পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আফ্রিকায় করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ শনাক্ত হওয়ার পর বিশ্বের দেশে দেশে এটি ছড়িয়ে পড়ছে। করোনাভাইরাসের নতুন ধরন নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোতে টিকার বুস্টার ডোজ (তৃতীয় ডোজ) দেয়া শুরু হয়েছে। পৃথিবীর বড় দেশগুলোর মতোই বাংলাদেশেও বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু হয়ে গেছে। গতকাল ৫ জন মন্ত্রীসহ কয়েকজন বুস্টার ডোজ টিকা গ্রহণ করলেও আজ সোমবার থেকে ঢাকায় এ টিকা ৬০ বছরের বেশি বয়সিদের দেয়া হবে। ২৮ ডিসেম্বর থেকে এ টিকা কার্যক্রম চলবে সারা দেশে।
মহামারি অবসানের আশা জাগিয়ে ২০২১ সাল শুরু হয়েছিল করোনাভাইরাসের টিকার সুখবর নিয়ে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই টিকার সুরক্ষা দুর্বল হয়ে পড়ছে। তাই করোনাভাইরাসের টিকার তৃতীয় ডোজ দিতে হবে কি-না, এ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই বিশ্বব্যাপী আলোচনা চলে আসছিল। সময়ের সাথে সাথে করোনার টিকার সুরক্ষা সক্ষমতা কমে আসায় উন্নত দেশগুলো আগেই বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু করেছে। কয়েক সপ্তাহ আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশেও বুস্টার ডোজ দেয়ার পরামর্শ দেয় কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরী পরামর্শক কমিটি। এরই মধ্যে শতাধিক দেশে করোনাভাইরাসের এ নতুন ধরন ছড়িয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশেও দুজনের মধ্যে এ ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ধরা পড়ার খবর এসেছে গত সপ্তাহে। গবেষকরা বলছেন, দুই ডোজ টিকা ওমিক্রনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে না, সেজন্যই বুস্টার প্রয়োজন। আর তাই বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও শুরু হলো করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার বুস্টার ডোজ। এ ধাপও শুরু হলো দেশে প্রথম কোভিড-১৯ টিকা নেয়া কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে দিয়ে। চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান শুরু হয়েছিল। দশ মাস পর রুনু ভেরোনিকা কস্তাই প্রথম দেশে বুস্টার ডোজ পেলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল মহাখালীর বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএসএ) মিলনায়তনে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এরপর উৎসবমুখর পরিবেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, ন্যাশনাল প্রফেসর ডা. শাহলা খাতুন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলমও এদিন তৃতীয় ডোজ নিয়েছেন। এছাড়া পুলিশ সদস্য সুলতান, সাংবাদিক ডলার মাহমুদ, আল মারকাজুল ইসলামীর কর্মকর্তা আমির হামজা, নার্সিং সুপারভাইজার খাদিজা বেগম, বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার আশিফুলসহ কয়েকজনকে বুস্টার ডোজ দেয়া হয়েছে। বুস্টার ডোজ নেয়া সবাই করোনা মোকাবিলায় সম্মুখসারির যোদ্ধা চিকিৎসক, নার্স, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও গণমাধ্যমকর্মী। সরকার থেকে বলা হয়েছে, পর্যায়ক্রমে বুস্টার ডোজের আওতা বাড়ানো হবে। শুরুতেই এ ডোজ দেয়া হবে যারা বেশি ঝুঁকিতে আছেন তাদের। অর্থাৎ বয়স্কদের। দেশে বুস্টার ডোজ হিসেবে ফাইজারের টিকা দেয়া হচ্ছে।
সূত্র মতে, বাংলাদেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় এবং চলতি বছরের জানুয়ারিতে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত শুক্রবার জানিয়েছেন, দেশের প্রায় সাত কোটি মানুষকে করোনাভাইরাসের প্রথম ডোজ এবং প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষকে দুই ডোজ করে টিকা দেয়া হয়েছে। আর প্রায় পাঁচ কোটি টিকা এ মুহূর্তে সরকারের হাতে আছে।
বুস্টার ডোজ কার্যক্রমের উদ্বোধনীতে জানানো হয়, যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি এবং যারা করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের সারিতে আছেন, তাদের করোনাভাইরাসের টিকার বুস্টার ডোজ দেয়া হবে। টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার ছয় মাস হয়েছে যাদের তারা বুস্টার ডোজ বা তৃতীয় ডোজ নিতে পারবেন। সেজন্য নতুন করে নিবন্ধনের প্রয়োজন হবে না। যারা তৃতীয় ডোজ পাওয়ার যোগ্য, তাদের কাছে এসএমএস চলে যাবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক অনুষ্ঠানে বলেন, আমরা অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সিনোফার্ম, মডার্নাসহ বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিন দিয়েছি, কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রোটোকল অনুযায়ী এক্ষেত্রে সবাইকে ফাইজারের টিকা দেয়া হবে। তিনি বলেন, বুস্টার ডোজ হিসেবে এখন ফাইজারের টিকা পাবেন সবাই। পরে মডার্নার টিকাও দেয়া হবে, যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন করে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কোভিড টিকার সুরক্ষা দুর্বল হয়ে আসায় কিছু দেশ বাড়তি আরেক ডোজ টিকা দিচ্ছে নাগরিকদের, যাকে বলা হচ্ছে বুস্টার ডোজ।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু হলো। পুরোদমে এ কার্যক্রম শুরু করতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। জাহিদ মালেক বলেন, বুস্টার ডোজের জন্য সরকারের সুরক্ষা ওয়েবসাইটে আরও কিছু কাজ করতে হবে। সেটা এখনো শেষ হয়নি। আইসিটি বিভাগ আমাকে জানিয়েছে, সুরক্ষা ওয়েবসাইট আপগ্রেড করতে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে। এর মধ্যে আমাদের প্রস্তুতি শেষ হয়ে যাবে। এরপর সারা দেশে শুরু হবে। তবে এ মুহূর্তে বুস্টার টিকা কার্যক্রম কার্ডের মাধ্যমে চলবে। একই সঙ্গে স্বাভাবিক টিকা কার্যক্রমও চলমান থাকবে। আর অ্যাপসের কাজ শেষ হলে এসএমসের মাধ্যমে যে যে কেন্দ্রে টিকা নিয়েছেন, সে কেন্দ্রেই বুস্টার যাতে নিতে পারেন সবাই, সেই কাজ চলছে। জাহিদ মালেকের দাবি, টিকার ফলে দেশ নিরাপদে আছে। মৃত্যুর সংখ্যা এক ডিজিটেই আছে। গত শনিবার এক-শতাংশের দিকে এসেছে, যা এত জনবহুল দেশে খুবই বিরল।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আমি কয়েকজন মন্ত্রীকেও আহ্বান জানিয়েছি বুস্টার ডোজ নেয়ার জন্য, তারা আছেন এখানে। তারাও টিকা নিয়েছেন। যাতে লোকে মনে না করে যে বুস্টার ডোজ বয়স্কদের, তো আপনারা কেউ এখনও দিলেন না। সে কথা যাতে কেউ না বলতে পারে, সেজন্য কয়েকজন মন্ত্রীও নিয়েছেন।
টিকা নেয়ার পর নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ আমি নিয়েছিলাম। বুস্টার ডোজ নেয়ার সুযোগও আমাকে দেয়া হয়েছে। এজন্য নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি, ভালো লাগছে। স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে সবাইকে অনুরোধ করব বুস্টার ডোজ নিয়ে নিন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
টিকাদান কার্যক্রম শেষে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী প্রথম দুই ডোজ একই টিকা নেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তৃতীয় ডোজ হিসেবে যে কোনো টিকা নেয়া যায়। দেশে ফাইজারের টিকা পর্যাপ্ত আছে, সবগুলো জেলায় এ টিকা পৌঁছে গেছে।
তিনি বলেন, দেশের ৬৪ জেলায় ফাইজারের টিকা চলে গেছে। আমরা এখন ফাইজারের টিকা দিচ্ছি, কারণ যাদের টিকা নেয়ার ৬ মাস হয়েছে, তারা সবাই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছিল। বুস্টার ডোজ হিসেবে ফাইজারের টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে টেকনিক্যালি কোনো বাধা নেই। এ কারণে ফাইজারের টিকা তৃতীয় ডোজ হিসেবে দেয়া হচ্ছে।
এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, আগে যে নিয়মে টিকা দেয়া হয়েছে, বুস্টার ডোজও সেভাবেই দেয়া হবে। প্রথমে বয়স্ক ও সম্মুখসারির যোদ্ধারা পাবেন, পর্যায়ক্রমে সবাইকে দেয়া হবে। যারা প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন, তারা এর মধ্যেই সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধিত। যাদের ছয় মাস হয়েছে, তাদের তৃতীয় ডোজ দেব। যারা বুস্টার ডোজ পাওয়ার যোগ্য, তারা কখন কোথায় টিকা পাবেন তা মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে।
এদিকে যারা ফাইজার ছাড়া অন্য টিকা নিয়েছে, তারা ফাইজারের বুস্টার ডোজ নিতে পারবে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. মুশতাক হোসেন বলেছেন, ফাইজারের বুস্টার ডোজ নিলে কোনো সমস্যা হবে না। বরং অন্য টিকা যারা নিয়েছে, ফাইজারের বুস্টার তাদের জন্য আরো ভালো কাজে দেবে।
যুক্তরাজ্যের গবেষণায় দেখা গেছে, ফাইজার ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেয়ার পর শরীরে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, ছয় মাসের মধ্যে তা দুর্বল হতে শুরু করে। আর সে জন্যই বুস্টার ডোজের পক্ষে সুপারিশ করছেন গবেষকরা।
গত আগস্টে ব্রিটেনের জো কোভিড স্টাডিতে দেখা যায়, ফাইজারের টিকার দুটি ডোজ করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ৮৮ শতাংশ ক্ষেত্রে সুরক্ষা দিলেও ৫ থেকে ৬ মাসের মধ্যে তা ৭৪ শতাংশে নেমে আসে। আর অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ক্ষেত্রে চার থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে কার্যকারিতা ৭৭ শতাংশ থেকে নেমে আসে ৬৭ শতাংশে। সা¤প্রতিক গবেষণাগুলোতে দেখা গেছে, টিকা নেওয়ার পর যাদের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, তাদের মধ্যে অনেক আগে টিকা পাওয়া ব্যক্তিদের সংখ্যা নতুন টিকা পাওয়া ব্যক্তিদের তুলনায় বেশি। একে টিকার প্রতিরোধ দুর্বল হয়ে আসার প্রমাণ বলে মনে করছেন গবেষকরা।
ব্রিটিশ এপিডেমিওলজিস্ট নেইল ফার্গুসন বলেছেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরে তৈরি হওয়া প্রতিরোধ ক্ষমতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমে আসে। আর এ কারণেই বুস্টার ডোজ এত গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি বলেছে, ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সি যাদের জনসন অ্যান্ড জনসনের কোভিড টিকা নেয়ার পর দুই মাস পার হয়ে গেছে, তারাই বুস্টার ডোজ নিতে পারবেন। আর ফাইজার বা মডার্নার টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার পর ছয় মাস পেরিয়ে গিয়ে থাকলে, তাদের মধ্যে যাদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি এবং প্রাপ্তবয়স্ক যাদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি অন্য কোনো স্বাস্থ্য জটিলতা বা দুরারোগ্য ব্যাধি রয়েছে, তারা নিতে পারবেন বুস্টার ডোজ।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি কার্যক্রম শুরু হয়েছিল অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড টিকা দিয়ে। যদিও এর আগে ২৭ এবং ২৮ জানুয়ারি পরীক্ষামূলকভাবে ৫৬৭ জনকে টিকা দেয়া হয়। এরপর চীনের সিনোফার্ম, যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার আর মডার্নার টিকাও দেয়া হয়েছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও সিনোফার্মের টিকা বাংলাদেশ কিনেছে, ফাইজার আর মডার্নার টিকার পুরোটাই পেয়েছে টিকার আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্সের আওতায়। দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় ২৮ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ৮৫ ভাগই ষাটোর্ধ্ব, তাদের সুরক্ষিত রাখতে হবে। এ জন্যই বুস্টার ডোজের তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।