Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপসর্গহীন করোনা রোগীর সংখ্যা বেশি

আইসিডিডিআরবি-আইইডিসিআর’র গবেষণা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

বর্তমানে শুধুমাত্র উপসর্গযুক্ত অসুস্থ ব্যক্তিদের চিকিৎসা নেওয়ার সময় কোভিড-১৯ এর রোগ নির্ণয় করা হয় বলে মত দিয়েছেন গবেষকরা। কিন্তু অনেক অসুস্থ ব্যক্তি চিকিৎসা করান না এবং অনেকে আছেন যারা উপসর্গবিহীন। এইভাবে কর্তৃপক্ষ প্রায়শই সংক্রামিত ব্যক্তির মোট সংখ্যা সম্পর্কে সঠিক ভাবে অবগত থাকেন না। যার ফলে স¤প্রদায়ের কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ অবমূল্যায়িত হয়। গবেষকরা বলেন, আমাদের মতো সক্রিয় নজরদারি ব্যবস্থা এই সকল অসুস্থ ব্যক্তিদের কার্যকলাপের ওপর নির্ভর করে না এবং এটি কোভিড-১৯-এর মতো সংক্রামক রোগের প্রার্দুভাবকে আরও কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার সিক্স সিজনস হোটেলে জরিপ- এর ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন।

আইসিডিডিআরবি, ইউনিভার্সিটি অফ ভার্জিনিয়া, ইউএসএ; ইম্পেরিয়াল কলেজ অফ লন্ডন, ইউকে; রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর), বাংলাদেশ; স্বাস্থ্য অধিদফতর, বাংলাদেশ এবং অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠান একটি আলোচনা সভার মাধ্যমে সর্বপ্রথম সম্মিলিতভাবে ঢাকার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় সার্স-কোভ-২ এর নজরদারি পদ্ধতি উপস্থাপন করে। এই নতুন জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা পয়ঃনিষ্কাশনের পানিতে সার্স-কোভ-২ এর আরএনএ শনাক্ত করার মাধ্যমে কোভিড-১৯ এর গতিবিধি সফলভাবে অনুসরণ করতে পারে।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, এই নালা-নর্দমার নজরদারি পদ্ধতি সর্বপ্রথম ২০১৯ সালের জুন মাসে চালু করা হয়। যেখানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৮টি ওয়ার্ডের ৩৩টি বিভিন্ন এলাকা অন্তর্গত ছিল এবং প্রাথমিকভাবে তা পোলিও ভাইরাস (সাবিন ভাকসিন স্ট্রেইন), অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স জিন এবং অন্যান্য আন্ত্রীক রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু শনাক্তকরণে সক্ষম ছিল।

২০২০ সালের মার্চ মাসে যখন কোভিড-১৯ মহামারি ছড়িয়ে পড়ে, তখন তাৎক্ষণিকভাবে এই পয়ঃনিষ্কাশন নজরদারি পদ্ধতির পরিধি নমুনায় সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের শনাক্তকরণের জন্য প্রসারিত করা হয়েছিল। তারপর থেকে, প্রতিটি নির্দিষ্ট এলাকা থেকে সাপ্তাহিকভাবে নির্দিষ্ট পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার স্থানে নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং তাতে ভাইরাসের পরিমাণ রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন কোয়ান্টিটেটিভ পিসিআর নামে একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে পরিমাপ করা হয়। প্রতিটি নমুনা সংগ্রহের স্থানের সাথে সম্পর্কিত এই ভাইরাসের পরিমাণ অত্র এলাকার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং ড্রেন লাইনের তথ্যের সাথে সমন্বয় করা হয় এবং এভাবে ঐ এলাকায় সংক্রমিত লোকের সংখ্যা প্রদান করা হয়। অবশেষে, এই সমস্ত তথ্য এবং বিশ্লেষণ নিম্নলিখিত লিঙ্কে একটি অনলাইন ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে।

আইসিসিডিআর,বি-এর জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. রাশিদুল হক বলেন, বর্তমানে শুধুমাত্র উপসর্গযুক্ত অসুস্থ ব্যক্তিদের চিকিৎসা নেওয়ার সময় কোভিড-১৯ এর রোগ নির্ণয় করা হয়, কিন্তু অনেক অসুস্থ ব্যক্তি চিকিৎসা করান না এবং অনেকে আছেন যারা উপসর্গবিহীন। এইভাবে কর্তৃপক্ষ প্রায়শই সংক্রামিত ব্যক্তির মোট সংখ্যা সম্পর্কে সঠিক ভাবে অবগত থাকেন না।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য শাখা) সৈয়দ মজিবুল হক বলেন, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিয়ে এই ধরনের গবেষণা বাংলাদেশে একেবারেই নতুন। আমরা আন্তর্জাতিকভাবে ফলাফলগুলো ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হতে পারি এবং বিশ্বকে দেখাতে পারি যে আমরা কিভাবে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার মাধ্যমে নজরদারি করতে পারি। আমাদের তৃণমূল পর্যায়ে ফলাফল প্রচার করতে হবে যাতে আমরা মানুষের
ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মামি তানিউচি উদীয়মান স্ট্রেন এবং রূপগুলো শনাক্ত করার সম্ভাবনা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে বলেন, আমরা সার্স-কোভ-২ এর সঞ্চালনকারী স্ট্রেন এবং রূপগুলি ট্র্যাক করার জন্য একটি শক্তিশালী সিস্টেম প্রতিষ্ঠা করছি। আমরা কাজ শুরু করেছি এবং বর্তমানে তথ্য বিশ্লেষণ করছি। আশা করি, এই অর্ন্তদৃষ্টিগুলো সংক্রমণের পরিবর্তনগুলোকে আরও সঠিকভাবে শনাক্ত করতে এবং কোভিড-১৯-এর জন্য জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং নজরদারি জোরদার করতে সহায়তা করবে।

ঢাকায় পয়ঃনিষ্কাশন পর্যবেক্ষণের সম্ভাবনার বিষয়ে মন্তব্য করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, যেহেতু উপসর্গহীন কোভিড-১৯ রোগী সংখ্যা উপসর্গবিশিষ্ট রোগীর চেয়ে বেশি, তাই এই ধরনের নজরদারি ব্যবস্থা বাংলাদেশ সরকারের জন্য সত্যিই উপযোগী। আমরা আইসিডিডিআর,বি-র নির্বাহী পরিচালক ডা. তাহমিদ আহমেদ তার বক্তব্যে এই নজরদারি ব্যবস্থা দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহারের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। বলেন, সরকারের প্রচেষ্টার কারণে বাংলাদেশ কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে বেশ ভালো কাজ করেছে। কোভিড-১৯ নিয়ে বাংলাদেশে যে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভাবনী গবেষণা হচ্ছে তাও সরকারের প্রচেষ্টায় সহায়তা করছে। এই ধরনের নজরদারি ব্যবস্থা হল গবেষণার একটি উদাহরণ যা কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টায় দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করা যেতে পারে।

অনুষ্ঠানে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলা হয়, ড্যাশবোর্ড এবং ঢাকায় পয়ঃনিষ্কাশন নজরদারির পরীক্ষামূলক গবেষণা কার্যক্রম প্রমাণ করবে যে অধিক জনবহুল দেশগুলোতে সার্স-কোভ-২ এর সুনির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্ট চিত্র তুলে ধরা সম্ভব এবং এটি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কোভিড-১৯ এর যথাযথ উপস্থাপনা বাড়ানোর প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে। পয়ঃনিষ্কাশন নজরদারি গবেষণাটি বিল এবং মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন দ্বারা অর্থায়িত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ