Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সূরা মুলক : আমল ও ফজিলত-১

মাওলানা মুহাম্মাদ ফজলুল বারী | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৫ এএম

সূরা মুলক কুরআনে কারীমের ঊনত্রিশ নম্বর পারার প্রথম সূরা। সূরার ক্রম অনুসারে এটি কুরআনের সাতষট্টি নম্বর সূরা। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি সূরা এটি। আল্লাহ তাআলার রাজত্ব-কতৃর্ত্ব ও মহত্তে্বর বর্ণনার মাধ্যমে শুরু হয়েছে এ সূরা। আসমান ও গ্রহ-নক্ষত্রের সৃষ্টি-কুশলতা ও নিপুণতা উল্লেখের মাধ্যমে তাঁর কুদরতের কথা আলোচনা করা হয়েছে।

জন্ম-মৃত্যু সৃষ্টির উদ্দেশ্য বর্ণনার মাধ্যমে মানুষের জীবনের লক্ষ্য তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহকে ভয় করে যে বান্দা সিরাতে মুসতাকীমের ওপর অটল-অবিচল থাকবে এবং জীবন-পরীক্ষায় কৃতকার্য হবে তার জন্য ঘোষণা করা হয়েছে মহা পুরস্কারের। সাথে সাথে জীবন চলার পথে মানুষ যদি লক্ষচ্যুত হয়; আল্লাহর নাফরমানির পথ অবলম্বন করে তাহলে তার জন্য কী ভয়াবহ পরিণাম অপেক্ষা করছে তা বিবৃত হয়েছে। আর পথভ্রষ্ট বান্দা তার পরিণাম প্রত্যক্ষ করে আখেরাতে কী ভাষা ও বাক্যে আফসোস-আক্ষেপ করবে তা-ও তুলে ধরা হয়েছে মর্মস্পর্শী উপস্থাপনায়।

স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে দুনিয়াতে আল্লাহর দেয়া সুযোগ ও ছাড়ের কথা। পরিশেষে তাঁর বিভিন্ন নিয়ামতের কথা উল্লেখ করে মানুষের আল্লাহ-মুখাপেক্ষিতা ও অসহায়ত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে আল্লাহর শোকর আদায় ও আখেরাতের প্রস্তুতির প্রতি। এসব কারণে সূরা মুলক মুমিনের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ এক পাথেয়।

সাথে সাথে সূরা মুলকের অনেক ফজিলতও বর্ণিত হয়েছে হাদীস শরীফে। নবীজী (সা.) অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে এ সূরা তিলাওয়াত করতেন। এমনকি এ সূরা তিলাওয়াত না করে রাতে ঘুমাতে যেতেন না। এ সূরা তার আমলকারীর জন্য সুপারিশ করবে। কবরের আযাব থেকে প্রতিবন্ধক হবে। আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাত লাভের মাধ্যম হবে।

এ সূরা আমলকারীর জন্য সুপারিশ করবে : আল্লাহ তাআলার নিজ কালাম যদি তাঁর কাছে কারো মাগফিরাতের জন্য সুপারিশ করে তাহলে আশা করা যায়, আল্লাহ সে সুপারিশ গ্রহণ করবেন এবং বান্দাকে ক্ষমা করবেন। সূরা মুলক এমনই একটি সূরা, যা আমলকারীর জন্য মাগফিরাতের সুপারিশ করবে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী (সা.) ইরশাদ করেন : কুরআনে ত্রিশ আয়াতবিশিষ্ট একটি সূরা রয়েছে, যা এক ব্যক্তির জন্য মাগফিরাতের সুপারিশ করেছে ফলে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। তা হলো, সূরা তাবারাকাল্লাযী... অর্থাৎ সূরা মুলক। (জামে তিরমিযী : ২৮৯১; সুনানে আবু দাউদ : ১৪০০)।

বর্ণনাটি মুসতাদরাকে হাকেমে এসেছে এ ভাষায় : আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহর কিতাবে ত্রিশ আয়াতবিশিষ্ট একটি সূরা রয়েছে (অর্থাৎ সূরা মুলক), যা এক ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করে তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে জান্নাতে দাখেল করেছে। (মুসতাদরাকে হাকেম : ৩৮৩৮)।

এ সূরা আমলকারীর পক্ষে ওকালতি করে জান্নাতে প্রবেশ করাবে : কেবল সাধারণ সুপারিশ নয়; বরং এ সূরা তার আমলকারীর পক্ষে ওকালতি করবে। আমলকারীকে জান্নাতে না নেয়া পর্যন্ত তার পক্ষে লড়তে থাকবে। আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : কুরআনে ত্রিশ আয়াতবিশিষ্ট একটি সূরা রয়েছে, যা তার আমলকারীকে জান্নাতে প্রবেশ করানো পর্যন্ত তার পক্ষে ওকালতি করেছে, তার পক্ষে লড়েছে। তা হলো, সূরা তাবারাকা (সূরা মুলক)। (আলমুজামুল আওসাত, তবারানী : ৩৬৫৪)। সুতরাং যে ব্যক্তি এ সূরা তিলাওয়াত করবে, এর নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করবে আশা করা যায় সে এর সুপারিশ লাভ করবে এবং ক্ষমা ও জান্নাত লাভে ধন্য হবে।



 

Show all comments
  • মোঃ রহমান ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ৫:৩৩ এএম says : 0
    জানতে চাচ্ছিলাম এই সুরা কি বিশেষ করে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বা জুমার আগের পরে বা কখন পড়তে হয়?
    Total Reply(0) Reply
  • মনির হোসেন মনির ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:১৭ এএম says : 0
    মানুষকে গোনাহমুক্ত জীবন দানের জন্য কুরআন সুন্নায় অনেক আমলের বর্ণনা দিয়েছেন বিশ্বনবি। লক্ষ্য একটাই যাতে মানুষ গোনাহমুক্ত জীবন লাভ করতে পারে। এটিও তার একটি।
    Total Reply(0) Reply
  • মিফতাহুল জান্নাত ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:১৮ এএম says : 0
    সুরা মুলক রাতের বেলা পড়া উত্তম, তবে অন্য যেকোনো সময়ও পড়া যাবে। সুরাটি অর্থ বুঝে নিয়মিত পড়ায় রয়েছে অনন্য তাৎপর্য।
    Total Reply(0) Reply
  • Krishno Sutradhar ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:১৮ এএম says : 0
    এই সুরা নামাজের সঙ্গে পড়াও উত্তম। মুখস্ত না থাকলে দেখে দেখে অর্থ বুঝে পড়লে বিশেষ সাওয়াব পাওয়া যায়।
    Total Reply(0) Reply
  • হুসাইন আহমেদ হেলাল ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:১৯ এএম says : 0
    আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুরা মুলকের আমল নিয়মিত করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত ফজিলত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • জনিরুল ইসলাম ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:১৯ এএম says : 0
    রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত সুরা মুলক তেলাওয়াতের আমল করবে সে কবরের আজাব থেকে মুক্তি পাবে।’ (তিরমিজি, মুসতাদরাকে হাকেম)
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Lokman ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:০৪ পিএম says : 0
    THIS SURA READ AFTER ISAA NAMZ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সূরা মুলক

১৮ ডিসেম্বর, ২০২১
আরও পড়ুন