Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চলছে অবৈধ ইটভাটা : বিপাকে কৃষক

পার্বতীপুরে রিট আদেশ অমান্য

এম এ জলিল সরকার, পার্বতীপুর (দিনাজপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

পার্বতীপুর উপজেলায় দিন দিন ইট ভাটাগুলো বেড়েই চলছে। ভাটাগুলোর নেই কোন পরিবেশের সনদ, প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে ভাটাগুলো চলছে। দিনাজপুরের পার্বতীপুর হামিদপুর ইউনিয়নে অবৈধভাবে গড়েওঠা ইটভাটা বন্ধে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বেঞ্চের রিট পিটিশনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্থানীয় একটি সার্থান্বেস্বী মহলের প্রভাবে ইটভাটার মালিকগণ ফের ভাটায় আগুন দিয়ে ইট উৎপাদন শুরু করেছে।
এতে করে জনবসতিপূর্ণ এলাকার মানুষজন আবারও নতুন করে বিপাকে পড়েছে। জানা যায়, উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নে জনস্বার্থের পক্ষে আজিজুর রহমান ও মাসুদ রানা বাদী হয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করার জন্য। কিন্তু রিট পিটিশনের বন্ধের নির্দেশ উপেক্ষা করে মাত্র ৭ দিনের মাথায় ইটভাটাগুলো চালু করা হয়েছে। এসবের মধ্যে ১০টি ভাটায় পুরোদমে চলছে ইট উৎপাদন ও বিক্রি, ৫টিতে আগুন দেওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন। আর ৪টি বন্ধ রয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই ১৯ ইটভাটা একই ইউনিয়ন হামিদপুরে স্বল্প স্বল্প দূরত্বে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত।
অনুসন্ধানকালে লক্ষ্য করা গেছে আবাদী ও জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইটভাটাগুলোর বিষাক্ত ধোঁয়া ও গ্যাসে কৃষকদের আম, জাম, লিচু, কলা, নারিকেল, ধান, শাক-সবজি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন করে ইটভাটা বন্ধসহ ক্ষতিপূরণের আবেদন জানিয়ে আসছে। মালিকগণ কর্ণপাত না করে নিজ গতিতে চলছে। অবশেষে ক্ষতিগ্রস্থরা কোন কুলকিনারা না পেয়ে ‘ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক সংগ্রাম পরিষদ’ নামক একটি স্থানীয় সংগঠনের পতাকা তলে সংঘবদ্ধ হয়ে সুপ্রিম কোর্টের রিট করতে বাধ্য হয়। সংঘঠনটি এই এলাকার মানুষের পক্ষে গত ১৬ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বেঞ্চে একটি রিট পিটিশন দাখিল করে। যার নং- ৭৯৪৫/২১)। দু বিচারপতি এনায়েতুর রহিম ও মোস্তাফিজুর রহমান এর সম্বনয়ে গঠিত বেঞ্চ পিটিশনটি পর্যালোচনা পূর্বক ১৯টি ইটভাটাকে অবৈধ ঘোষনা করে বন্ধের নির্দেশ দেন। নির্দেশটি প্রাপ্তির পর মাত্র ৭দিন ভাটাগুলো বন্ধ থাকে। কিন্তু তারপরই রহস্যজনক কারনে ইটভাটাগুলো চালু করা হয়। বাদীগণ ১৯ ইটভাটার মালিকসহ পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয়ের সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, বিভাগীয় পরিবেশ কর্মকর্তা, দিনাজপুর জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিবেশ কর্মকর্তাসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা উপজেলা পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাগণকে বনাম করে রিট পিটিশনটি দাখিল করেছিল।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর পরিবেশ কর্মকর্তা সামিউল ইসলাম কুরশি জানান, চলতি মাসের ১ তারিখেই হামিদপুরের ১৯ ভাটার মালিককে ভাটায় আগুন দিতে নিষেধ করা হয়েছে। অচিরেই মাতামাতি বন্ধ হয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাশিদ কায়সার রিয়াদ জানান, যারা আইন অমান্য করেছে তাদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হবে। রিট পিটিশনকারী আজিুজর রহমান জানান, আমরা একটি ঘোর অন্ধকারে রয়েছি। হাইকোর্টের রায় অমান্য হচ্ছে, কৃষক বিপাকে আছে, অধিবাসীরা হাঁচি-কাশিসহ শ্বাসকষ্টে ভুগছে, কৃষকের ফসল নষ্ট হচ্ছে, আর সংশ্লিষ্টরা দেদারসে ঘুমাচ্ছেন।
এ বিষয়ে একাধিক ভাটা মালিকদের সাথে কথা হলে তারা জানান, দেশের অন্যান্য স্থান যেভাবে ভাটা চলছে, সেভাবেই আমরাও ভাটা চালচ্ছি। তারা রিটের কথা স্বীকার করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ