Inqilab Logo

শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে : এডিবি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে ৫০ বছর পূর্তির এক দিন আগে সুসংবাদ দিল ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উন্নতি হচ্ছে। মহামারি করোনার ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশটির অর্থনীতি। করোনার ধকল অনেকটা কাটিয়ে উঠে আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বেড়েছে তৈরি পোশাকের চাহিদা। যে কারণে বাংলাদেশের আমদানি ও রফতানি দুটোই আগের তুলনায় বেশ বেড়েছে। আমদানির উল্লম্ফনে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। তবে দেশটির রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য অনেক মূলধনি যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারি) ও কাঁচামাল আমদানি হচ্ছে। এর ফলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বেড়ে তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) বাড়াতে সহায়তা করবে।
গত বুধবার প্রকাশিত এডিবির এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকের (এডিও) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এশিয়ার বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার সর্বশেষ পরিস্থিতি বিশ্নেষণ করে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে এডিবি। এতে আমদানি, রফতানি, বিনিয়োগসহ বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে বেশ কিছু উন্নতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এডিবি প্রতি বছর এপ্রিলে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক প্রকাশ করা হয়ে থাকে। পরে বিশ্ব অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে তিনটি আপডেট রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। একটি করা হয় জুলাইয়ে। পরেরটা প্রকাশ করা হয় সেপ্টেম্বরে। আর সর্বশেষটা প্রকাশ করা হয় ডিসেম্বরে। ডিসেম্বরের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে বুধবার। পরের তিনটি প্রতিবেদনকে সম্পূরক প্রতিবেদন বলা হয়ে থাকে।
বিনিয়োগসহ অর্থনীতিতে ইতিবাচক নানা কিছু থাকার কারণে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও বাড়িয়েছে এডিবি। গত এপ্রিলে প্রকাশিত সংস্থার এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে বলা হয়েছিল, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে এ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস খানিকটা কমিয়ে আনা হয়; বলা হয়, প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ।
তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এডিবি এখন বলছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি এর চেয়ে (৬ দশমিক ৮ শতাংশ) বেশিই হবে। তবে ঠিক কত হবে, তা প্রকাশ করেনি সংস্থাটি। যদিও সার্বিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস আগের তুলনায় কিছুটা কমিয়েছে এডিবি। গত সেপ্টেম্বরে এডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছর দক্ষিণ এশিয়ায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। বুধবারের প্রতিবেদনে প্রবৃদ্ধির এই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে ২০২২ সালের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার জন্য আগের পূর্বাভাসই বহাল রেখেছে এডিবি; সেটি হচ্ছে ৭ শতাংশ।
গত ৭ অক্টোবর প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের সাউথ এশিয়ান ইকোনমিক ফোকাস প্রতিবেদনেও বাংলাদেশের অর্থনীতি আবার উচ্চ প্রবৃদ্ধির দিকে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ওঠায় বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যা ব্যুরো (বিবিএস) ২০২০-২১ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে সাময়িক হিসাব প্রকাশ করেছে, তাতে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ অর্জনের কথা বলা হয়েছে। গত অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরলেও মহামারি পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করায় তা সংশোধন করে ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাক্বলন করা হয়েছিল। মহামারির শুরুর ধাক্কায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি নেমে গিয়েছিল ৩ দশমিক ৫১ শতাংশে, যা তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে, ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকার ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ২৫ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছেন বাংলাদেশে ব্যাবসায়ী উদ্যোক্তারা। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।
এদিকে ডিসেম্বরের প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার মূল্যস্ফীতি খানিকটা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে এডিবি। সংস্থাটির মতে, এ বছর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি হতে পারে গড়ে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। যেটি এডিবির আগের পূবার্ভাসে ছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।
তবে আগামী বছর মূল্যস্ফীতি কমে ৫ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসবে বলে ধারণা করছে সংস্থাটি। করোনাভাইরাসের অমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট নিয়েও শঙ্কার কথা বলা হয়েছে এডিবির প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, এশিয়ার অর্থনীতিতে ওমিক্রন ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবর মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। আর ১২ মাসের গড় হিসাবে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এডিবি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ