Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চৌগাছায় ভুয়া এনজিও কোটি টাকা নিয়ে উধাও

যশোর ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

‘১০ বছরে দ্বিগুণ লাভ’ লোভ দেখিয়ে যশোরের চৌগাছায় প্রায় কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে স্থানীয় দুটি ভুয়া বেসরকারি সংস্থা (এনজিও)। প্রথমে পিডো পরে আড়পাড়া সমাজ কল্যাণ সংস্থার নামে উপজেলার জগদীশপুর ও ফুলসারা ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রামের পাঁচ শতাধিক গ্রাহকের প্রায় এক কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে ওই দুটি এনজিও।
জানা যায়, উপজেলার জগদীশপুর ইউনিয়নের মাড়ুয়া, আড়পাড়া, কান্দি এবং ফুলসারা ইউনিয়নরে সৈয়দপুর, কোটালিপুর, রায়নগর, চারাবাড়িসহ প্রায় ১০টি গ্রাম থেকে সঞ্চয় ও ডিপিএস-এর নামে এই টাকা সংগ্রহ করে এনজিও দুটি।
জগদীশপুর ও ফুলসারা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের শতাধিক গ্রাহকের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল মঙ্গলবার ওই উপজেলার জগদীশপুর ইউনিয়নের আড়পাড়া বাজারে গিয়ে দেখা যায় বাজারের একটি দোকান ঘরে ‘আড়পাড়া সমাজ কল্যাণ সংস্থা’ নামে একটি সাইনবোর্ড ঝুলছে। তাদের প্রধান কার্যালয় হিসেবে যশোর শহরের সমবায় মার্কেট (মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটি প্রাঃ অনুমোদিত) লেখা রয়েছে।
ঘরটির সামনে জড়ো হয়েছেন বেশ কিছু নারী পুরুষ। তাদের অভিযোগ গত কয়েক বছর ধরে সংস্থাটি তাদের কাছ থেকে সঞ্চয় ও ডিপিএস জমার কথা বলে টাকা নিয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে তাদের সাথে কোনোভাবে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। স্থানীয়ভাবে সংস্থাটির পক্ষে গ্রামের পারভীনা খাতুন নামে এক নারী সঞ্চয় ও ডিপিএসএর টাকা আদায় করতেন।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১৯ সালে পল্লী অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংস্থা পিডো উপজেলার দুটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। বছর পার না হতেই সেই নাম পরিবর্তন হয়ে একই ভবনে ‘আড়পাড়া সমাজ কল্যাণ সংস্থা’ নামে অফিসটির নাম পরিবর্তন হয়ে যায়।
সংস্থাটির অফিসের সাইনবোর্ড এবং স্থানীয়দের সংগ্রহে থাকা সংস্থা দুটির অর্থ সংগ্রহের রশিদ ও টাকা জমা নেয়ার
বইতে পিডোর ঠিকানা যশোর, রূপদিয়া, সদর যশোর। স্থাপিত ১৯৯৮ ইং লেখা আছে। এছাড়া সাইনবোর্ডে অফিসের প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা যশোর সমবায় মার্কেট এবং নির্বাহী পরিচালক হিসেবে নাসিমা খাতুন তিথির নাম লেখা আছে। সংস্থা দুটি তিন বছরে প্রায় এক কোটি টাকা গ্রহণ করেছে। তাদের পাঁচশতাধিক গ্রাহক রয়েছে।
চৌগাছা ও যশোর সমাজসেবা কার্যালয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ‘পিডো’ বা ‘আড়পাড়া সমাজ কল্যাণ সংস্থা’ নামে সরকার অনুমোদিত কোনো সংস্থার অস্তিত্ব নেই। অনুমোদন ছাড়াই তারা চৌগাছার এ অঞ্চলে মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছে।
আড়পাড়া বাজারে ওই সংস্থার অফিসের ঘরের মালিক বাবলুর রহমান জানান, সাত মাসের ঘর ভাড়া না দিয়ে পালিয়েছে তারা। এ বিষয়ে পিডোর সেই মাঠ কর্মী পারভিনা জানিয়েছেন, দেড় বছর আগে পল্লী অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংস্থা পিডো ছেড়ে চলে এসেছি। তখন পিডোর নির্বাহী পরিচালক ছিলেন যশোর রূপদিয়ার মাসুদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি।
তিনি গ্রাহকদের টাকা পয়সা মেরে ভারতে পালিয়ে যান। ভ‚ক্তভোগিরা জানিয়েছেন পারভীনার চাচাতো ভাই আড়কান্দি গ্রামের কাশেমের ছেলে সোহাগ হোসেন সংস্থার টাকা সংগ্রহ করতেন।
সোহাগ হোসেন জানান ‘যশোরের আবু সাঈদ নামে একজন ‘আড়পাড়া সমাজ কল্যাণ সংস্থা’র এমডি এবং তার স্ত্রী নাসিমা খাতুন তিথি নির্বাহী পরিচালক। তবে পরে জেনেছি তাদের সরকারি কোনো অনুমোদন নেই এবং যশোরের কোথাও তাদের কোনো অফিস নেই।’
এ বিষয়ে চৌগাছা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মেহেদি হাসান জানান, আড়পাড়া সমাজ কল্যান সংস্থা নামে কোনো সংস্থার নাম আমাদের তালিকায় নেই।
জগদীশপুর ইউনিয়নের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান মাস্টার সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘আমার কাছে ওই গ্রামের পারভীনার বাবা এসেছিলেন। আমি তাকে অফিস খুলে ভ‚ক্তভোগিদের টাকা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বলেছি।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ