। এছাড়া আরো কয়েকজনকে ঢাকায় পাঠানোর পরে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট হাসপাতালে শণিবার এক বয়স্ক রোগীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।


ঢাকার মাদারটেক-এর বাসিন্দা পুতুল পরিবারের ৯ সদস্যর সাথে বরগুনায় বোনের বাড়ীতে যেতে সদরঘাট থেকে উঠেছিলেন অভিশপ্ত ‘এমভি অভিযান-১০’এর লোয়ার ডেক’এ। কিন্তু সবার সাথে সেও যখন গভীর ঘুমে, তখন অসেপাশের লোকজনের আর্ত চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুনের লেলিহান শিখার তাপে তার শরিরের অনেকটা পুড়ে যাবার মধ্যেই দৌড়ে লঞ্চের কিনারায় গিয়ে নদীতে ঝাপ দেন। পরে কে বা কারা তাকে উদ্ধার করে ঝালকাঠী হাসপাতালে পৌছে দিলেও পরবর্তিতে ঠাই হয়েছে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু পরিবারের ৬ সদস্য এখনো নিখোঁজ।


বরগুনার পাথরঘাটার তাসলিমা ঢাকায় হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে স্বামী সহ অভিযান-১০ লঞ্চের লোয়ার ডেকের ইঞ্জিন রুমের কাছে জায়গা নিয়ে বরগুনায় ফিরছিলেন। কিন্তু গভীর রাতে বিকট শব্দের সাথে সহযাত্রীদের ডাক চিৎকারে ঘুম ভেঙে যাবার সাথে আগুন দেখে হতভম্ব হয়ে পড়েন। কিন্তু লোকজনে আর্তনাদ ও দৌড়ঝাপের মধ্যে তার স্বামী হারিয়ে যায়। ফলে জীবন বাঁচাতে পৌষের কুয়শাচ্ছন্ন কনকনে শীতের মধ্যেই সেও ঝাপিয়ে পরে সুগন্ধা নদীতে। কিন্তু তার আগেই তার শরীরের অনেকটাই পুড়ে গেছে। অন্যদের সাথে বেশ কিছুক্ষন সাঁতার কাটার পরে অন্য লোকজন তাকে ঝালকাঠী হাসপাতালে নেয়ার পরে সেখান থেকে ঠাই হয়েছে বরিশালের শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তার স্বামীও অগ্নিদগ্ধ হয়ে এখন একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।


বরগুনার গোলাম মাওলা অভিযান-১০’এর দোতালার ডেকে যাত্রী ছিলেন। নৌযানটিতে আগুন লাগার পরে অন্য যাত্রীদের সাথে নিচে নামতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কিতে সিড়ে দিয়ে ছিটকে নিচে পড়ে যান গোলাম মাওলা। আগুনের আঁচ লাগে তার গায়ে। পুড়তে থাকে শরিরের বিভিন্ন অংশ। কিছুক্ষনের মধ্যে অভিশপ্ত অভিযান-১০ সুগন্ধা নদীর কিনারায় আটকে গেলে অন্য যাত্রীদের সাথে সেও নেমে পড়েন। পরে স্থানীয় মানুষ অন্যদের সাথে গোলাম মাওলকেও ঝালকাঠী হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে অগ্নিদগদ্ধ গোলাম মাওলার ঠাই হয়েছে বরিশালের শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হসপাতালে।
এদিকে বিআইডব্লিউটিএ’র অতিরিক্ত পরিচালক-বন্দর সাইফুল ইসলাম-এর নেতেৃত্বে ‘তদন্ত কমিটি ‘এম ভি অভিযান-১০’এ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় শনিবারই দূর্ঘটনা কবলিত নৌযানটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে সব কিছু খতিয়ে দেখেছেন। ইতোমধ্যে তারা নৌযানটির বেশ কয়েকজন যাত্রীর সাক্ষ্য গ্রহন করেছেন। তদন্ত টিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যাত্রীদেরও বক্তব্য গ্রহন করবেন বলে জানা গেছে। ২৫-১২-২০২১.



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ