বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বিএনপি দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার অনুমতির দাবিতে বুধবার (২২ ডিসেম্বর) টাউন হল ময়দানে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ গনসমাবেশের হয়েছে। সমাবেশে প্রায় ৫০ সহস্রাধিক জনতার উপস্থিতি হয়েছিল। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, সরকার সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের নামে ছাগল খুঁজছে। ফলে আমরা এই সরকারের অধীনে বিএনপি কোন নির্বাচনে যাবে না। এমনকি ঘরে বসেও থাকবে না। একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করা হবে। গণসমাবেশে মির্জা আব্বাস আরো বলেন, রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন করা এ দেশের সরকারকে বিদেশে মাফিয়াদের দেশ বলে চেনে। এর থেকে দেশকে বের করতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন হবে। যশোর থেকে প্রতিরোধ যাত্রা শুরু হল।
তিনি আরো বলেন, এ দেশে মৃত্যুদ- প্রাপ্তরা মুক্তি পেয়ে বিদেশে চলে যায়। অথচ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আইনের দোহাই দিয়ে বিদেশে যেতে দিচ্ছে না। এ সরকার চায় খালেদা জিয়াকে আটকে রাখতে। কারণ তারা মনে করেন খালেদা জিয়া দেশের বাইরে গেলে এ সরকার টিকে থাকতে পারবে না। তবে তাকে আটকে রেখেও শেষ রক্ষা হবে না। বিএনপি নেতাকর্মীরা আন্দোলনের মাধ্যমে আপনাদের পতন ঘটাবে।
যশোর জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপিকা নার্গিস বেগমের সভাপতিতে সমাবেশে বিশেষ অতিথি কেন্দ্রীয় ভাইস-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্যে আইনগত কোনও বাধা নেই- আইনমন্ত্রী আমাদের এই কথা বললেও তারা সেই ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা নেননি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কেউই মুক্তিযুদ্ধ করেননি; এমনকী ৩০ লাখ শহীদের মধ্যে তাদের কেউ নেই। কেননা যুদ্ধ শুরু হলে তারা সব পালিয়ে ভারতে চলে যায়। সেই সময় মেজর জিয়া শুধু স্বাধীনতার ঘোষণায় দেননি, সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ করেছে।
তিনি বলেন, আজকের এই মহাসমাবেশ যাতে না হতে পারে, সেকারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পেটোয়া বাহিনি দিয়ে যশোরের সব যানবাহন এমনকী রিকশাও বন্ধ করে দিয়েছে। তার প্রশাসন শহরের সব মাইকের দোকান, ডেকোরেশনের দোকান গতকাল রাতেই বন্ধ করে দেয়। কিন্তু শহিদ জিয়ার সৈনিকরা, খালেদার জিয়ার সৈনিকরা- সেইসব বাধা উপেক্ষা করে ২০ থেকে ত্রিশ কিমি পথ পায়ে হেঁটে এই মহাসমাবেশে যোগ দিয়েছে। তিনি যশোরকে বাধা অতিক্রম করার জেলা আখ্যা দিয়ে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের সোপান এখান থেকেই শুরু হলো। আরও বক্তব্য রাখেন বিশেষ অতিথি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেস্টা মশিউর রহমান, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, বিএনপি সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কু-ু, সহ ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, বিএনপির কেন্দ্র নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সাবেরুল হক সাবু প্রমুখ।
এদিকে, দীর্ঘ ৯ বছর পর জেলা বিএনপির প্রকাশ্যে কোন সমাবেশ হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে আগ্রহ-উচ্ছ্বাস লক্ষ করা গেছে। সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ শহরমুখী হয়। দুপুরের আগেই শহরের টাউন হল ময়দান বিএনপির নেতাকর্মীদের উপস্থিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। দুপুরের পর শহরের মানুষের ঢল নামে। উপজেলা ও গ্রাম থেকে আসা বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বিএনপির গণসমাবেশ বানচাল করার জন্য পথে পথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে বাঁধা দেয়া হয়েছে। তারপরও বাঁধা উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগদান করেছেন। অনেকদিন পর বিএনপি বড় ধরণের সমাবেশ করতে সক্ষম হলো।
বুধবার ভোর থেকে বিভিন্ন উপজেলা হতে আসা দলটির নেতাকর্মীরা টাউনহল মাঠে ঢুকতে চাইলে পড়েন পুলিশি বাধার মুখে। মণিরামপুর থানা যুবদলের সদস্য সচিব সাইদুল ইসলাম বলেন, বেলা ২টায় সমাবেশ হলেও তারা সকাল ৭টায় যশোরে পৌছান। কিন্তু পুলিশ তাদেরকে টাউনহল মাঠে প্রবেশ করতে দেয়নি। একই অভিযোগ করেন ঝিকরগাছার যুবদলকর্মী সুজন মিয়া। এদিকে সকাল পৌনে ৯টায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা বাধা উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে টাউনহল মাঠে ঢুকে পড়ে। তারা মাঠের দখল নিয়ে মঞ্চ ও মাইক সংযোগের কাজ শুরু করেন। তবে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে তাদের ইতিবাচক যোগাযোগ চলছিল। তার ফলশ্রুতিতে অনুমতি সাপেক্ষেই বিএনপি সমাবেশ করছে। তবে কোতয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম জানান, পুলিশ সমাবেশে বাধা দেয়নি। বরং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন তারা।
উল্লেখ্য, খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার দাবিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে তিন দফায় ৩২ জেলায় এ গণসমাবেশ হতে যাচ্ছে। আজ খুলনা বিভাগে কেবলমাত্র যশোর জেলাতেই এই গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার যশোরে জেলা বিএনপি আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নার্গিস ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত প্রমুখ। গণসমাবেশ পরিচালনা করেন জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান ও নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুনীর আহম্মেদ সিদ্দিকী বাচ্চু।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, প্রশাসনের অনুমতি পেয়েই তারা সমাবেশ করছেন। দুপুরের মধ্যেই টাউন হল মাঠ ভরে যায়।
মাগুরা জেলা বিএনপি সদস্য সচিব জনাব মোঃ আক্তার হোসেন বলেন, মাগুরা থেকে আমরা বাসে করে যশোর আসার পথে বিভিন্ন স্থানে বাধা দিয়েছে পুলিশ। শালিকা থানার সামনে আসলে আমাদের ৫/৮টি বাস আটক করে। পরে পায়ে হেটেঁ ও স্থানিয় যানবাহনে নেতা কর্মীরা যশোরে পৌছায়। মাগুরা থেকে যশোর ১ ঘন্টার পথ প্রায় ৪ ঘন্টা সময় লেগেছে বলে তিনি জানান। সমাবেশ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ শেষ হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।