Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

র‌্যাবের সাধারণ সদস্যদের ওপর এর কী প্রভাব পড়তে পারে

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত কীভাবে হয়-

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৬ এএম

বাংলাদেশের বিশেষ বাহিনী র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র‌্যাব এবং এর সাবেক ডিজি ও বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদসহ সাতজন কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেয়া হয়েছে। নানা আলোচনা চলছে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণ এবং প্রভাব নিয়ে। নিষেধাজ্ঞা কোন ধরনের-কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র এ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে এবং ব্যক্তির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান হিসাবে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে বাহিনীটির অন্য সদস্যদের ওপর কি কোন প্রভাব পড়বে- এসব প্রশ্ন নিয়েই চলছে এখন আলোচনা।

নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকে একতরফা বলে বর্ণনা করা হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে। কীভাবে এমন সিদ্ধান্ত এলো-এ প্রশ্ন তুলেছেন মন্ত্রীদের অনেকে। নিষেধাজ্ঞার খবরটি প্রকাশ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বা অর্থ দপ্তরের বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে।

নিষেধাজ্ঞা, যুক্তরাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নেয় যেভাবে : যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক জাভেদ ইকবাল মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা দেয়ার সিদ্ধান্তের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে আলোচনা বা কোন কৈফিয়ত দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ‘পদ্ধতি হচ্ছে, এটা পুরোপুরি স্টেট ডিপার্টমেন্ট (যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর) ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট বা রাজস্ব বিভাগ আর হোয়াইট হাউজের ওপর নির্ভর করে। এর জন্য কংগ্রেসে কোন বিল প্রয়োজন হয় না’, বলছেন জনাব ইকবাল।

তিনি আরো বলেন, ট্রেজারি বিভাগ নিষিদ্ধের তালিকা করে, সেখানে তালিকাভুক্তদের এসডিএন বলা হয়। ‘সেটা কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং জাহাজের মতো প্রাণহীন জড়ো বস্তুও হতে পারে। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে যখন এসডিএন ঘোষণা করে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের কোন নাগরিক এবং কোন আর্থিক বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, তালিকাভুক্ত ঐ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে টাকা পয়সা লেনদেন করতে পারবে না’।

কোন দেশের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ক্ষেত্রে কংগ্রেসে যদিও কোন আলোচনার প্রয়োজন নেই কিন্তু এর পেছনে অভিযোগ যা আনা হচ্ছে, তার সমর্থনে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করতে হয়। অনেক সময় অভিযোগও প্রকাশ করা হয় না বলে বিশ্লেষকরা বলছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কমিশনার ছিলেন ডেমোক্র্যাট রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ড. নীনা আহমেদ। তিনি বলেছেন, র‌্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা হয়তো পাওয়া গেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়া, চীন বা মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশকে এক কাতারে ফেলা হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। ‘র‌্যাবের সমস্যাগুলো তুলে ধরে একইভাবে চায়না, উত্তর কোরিয়া বা মিয়ানমারের সাথে (বাংলাদেশকে) দেখানো হলো- এটা আমার কাছে খারাপ লেগেছে’।
তিনি বলছেন: ‘হিউম্যান রাইটস ভায়োলেশনের অভিযোগ এলে, সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট বিভাগ মূল্যায়ন করে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছ থেকে তথ্য প্রমাণ নেয়া হয়। ড. নীনা আহমেদ বলেন, ‘এর ভিত্তিতে মানবাধিকার কমিশন যে রিপোর্ট দেয়, সেই রিপোর্ট পর্যালোচনা করে তারপর সিদ্ধান্তটা আসে’। তিনি এসব বিষয়কে প্রশাসনিক প্রক্রিয়া হিসাবে উল্লেখ করেন।

র‌্যাব ২০০৪ সালে গঠিত হওয়ার পর থেকে এই বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার অনেক অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিভিন্ন সময় কঠোর সমালোচনাও করেছে। এখন নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ এনেছে। আর এসব ঘটনায় বিরোধীদলের সদস্য, সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীরা টার্গেট ছিলেন বলে বলা হয়েছে।

টেকনাফে ২০১৮ সালে মাদক বিরোধী অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সেখানকার পৌর কাউন্সিলর এবং স্থানীয় যুবলীগ নেতা একরামুল হকের নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে সে সময় রেকর্ড করা একটি টেলিফোন অডিও প্রকাশ হওয়ার পর তা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে এ ঘটনাকে অন্যতম কারণ হিসাবে তুলে ধরেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর।

নিষেধাজ্ঞা কীভাবে কার্যকর করা হয় : এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করা হয় কীভাবে -এই প্রশ্নেও এখন অনেক আলোচনা চলছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক জাভেদ ইকবালের মতে, প্রতিষ্ঠানের নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে এবং তার মিত্র পশ্চিমা দেশগুলোতে র‌্যাবের অস্ত্র বা সরঞ্জাম কেনাকাটায় বা অর্থিক লেনদেনের ওপর কঠোর নজরদারি থাকবে। ‘র‌্যাব যদি আমেরিকার কোন প্রতিষ্ঠান থেকে অস্ত্র কিনতে চায় অথবা আমেরিকায় কোন ট্রেনিংয়ে আসতে চায়, সেটা আর পারবে না। আমেরিকার যেসব মিত্র দেশ আছে, আস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা এবং যুক্তরাজ্য- এসব দেশ এখন থেকে র‌্যাবকে খুব নজরদারিতে রাখবে। এটা হচ্ছে প্র্যাকটিক্যাল আসপেক্ট (বাস্তব দিক)’, বলেন জাভেদ ইকবাল।

র‌্যাবের অস্ত্র সরঞ্জাম কেনার নীতি কী হবে : র‌্যাবের অস্ত্র বা সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে এ বাহিনী এবং সরকারের নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসবে কিনা-সেটা এখনই বলা মুশকিল। র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছেন, বিরূপ কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে তখন সরকার করণীয় ঠিক করবে বলে তারা মনে করেন। তিনি বলছেন, সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে তারা অস্ত্র ও সরঞ্জাম কিনে থাকেন, সেখানে সুনির্দিষ্ট কোনো দেশ থেকে কেনার বিষয় নেই।

‘আমরা এখনও আশা করি, সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন ভাল দেশ থেকে নিশ্চয়ই গোয়েন্দা সরঞ্জামাদি ক্রয় করতে আমরা সক্ষম হবো। কারণ এখন পর্যন্ত কোন সমস্যার মুখোমুখি আমরা হইনি। ভবিষ্যতে মুখোমুখি হলে তখন সরকার করণীয় ঠিক করবে’, বলেন র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

র‌্যাবের সাধারণ সদস্যদের ওপর কেমন প্রভাব পড়বে : র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এবং বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদসহ সাতজন কর্মকর্তা যাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তি হিসাবে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী, তারাও যুক্তরাষ্ট্রের কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে আর্থিক লেনদেন করতে পারবেন না এবং তাদের সেখানে সম্পদ থাকলে তা বাজেয়াপ্ত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা তারা পাবেন না। বাহিনী হিসাবেও র‌্যাব নানা সমস্যার মুখে পড়বে।

কিন্তু র‌্যাবের অন্য কর্মকর্তা বা সদস্যদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে বিশ্লেষকরা বলছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রীয়াজ মনে করেন, র‌্যাবের অন্য সদস্যরা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।

‘সুনির্দিষ্টভাবে যারা চিহ্নিত হয়েছেন, এটা তাদের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে কার্যকর হবে। কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, তাদের পরিবারের ওপর সেটা প্রয়োগ হয়। এটা এক ধরনের অস্পষ্টতা আইনে আছে’।
তবে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান হিসাবে র‌্যাবের ক্ষেত্রে যে হাজার হাজার কর্মকর্তা বা সদস্য আছেন, তাদের ক্ষেত্রে এর কোন প্রত্যক্ষ এবং আশু কোন রকম প্রতিক্রিয়া নেই। তারা আসলে এ নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন না।

‘কিন্তু এখানে যে অস্পষ্টতা থেকে যায় সেটা হচ্ছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা বা ভ্রমণে যেতে পারবেন কিনা। যদি এ ধরনের স্যাঙ্কশন এনটিটি থাকে, তার সাথে যুক্তদের ভিসা পেতে অনিশ্চয়তা থাকে। পরে কেউ যদি এই প্রতিষ্ঠানে না থাকেন, তাহলে কি তারা ভিসা পেতে পারেন? - হ্যাঁ পেতে পারেন। এসব নিয়ে আইনে অস্পষ্টতা রয়েছে’, বলেন অধ্যাপক রীয়াজ। তিনি উল্লেখ করেন, আইনে এটা স্পষ্ট, যেসব কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে, তাদের ওপরই আসলে এর প্রত্যক্ষ প্রতিক্রিয়া পড়বে।

‘হঠাৎ করেই নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত আসেনি’ : যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার নানা ধরন আছে বলে বিশ্লেষকরা বলছেন। তাদের মতে, কখনও কখনও কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এবং দেশকে শাস্তি দিতে নিষেধাজ্ঞা আসে। আবার কখনও সতর্ক করতে এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়। কিন্তু র‌্যাবের বিরুদ্ধে এখন কেন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলো- বাংলাদেশ সরকারের অনেকে এই প্রশ্ন তুলেছেন। নিরাপত্তা বিশ্লেষক জাভেদ ইকবাল মনে করেন, হঠাৎ করেই এমন সিদ্ধান্ত আসেনি। তিনি কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, ‘রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট সেনেটরদের একটা দল ট্রাম্প সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীর কাছে একটা চিঠি দিয়েছিল। তাতে তারা র‌্যাবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছিল। আর এ বছরের আগস্টে কংগ্রেসে র‌্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে শুনানি হয়েছে। তাতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং বাংলাদেশের কিছু ব্যক্তি জবানবন্দি দিয়েছিলেন’।

জাভেদ ইকবাল বলছেন, ‘এ দু’টো ঘটনা এবং নিষেধাজ্ঞার মধ্যে যদি সরলরেখা টানি, তাহলে এই ঘটনাগুলো একটার সাথে আরেকটা সম্পর্কিত, যার পরিণতি এই নিষেধাজ্ঞা’।
‘ভারত কেন্দ্রিক নীতি থেকে সরছে যুক্তরাষ্ট্র’ : বিষয়টাকে কিছুটা ভিন্নভাবে দেখেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ভারতকেন্দ্রিক নীতি থেকে সরে আসছে। এটিও এই নিষেধাজ্ঞার অন্যতম একটি কারণ বলে তিনি মনে করেন। ‘তিনটি বিষয় আসলে মনে হচ্ছে, এর একটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এবং তার যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে আছে। দ্বিতীয়ত যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের ওপর চাপও আছে। কারণ গত বছর দশজন সেনেটর র‌্যাবের বিরুদ্ধে চিঠি লিখেছিলেন’, বলছেন অধ্যাপক রীয়াজ। ‘তৃতীয় বিষয় হচ্ছে ভূরাজনৈতিক। যুক্তরাষ্ট্র আসলে দক্ষিণ এশিয়ায় তার নীতির একটা পরিবর্তন ঘটাচ্ছে বলে দেখা যাচ্ছে। এতদিন পর্যন্ত যে ভারত কেন্দ্রিক নীতি ছিল এবং সেক্ষেত্রে চীনের যে আগ্রাসী প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা, সেটা ভারত মোকাবেলা করতে পারছে বলে যুক্তরাষ্ট্র এখন মনে করছে না’।

অধ্যাপক রীয়াজের ধারণা: ‘যুক্তরাষ্ট্র এখন তা নিজেই মোকাবেলা করতে চায়। ফলে যেহেতু বাংলাদেশের ভ‚রাজনৈতিক গুরুত্ব বেড়েছে এবং চীনের সাথে তার ঘনিষ্টতা তৈরি হচ্ছে, এগুলো আসলে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে’।

বাংলাদেশ সমাধান খুঁজছে কোন পথে : বাংলাদেশ সরকার এ নিষেধাজ্ঞায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদও জানিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এখনও মনে করছে, আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিবর্তন সম্ভব হতে পারে।

নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কয়েকদিন পরই বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনের আগ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনকে টেলিফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। জনাব মোমেন বলেছেন, এ টেলিফোন আলাপে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রশ্নেই মূল কথা হয়েছে।

‘এ ফোনকলের মূল বিষয়ই ছিল নিষেধাজ্ঞা নিয়ে। উনাকে (যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী) বললাম যে, আপনারা এমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এটা আমাদের দেশবাসী গ্রহণ করে নাই। ‘বিশেষ করে গ্রহণ করে নাই এজন্যে যে, আপনাদের সাথে আমাদের ৫০ বছরের সম্পর্ক খুবই বিশ্বাসের বন্ধুত্ব। সেজন্য আমাদের প্রত্যাশা ছিল, আপনারা কোন সিদ্ধান্ত নিলে আমাদের আগেভাগে জানাবেন। এ ব্যাপারটা আমরা পছন্দ করি নাই’, বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব মোমেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে টেলিফোন আলাপের ব্যাপারে জনাব মোমেন আরো বলেন, ‘সেইসাথে বললাম আপনারা গ্লোবালি সন্ত্রাস দমনের আন্দোলন শুরু করেছেন। সেই টার্গেটে র‌্যাব অত্যন্ত যোগ্যতার সাথে বাংলাদেশে কাজ করছে। এরকম একটা প্রতিষ্ঠানকে আপনারা নিষেধাজ্ঞা দিলেন যা দেশবাসী পছন্দ করে নাই’।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান: ‘উনি (যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী) বললেন যে, এ নিয়ে আমরা আলোচনা করবো’। জনাব মোমেন বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কবে সে প্রসঙ্গে কথা বলবেন সেটা আমি জানতে চাইনি। উনিও বলেননি। উনি বলেছেন, আমরা আলোচনা করবো। আমাদের দরজা খোলা। আমরা একাধিকবার আলোচনা করবো’।

যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের পরিবর্তন কি সম্ভব : বিশ্লেষকরাও মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিবর্তন করা সম্ভব। তবে নিষেধাজ্ঞার পেছনে যেসব কারণ দেখানো হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে- বলেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। ‘পরিবর্তনের সুযোগ অবশ্যই থাকে, যদি এখন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নেয়া হয়। যেসব অভিযোগ এসেছে, সেগুলোর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া এবং প্রতিষ্ঠান হিসাবে র‌্যাবের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাসহ কাঠামোগত পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। বিষয়গুলোতে পদক্ষেপ নিতে হবে, শুধু আলোচনা করলে হবে না’, বলেন জনাব রীয়াজ।

কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, র‌্যাবকে নিয়ে যেসব অভিযোগ বা কারণ যুক্তরাষ্ট্র বলছে-তা তথ্যভিত্তিক নয়। র‌্যাবও বরাবরের মতো এখনও, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করছে। ফলে র‌্যাবকে নিয়ে বাংলাদেশ সরকার কোন পরিবর্তন বা ব্যবস্থা নেয়ার কথা যে এখনও ভাবছে না-এটা বলা যায়। সূত্র : বিবিসি বাংলা।



 

Show all comments
  • Engr Rashed Hasan ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৪৪ এএম says : 0
    যুক্তরাষ্ট্র কি ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য বাংলাদেশের বিশেষ বাহিনীর উপর নিষেধাজ্ঞা দিলো।যেমনটা করেছে মরক্ক ও সুদানের ক্ষেত্রে।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Alamin Khan ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৪৫ এএম says : 0
    বাংলাদেশ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রাঙ্গণ একটু শক্ত অবস্থান থাকলেই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দিগ্ন বেড়ে যায় জঙ্গিমুক্ত দেশ গড়তে সরকারের জিরো টলারেন্স রেখেছে তা আমরা সমর্থন করি কিন্তু সাধারণ মানুষ যারা দাড়ি রাখে পাঞ্জাবি পরে তাদের ওপর জঙ্গি বলে আখ্যা এত করা এটা মোটেও বাঞ্ছনীয় নয়
    Total Reply(0) Reply
  • Zahid Hossen ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৪৫ এএম says : 0
    উইঘরে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় না,ইসরাইলে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়না,কাশ্মিরে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় না, এগুলো চোখে পড়ে না
    Total Reply(0) Reply
  • Imran Khan S ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৪৫ এএম says : 0
    বাংলাদেশে চলতেছে বর্তমানে স্বৈরশাসন, মানুষ এর থেকে মুক্তি চায়
    Total Reply(0) Reply
  • Md Habibur Rahman ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৪৫ এএম says : 0
    কিছুই হবেনা! কারণ এর চেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা আমরা আমেরিকাতে দেখেছি। এগুলো উদ্দেশ্যে প্রনোদিত।
    Total Reply(0) Reply
  • Farid Ahmed Farid ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৪৬ এএম says : 0
    সরকারের প্ররোচনায় বিরোধী দল ও মতের অসংক্ষ মানুষকে এই বাহীনি গোম ও খুন করেছে। তাই দেরিতে হলেও আমেরিকা এদের বিরোদ্দে ব্যবস্থা নেওয়ায় বাংলার জনগন তাদের প্রতি কৃতঙঘ।
    Total Reply(0) Reply
  • Nayem Islam ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৪৬ এএম says : 0
    কয়েকদিন আগে রুমিন ফারহানা চমৎকার একটা কথা বলেছিলেন। আমাদের সরকার রূপসী নারীর মতো, শুধু প্রশংসা শুনতে চায়, যুক্তরাষ্ট্রের কোন সংস্থা যখন কোন পুরস্কারে ভূষিত করে তখন বলে তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিন্তু যখন নেতিবাচক কিছু হবে তখন বলবে এটা চক্রান্ত, বিরোধী দলের কারসাজি, লবিস্ট নিয়োগ করে করেছে।আমাদের উন্নয়ন দেখে ওদের সহ্য হচ্ছে না ইত্যাদি।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Yakub Mahmud ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৪৬ এএম says : 0
    আচ্ছা,,মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এতো মাথা বেথার কি আছে। আমাদের দেশে প্রশাসন মার্কিনিদের টা খায় না পড়ে? এটা আরো ভালো হয়েছে। আমার মনে আমাদের দেশের প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ও মন্ত্রী এমপি রা যদি বাইরের কোন দেশে স্থায়ী ভাবে বসবাসে সুযোগ না পেত। তাহলে তাদের কাজের জবাবদিহিতার ব্যাবস্থা থাকতো। আর তাদের কাজ থেকে দূর্নীতি মুক্ত সেবা পেত।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ