দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
আলহাজ্ব মোঃ কুরবান উল্লাহ (রহ.) আনু: ১৮৬১ সালে বর্তমান মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার চিৎলিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তাহার পিতার নাম লিম্বর উল্লাহ ও দাদার নাম মুসলেহ উদ্দিন। শৈশবকালে তিনি পিতৃহারা হয়ে মায়ের স্নেহ আদরে লালিত-পালিত হন। আনু: ১৮৭১ সালে মায়ের সাথে তিনি কমলগঞ্জ উপজেলার অপর একটি প্রসিদ্ধ গ্রাম কানাইদেশীতে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এ গ্রামে তার দুটি বাড়ি রয়েছে। প্রথম যে বাড়িতে বসবাস করতেন সে বাড়িতে এখন দক্ষিণ কানাইদেশী শাহী ঈদগাহ অবস্থিত। এ বাড়ি থেকে ৩০ শতক জায়গা ১৯৯৭ সালে তার পুত্রগণ ঈদগাহের জন্য দান করেন। দ্বিতীয় বাড়িতে তিনি আনু: ১৯২০ সালে এসে বসতি স্থাপন করেন। তাঁর এ বাড়িটি কানাইদেশী বড়বাড়ি নামে প্রসিদ্ধ রয়েছে। তিনি এ বাড়িতে আনু: ১৯৩৫ সালে এলাকাবাসী মুসলমানগণকে নিয়ে কানাইদেশী বড়বাড়ি জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। অতঃপর আনু: ১৯৫৮ সালে কানাইদেশী বড়বাড়ি মকতব প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এ মসজিদ ও মকতবের মোতাওয়াল্লী হিসেবে আজীবন দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর দ্বিতীয় পুত্র প্রখ্যাত ক্বারী আলহাজ¦ মাওলানা মোঃ আব্দুর রহিম ছলিম উল্লাহ আল কুরবানী রহ.(মৃত্যু-১৯৯৩ ইং) কে তিনি আনু: ১৯৫৫ সালে উক্ত মসজিদে ইমাম ও মকতবে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ প্রদান করেন। তাঁর এ পুত্র আমরণ সম্পূর্র্ণ অবৈতনিকভাবে এ দায়িত্ব পালন করেন। আর তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁর জৈষ্ঠ্য পুত্র আলহাজ¦ মোঃ আবদুল লতিফ হানিফ উল্লাহ আল কুরবানী (মৃত্যু-২০১০ ইং) এ মসজিদ ও মকতবের মোতাওয়াল্লীর দায়িত্ব গ্রহন করেন। বর্তমানে তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র ডাঃ মোঃ আব্দুল ওয়াহিদ আল কুরবানী সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
১৯৮২ সালে দারুলকিরাত মাজিদিয়া ফুলতলী ট্রাষ্টের একটি শাখা তাঁর বাড়িতে স্বীয়পুত্র আলহাজ্ব মাওলানা ক্বারী মোঃ আব্দুর রহিম ছলিম উল্লাহ আল কুরবানী রহ. চালু করেন। পরে ১৯৮৯ সালে শাখাটি কানাইদেশী বড়বাড়ি জামে মসজিদে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে এ মসজিদে শাখাটি চালু রয়েছে।
আলহাজ্ব মোঃ কুরবান উল্লাহ রহ. ১৯৪৯ সালে পবিত্র হজ্ব আদায় করেন। তিনি নামাজ,রোজা,যাকাত ইত্যাদি ইবাদত বন্দেগীর পাশাপাশি সারা জীবন মানুষের সেবা করে গেছেন। নিজ বাড়িতে এতিম প্রতিপালন করেছেন। পথিক মুসাফিরগণ তাঁর বাড়িতে আশ্রয় নিতেন। তিনি তাদের সেবা করেছেন আন্তরিকতার সাথে। ফকির-মিসকিন,দুঃস্থ-অভাবী মানুষকে দান করেছেন অকাতরে। কোন সাওয়ালকারীকে তিনি খালি হাতে ফিরিয়ে দেননি। পাড়া-প্রতিবেশি ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল। মেহমানদারিতে ছিলেন অতুলনীয় । তাঁর ব্যবসা-বানিজ্য,ক্ষেত-খামার ও বাড়ি-ঘরে বহু লোকজন কাজ করতেন, তিনি তাঁদের সাথে উত্তম আচার ব্যবহার করতেন। তিনি যা খাইতেন তাদেরকে তা খাওয়াতেন। কোন সংকোচতাবোধ না করে তাদেরকে নিয়ে একসাথে বসে খেতেন।
তাঁর বাড়ি ছিল আলিম উলামা ও পীর মাশায়েকগণের মারকাজ। তাঁরা এখানে এসে এতদঞ্চলে দ্বীনি তালিম তরবিয়ত প্রদান করেছেন। আর তিনি তাঁদের খেদমত করে নিজেকে ধন্য করেছেন। তাঁর সময়ে যেমন তিনি তাঁদের খেদমত করেছেন ঠিক তাঁর ইন্তেকালের পরেও তেমন তার সন্তানগণ তাঁদের খেদমত অব্যাহত রেখেছিলেন।
এ সকল আলিম-উলামা ও পীর মাশায়েখগণের মধ্যে হযরত আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহ.,শাহ সুফী হযরত আব্দুস সত্তার ফান্দাওকী রহ.,হযরত আল্লামা সা’দ উল্লাহ চিৎলিয়াভী রহ., হযরত আল্লামা হরমুজ উল্লাহ সায়দা রহ., হযরত আল্লামা আবু বকর মোঃ শামসুল হুদা সোনাকান্দাভী রহ. ও হযরত আল্লামা আব্দুল আজিজ উবাহাটাভী-শায়েস্থাগঞ্জী রহ. প্রমূখ উল্লেখযোগ্য।
আলহাজ্ব মোঃ কুরবান উল্লাহ রহ. প্রথমে আমিরুল মু’মিনীন,শহীদে বালাকোট হযরত সাইয়িদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহ. এর সিলসিলার উত্তরসুরী হযরত সাইয়িদ আব্দুস সত্তার ফান্দাওকী রহ. এর নিকট বায়াত হন। সাইয়িদ ছাহেব রহ. এর ইন্তেকালের পর তিনি হযরত আল্লামা হাফিজ আব্দুর রহমান হানাফী সোনাকান্দাভী রহ.এর অন্যতম খলিফা হযরত আল্লামা আব্দুল আজিজ উবাহাটাভী-শায়েস্থাগন্জী রহ. এর নিকট বায়াত হন। তাঁর সন্তানগণও হযরত সাইয়িদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহ. এর সিলসিলার একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন। তাঁর চতুর্থ পুত্র মৌলভী মোঃ খলিলুর রহমান আল কুরবানী পীর ছাহেব রহ.(মৃত্যু -২০০৩ ইং) হযরত আল্লামা আব্দুল আজিজ উবাহাটাভী-শায়েস্থাগঞ্জী রহ. এর অন্যতম খলিফা ছিলেন। আলহাজ্ব মোঃ কুরবান উল্লাহ রহ. নিজ বাড়িতে প্রতিমাসে খানেকা মাহফিলের আয়োজন করে স্বীয় পীর ও মুর্শিদের মাধ্যমে মাহফিলে উপস্থিত লোকজনকে শরীয়ত ও মারিফতের তালিম তরবিয়ত প্রদান করাতেন। এছাড়া এলাকাবাসীকে নিয়ে এলাকায় বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করতেন। বিভিন্ন দিবস অর্থাৎ আশুরা,ঈদে মিলাদুন্নবী(সঃ),শবে বরাত , শবে কদর ও বদর দিবস ইত্যাদি উদযাপন উপলক্ষে মিলাদ শরীফ মাহফিলের আয়োজন করতেন। বিশেষ করে প্রত্যেক বছরে একবার ব্যাপক খরচের মাধ্যমে বাড়িতে মিলাদ শরীফ মাহফিলের আয়োজন করতেন। তাঁর ইন্তেকালের পরও তাঁর সন্তানগণের মাধ্যমে এ সকল খেদমতের ধারা অব্যাহত ছিল।
তিনি ১৯৬৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। তাঁকে কানাইদেশী বড় কবরস্থানে দাফন করা হয়। আল্লাহ তা’য়ালা তাঁেক জান্নাতে উচ্চ মাকাম দান করুন। আমিন।
(তথ্যসূত্র : মোঃ মঈনুল ইসলাম আল কুরবানী কর্তৃক প্রকাশিত “আলহাজ্ব কুরবান উল্লাহ রহ. জীবনী” গ্রন্থ দ্রষ্টব্য। )
লেখক : সাবেক সহ-সভাপতি : বাংলাদেশ আঞ্জুমানে তালামীযে ইসলামিয়া কমলগঞ্জ উপজেলা শাখা, মৌলভীবাজার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।