বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
উপদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে কোরআনের রয়েছে বহু শৈলী। কখনো আদেশ-নিষেধের সুরে, কখনো পূর্ববর্তী উম্মতের ঘটনা বর্ণনার মাধ্যমে, কখনো জান্নাতের সুখ-শান্তি ও জাহান্নামের শাস্তির বর্ণনা দিয়ে, কখনো সৃষ্টিজগতের বিভিন্ন নিআমতের কথা উল্লেখ করে। এছাড়াও আরো বিভিন্ন শৈলীতে কোরআনে কারীমে উপদেশ পেশ করা হয়েছে। প্রতিটি শৈলীরই রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও আবেদন।
এই শৈলীগুলোর একটি হলো, মুমিনদের বিভিন্ন গুণ ও বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা। উদ্দেশ্য হলো, মুমিনগণ যেন এসব গুণ-বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়; ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবনে এগুলোকে গ্রহণ করে। সূরা মুমিনূনের শুরুতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুমিনের এমনই কিছু বিশেষ গুণ ও বৈশিষ্ট্যের কথা তুলে ধরেছেন।
ইরশাদ হয়েছে : নিশ্চয়ই সফলতা অর্জন করেছে মুমিনরা; যারা তাদের নামাজে আন্তরিকভাবে বিনীত। যারা অহেতুক বিষয় থেকে বিরত থাকে। যারা যাকাত সম্পাদনকারী। যারা নিজ লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করে; নিজেদের স্ত্রী ও মালিকানাধীন দাসীদের ছাড়া অন্য সকলের থেকে, কেননা এতে তারা নিন্দনীয় হবে না। তবে কেউ এছাড়া অন্য কিছু কামনা করলে তারাই হবে সীমালঙ্ঘনকারী। এবং যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রæতি রক্ষা করে। এবং যারা নিজেদের নামাজের পরিপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণ করে। এরাই হলো সেই ওয়ারিশ, যারা জান্নাতুল ফিরদাউসের মীরাস লাভ করবে। তারা তাতে সর্বদা থাকবে। (সূরা মুমিনূন : ১-১১)।
উল্লেখিত আয়াতগুলোতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুমিনের সাতটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন : (এক) যারা তাদের নামাজে আন্তরিকভাবে বিনীত। প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো, মুমিন নামাজে ‘খুশু’ অবলম্বন করে। নামাজ ঈমানের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। মুমিনের চক্ষু-শীতলতা। আল্লাহর নৈকট্য লাভের অনেক বড় একটি মাধ্যম। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন : নামাজে রাখা হয়েছে আমার চোখের শীতলতা। (সুনানে নাসায়ী : ৩৯৪০)।
অন্য হাদীসে এসেছে : সিজদারত অবস্থায় বান্দা তার রবের সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী হয়। (সহীহ মুসলিম : ৪৮২)। তবে নামাজের মিষ্টতা এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অনুভ‚তি তখনই উপলব্ধি হবে, যখন নামাজ ‘খুশু’ এর সাথে আদায় করা হবে। আয়াতে শুধু নামাজ পড়ার কথা বলা হয়নি; বরং ‘খুশু’-এর সাথে নামাজ আদায়ের কথা বলা হয়েছে। ‘খুশু’-এর অর্থ হলো, বিনয়ের সাথে অন্তরকে আল্লাহর অভিমুখী করা। (তাফসীরে কাবীর ২৩ : ২৫৯)।
নামাজে ইচ্ছাকৃত অন্তরে অন্য কোনো খেয়াল না আনা। অন্য কোনো খেয়াল এসে গেলে সাথে সাথে মন নামাজের অভিমুখী করা। ‘খুশু’ হাছিলের একটা সহজ পদ্ধতি হলো নামাজে যা পড়া হয় তার দিকে ধ্যান রাখা। অর্থ জানা থাকলে অর্থের দিকে খেয়াল করা। দিলের মধ্যে এই অনুভূতি রাখা যে, আমি সর্বক্ষমতাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। তিনি আমাকে দেখছেন।
‘খুশু’ এর অপরিহার্য দাবি হলো, নিজের বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও স্থির রাখা। (প্রাগুক্ত)। যেটাকে আমরা ‘খুযু’ বলে থাকি। এর সারকথা হলো, নামাজের মধ্যে প্রতিটি অঙ্গ সুন্নাহসম্মত পন্থায় রাখা। এজন্য প্রত্যেকের জন্য জরুরি হলো, নামাজে কোন্ অবস্থায় কোন্ অঙ্গ কীভাবে রাখতে হয় তার সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি জানা এবং সে অনুযায়ী আমল করা।
(দুই) যারা অহেতুক বিষয় থেকে বিরত থাকে। সুন্দর মুসলিম হওয়ার একটি নিদর্শন হলো, অর্থহীন কাজ ত্যাগ করা। (জামে তিরমিযী : ২৩১৮)।
অহেতুক বিষয় থেকে বেঁচে থাকার সর্বপ্রথম ক্ষেত্র হলো, সকল প্রকার গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা। তেমনিভাবে এমন কথা, কাজ, লেখা ও চিন্তা থেকে বেঁচে থাকা, যাতে না দ্বীনী কোনো ফায়েদা আছে, না দুনিয়াবী কোনো ফায়েদা আছে।
অহেতুক বিষয় থেকে বেঁচে থাকার একটি প্রায়োগিক দিক হল, কোনো বেহুদা ও অহেতুক আচরণ বা কথার সম্মুখীন হলে প্রতিউত্তর না দেয়া, এড়িয়ে চলা। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে, তারা (রহমানের বান্দারা) যখন বেহুদা কার্যকলাপের পাশ দিয়ে যায় তখন আত্মসম্মান বাঁচিয়ে যায়। (সূরা ফুরকান : ৭২)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।