Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেড় যুগ পর বরগুনা জেলা যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন

পোস্টার, ব্যানার আর বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে বরগুনা

বরগুনা জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৯:০৭ এএম

প্রায় দেড় যুগ পূর্বে বরগুনা জেলা যুবলীগের 'ত্রি-বার্ষিক' সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দীর্ঘ ১৭ বছর পর সম্মেলনের তারিখ ঘোষিত হয় দৌড়ঝাঁপ বেড়ে গেছে পদ প্রত্যাশীদের। জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ লাভের জন্য বেশ কিছু নেতাকর্মী বিভিন্ন সাইজের পোস্টার, ব্যানার ও বিলবোর্ড বরগুনা জেলা শহরের অলিগলিসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দখল করে নিয়েছে।

সর্বশেষ ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত বরগুনা জেলা যুবলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে এডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ সভাপতি ও সাহাবুদ্দিন সাবু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। দীর্ঘ ১৭ বছর পর সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হওয়ায় নেতা-কর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ২১ ডিসেম্বর ঐতিহ্যবাহী টাউন হল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বরগুনা জেলা আওয়ামী যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। যুবলীগের এসম্মেলনকে ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। ইতোমধ্যেই যুবলীগের সম্মেলন প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণে বরগুনা সফর করছেন একাধিক জাতীয় নেতৃবৃন্দ। একাধিক বৈঠক করেছে জেলা যুবলীগ নেতৃবৃন্দ। সভাপতি সাধারণ সম্পাদক সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদপ্রত্যাশী নেতারা শুরু করেছেন লবিং-তদবির। বরগুনা জেলা শহর ছাড়িয়ে উপজেলা শহরগুলোতেও তারা টানিয়েছেন নানা রঙের পোস্টার ব্যানার বিলবোর্ড ও ফেস্টুন।

জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য অঙ্গ সংগঠন সূত্রে জানা যায়, ১১ সেপ্টেম্বর বরগুনার বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সে জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২৩ অক্টোবর কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ২৬ থেকে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে জেলা যুবলীগে পদপ্রত্যাশীদের কাছে জীবনবৃত্তান্ত চাওয়া হয়। চার দিনে কেন্দ্রে ২৪০ জন জীবনবৃত্তান্ত জমা দেন। এরপর ১ ডিসেম্বর বরগুনা জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের কাছে আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল স্বাক্ষরিত চিঠিতে ২১ ডিসেম্বর সম্মেলনের তারিখ জানানো হয় এবং এ উপলক্ষে সার্বিক প্রস্তুতি নিতে বলা হয়। সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পরই শীর্ষ দুই পদের জন্য নেতারা নড়েচড়ে বসেন। শুরু করেন কেন্দ্রে লবিং, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার-প্রচারণা ও শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পোস্টার, ব্যানার, বিলবোর্ড, ফেস্টুন টানাতে শুরু করেন।

জেলা যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, এবার কমিটির শীর্ষ দুই পদপ্রত্যাশীর অনেকেই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। এদের মধ্যে রয়েছেন সভাপতি পদপ্রত্যাশী বর্তমান জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাহাবুদ্দিন সাবু, সহসভাপতি রেজাউল করিম এ্যাটম ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ।

যুবনেতা সাহাব উদ্দিন সাবু ছাত্রজীবনে স্কুল, কলেজ ও জেলা ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০৫ সালে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে অদ্যোবধি সেই পদে বহাল রয়েছেন। যুবলীগের আসন্ন সম্মেলনে সাহাব উদ্দিন সাবু সভাপতি পদের জন্য প্রচার প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন।

২০০৪ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন একসময় এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা আবুল কালাম আজাদ।
সালে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন আবুল কালাম আজাদ। যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ১৭ বছরেও না হওয়ায় ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মীর মত আবুল কালাম আজাদও অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হওয়ার পরই জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সাবেক সাধারন সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন এবং সভাপতির পদ প্রত্যাশা করে প্রচার প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন।

যুবনেতা রেজাউল করিম এ্যাটম ২০০৫ সালের বরগুনা জেলা যুবলীগের কমিটিতে সহসভাপতি নির্বাচিত হয়ে অদ্যোবধি এই পদেই রয়েছেন। মাঝখানে দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্ত সভাপতিরও দায়িত্ব পালন করেছেন। আগামী সম্মেলনের সভাপতি পদের জন্য তিনিও প্রচার প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন।

সভাপতি পদপ্রত্যাশী জেলা যুবলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন সাবু ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত। রাজনীতির বাইরে তার কোন পেশার নেই। রাজনীতি করতে গিয়ে তিনি একাধিকবার মামলা হামলার শিকার হয়েছেন। খেটেছেন জেল। শিকার হয়েছেন ওয়ান ইলেভেনের সেনাশাসকের অমানসিক নির্যাতনের।
যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন সাবু বলেন, 'রাজনীতি আমার একমাত্র পেশা। দীর্ঘদিন রাজনীতি করতে গিয়ে মামলা-হামলা জেল-জুলুম নির্যাতন সহ্য করেছি। আমার গোটা পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। যুবলীগের সভাপতি দায়িত্ব পেলে জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাব।'

তিনি আরও বলেন, ‘যুবলীগ আমার প্রাণের সংগঠন। আমি যেভাবে গত দিনগুলোয় নেতৃত্ব দিয়েছি, আশা করি নতুন কমিটিতে যুবলীগ আমাকে মূল্যায়ন করবে।’

জেলা যুবলীগে সভাপতি পদের আরেক প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ছাত্রলীগের রাজনীতি শেষে যুব রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখার অপেক্ষায় দীর্ঘ ১৭ বছর কেটেছে। সম্মেলনে আমি যোগ্য পদ পাব বলে আশা রাখি।’

রেজাউল করিম এ্যাটম বলেন, ‘আমি দায়িত্ব চাই। পদ পেলে ঝিমিয়ে পড়া জেলা যুবলীগকে একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাব।’

জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন জেলা যুবলীগের সাবেক ছাত্রনেতা মাহমুদুল আজাদ রিপন, বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সরিষামুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমাম হাসান শিপন, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ হোসেন মোল্লা, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জুনাইদ জুয়েল, সাবেক ছাত্রনেতা শাওন তালুকদার, মাহমুদুল বারী রনি, রানা তালুকদার, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইমরান হোসাইন রাসেল, সাধারণ সম্পাদক আকতারুজ্জামান রকিব, জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি যুবায়ের আদনান অনিকসহ আরও অনেকে।

জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সাবেক তুখোড় ছাত্রনেতা এডভোকেট জুনাইদ জুয়েল বলেন, ‘ক্ষমতা নয়, দায়িত্ব নিতে চাই। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ দায়িত্ব দিলে জাতির জনক শেখ মুজিবের আদর্শ বাস্তবায়ন করে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করে যাব।’

জেলা যুবলীগের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক ও আসন্ন সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী আরিফ হোসেন মোল্লা বলেন, 'স্কুল জীবন থেকেই আওয়ামী রাজনীতির সাথে আমি সম্পৃক্ত। রাজনীতি করতে গিয়ে ১১ বার জেল খাটতে হয়েছে। আমার আপন চার ভাই আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত এবং তারা বিভিন্ন পদে রয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি দল আমাকে যথাযথ মূল্যায়ন করবে।'

জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ও ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিক বলেন, ‘দীর্ঘ বছর নেতৃত্বে থেকে ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করেছি। এখন যুব রাজীনিততে নিজেকে যুক্ত করে এ ধারা অব্যাহত রাখতে কাজ করে যেতে চাই।’

সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আকতারুজ্জামান রকিব বলেন, ‘চার বছর জেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছিলাম। এরপর দলীয় প্রত্যেকটি কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সক্রিয় থেকে রাজনীতিতে যুক্ত আছি। দায়িত্ব পেলে যুবলীগকে জেলায় আরও সংগঠিত করব।’

সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে ইমরান হোসেন রাসেল জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লার মেয়ে বিয়ে করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন।

সাবেক ছাত্রনেতা শাওন তালুকদার বলেন, ‘২০১০ সালে জেলা ছাত্রলীগের তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করার পর ওই কমিটি দিয়ে পাঁচ বছর চলে গেছে। ওই সময় আমরা পদবঞ্চিত হয়েও হাল ছাড়িনি। দলের জন্য নিরন্তর কাজ করে আসছি।’

জেলা আওয়ামী যুবলীগের বর্তমান সভাপতি ও পৌর মেয়র এডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ ও পরামর্শে আওয়ামী যুবলীগের বরগুনা জেলা শাখার সম্মেলন ঘিরে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। যুবলীগ আমার প্রাণের সংগঠন। আমি দীর্ঘ বছর এই সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছি। আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে আছে যুবলীগ। আমি চাই এই সংগঠনে যারা নেতৃত্বে আসবেন, তারাও একইভাবে সংগঠনকে ভালোবেসে এর সুনাম অক্ষুণ্ন রেখে দেশ ও জাতির স্বার্থে রাজনীতি করবেন। ’

যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘যুবলীগ একটি আদর্শিক সংগঠন। এখানে লবিং বা তদবির কোনো কাজে আসে না। যোগ্যতার ভিত্তিতেই নেতা নির্বাচিত করা হবে। হাইব্রিড ও বিতর্কিতদের এই দল করার কোনো সুযোগ নেই। ত্যাগী, যোগ্য ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তিসম্পন্ন নেতৃত্বই আমাদের কাছে প্রাধান্য পাবে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ