দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
উত্তর : ইসলামী শিক্ষা জীবনের প্রতিটি শাখা-প্রশাখায় বিস্তৃত। তাই এর সম্পর্ক সামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে।জীবনে কোনো দিক ইসলামী শিক্ষার বাহিরে নয়।
‘পোশাক’ ও জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই কোরআন ও হাদীসেও এ বিষয়ে বিস্তারিত দিক নির্দেশনা রয়েছে।
বর্তমান যুগের অপপ্রচার: ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার আজ ধুমায়িত করা হচ্ছে। পোশাকের ব্যাপারেও চলছে নানামুখী প্রোপাগান্ডা। বলা হচ্ছে, পোশাক ব্যক্তি, পরিবেশ ও দেশের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত; এ ব্যাপারে মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন। যেকোনো পোশাক পরিধান মানুষের নিজস্ব অধিকার। এ ক্ষেত্রে ইসলামকে টেনে আনা উচিত নয়। এটা সম্পূর্ণ সংকীর্ণতার পরিচয়। এসব মূলত: মোল্লা-মৌলভীর কাজ! ধর্মকে নিজস্ব মতানুসারে চালানোই তাদের লক্ষ্য। তারা ধর্মের ঠিকাদারী নিয়েছে। নিজেদের পক্ষ থেকে কতো কতো ‘শর্ত’ জুড়ে দিয়েছে। অন্যথায় ধর্ম তো সহজ বিষয়। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতো নিয়ম-কানুন দেননি। মোল্লা-মৌলভীদের সংকীর্ণতার কারণে আজ মানুষ ধর্মকে ‘কঠিন’ মনে করছে। মোল্লারা নিজেরাও বিরত হচ্ছে, অন্যদেরকেও বিরত করছে।
সকল পোশাকের নিজস্ব প্রভাব রয়েছে: জেনে রাখুন, এসব অপপ্রচারে প্রভাবিত হয়ে এগুলোকে সত্য ভেবে বসবেন না। এগুলো স্রেফ অপপ্রচার এবং ইসলাম ও মুসলমানদের স্বকীয়তা নষ্ট করার ষড়যন্ত্র। অন্যথায় পোশাক কোনো সাধারণ বিষয় নয়।। কেউ চাইলেই নিজের ইচ্ছে মতো পোশাক পরতে পারে না। পোশাকের প্রভাব মানুষের আত্মা, চরিত্র, ধর্ম ও কর্মে পড়ে। মনোবিজ্ঞানীরাও আজ একথা স্বীকার করতে বাধ্য যে, পোশাক নিছক কোনো কাপড় নয়, বরং পোশাকের একটা প্রভাব আছে। মানুষের বাস্তবজীবনে ও জীবনের চিন্তাধারায় এর প্রভাব অনস্বীকার্য।
হজরত ওমর (রা.) এর মনে জুব্বার প্রভাব: বর্ণিত আছে, একবার হজরত ওমর (রা.) মূল্যবান একটি জুব্বা পরে মদীনার মসজিদে খুতবা দেয়ার উদ্দেশ্যে গেলেন। খুতবা শেষে বাড়িতে ফেরার সময় জুব্বাটি খুলে ফেললেন। বললেন, ভবিষ্যতে আমি আর এ জুব্বা পরব না। এ তো জুব্বা নয়; বরং অহংকারের উৎস। এটি পরে আমি নিজেকে অহংকারী হিসেবে আবিস্কার করেছি। সুতরাং ভবিষ্যতে এটি পরা যাবে না। একটি আড়ম্বর জুব্বা হজরত ওমর (রা.) এর হৃদয়ে এভাবে রেখাপাত করল। অথচ সত্তাগতভাবে জুব্বাটি হারাম ছিল না। আল্লাহ তায়ালা তাদের মেযাজকে পবিত্র করেছিলেন। স্বচ্ছ আয়নার মত সবকিছু ধরা পড়ে যেত তাদের হৃদয়ের আয়নায়। সাদা কাপড়ের দাগের মতো সহজেই ধরে ফেলতেন তাদের হৃদয়ের ক্ষুদ্রতম দাগও। যেমনটি ধরে ফেলেছেন হজরত ওমর (রা.)। পোশাকের প্রভাব তিনি অনুভব করেছেন। জীবন ও চরিত্রে তার অশুভ প্রতিক্রিয়া উপলব্ধি করেছেন।
অথচ আমাদের অন্তর আজ দাগে ভরে গেছে। ময়লাযুক্ত কাপড়ের মতো ভেতরটা কালো হয়ে গেছে। তাই নতুন কোনো গুনাহের দাগ আমাদের কাছে ধরা পড়ে না। গুনাহর দাপাদাপির সঙ্গে আমরা পেরে ওঠি না। যাক, ইসলামে পোশাকের গুরুত্ব অবশ্যই রয়েছে। পোশাকের ব্যাপারে ইসলামের দিকনির্দেশনাও রয়েছে। তাই এ সম্পর্কে মৌলিক নীতিমালা জানতে হবে এবং সে অনুযায়ী আমল করার চেষ্টা করতে হবে।
বর্তমান যুগের আরেকটি অপপ্রচার ও প্রোপাগান্ডা: এ অপপ্রচারটিও বেশ হাস্যকর। বলা হচ্ছে, জনাব! ধর্মের সম্পর্ক অন্তরের সঙ্গে; শরীরের সঙ্গে নয়। বাহ্যিক পোশাক-আশাক নিয়ে ধর্মের কোনো মাথাব্যথা নেই। আমাদের লেবাস-পোশাক এমন হলে কী হবে, অন্তর তো ঠিক আছে। নিয়ত পরিষ্কার আছে। আর যার অন্তর সাফ, তার বাহ্যিক দিক ঠিক না থাকলে এমন কী-ই-বা আসে যায়? ইসলাম মানুষের অন্তর দেখে। নিয়ত শুদ্ধ হলেই আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক রাখা যায়।
ভেতর ও বাহির উভয়টাই ঠিক থাকতে হবে: মনে রাখবেন, এসব হাস্যকর অপপ্রচার শুনে সে দিকে ঝুঁকে পড়বেন না। কেননা ইসলামের বিধি-বিধান ভেতর ও বাহির উভয় ক্ষেত্রেই রয়েছে। অন্তর যেমন সাফ হতে হয়, বাহ্যিক অবয়ব তেমনি পরিশুদ্ধ হতে হয়। নিয়ত যেমনিভাবে বিশুদ্ধ হতে হয়, তেমনিভাবে শরীর-পোশাকও রুচিশীল হতে হয়। এ মর্মে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-‘তোমরা প্রকাশ্য ও পোপন গুনাহ পরিত্যাগ কর।’ (সূরা: আনআম, আয়াত: ১২০) আসলে যার অন্তর স্বচ্ছ থাকে, তার বাহ্যিক চাল-চলনও পবিত্র থাকে। ভেতর ঠিক না হলে বাহির খারাপ হবে অবশ্যই।
একটি চমৎকার উদাহরণ: এ প্রসঙ্গে এক বুযুর্গ চমৎকার একটি উপমা দিয়েছেন। ফল নষ্ট হলে চামড়াতেও দাগ পড়ে। ফলের ভেতর পচে গেলে বাইরে পচে যায়। তেমনিভাবে কারো অন্তরে অবক্ষয় শুরু হলে, বাহ্যিক অবস্থাতেও তার প্রভাব পড়বে। অন্তর খারাপ হলে উপরের অবস্থাও খারাপ হবে এবং অবশ্যই হবে।
উত্তর দিচ্ছেন :আতিকুর রহামন নগরী শিক্ষাবিদ ও গবেষক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।