Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাড়তে পারে সময়-ব্যয়

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে সময়-ব্যয় বাড়ছে। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কমিটির সভায়ও স¤প্রতি এর কারণ এবং যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়। বাড়তি দেড় বছর সময় ও ১ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর কথা বলা হয় সভায়। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

২০১৬ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পাওয়া এ প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এতে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে। ২০১৮ সালে প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। নতুন করে সংশোধনী আনা হলে প্রকল্পের ব্যয় ৪০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এ ছাড়া একই দিনে পদ্মার ওপর সড়ক সেতু ও রেল সেতু চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করায়ও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। প্রকল্পটির কাজ ২০২৪ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন তা শেষ করতে বাড়তি সময় প্রয়োজন বলে মনে করে রেলওয়ে। এ জন্য আরও দেড় বছর বা ২০২৬ পর্যন্ত সময় চাইবে সংস্থাটি।

রেলওয়ে জানিয়েছে, প্রকল্প সংশোধনী প্রস্তাবের কাজ মাত্র শুরু হয়েছে। এখনও চূড়ান্ত হয়নি প্রস্তাব। সময় ও ব্যয় কম বা বেশি হতে পারে। প্রথমে প্রস্তাব রেল মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে, তারপরই চূড়ান্তভাবে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, এই প্রকল্পের বিষয়ে তাদের কাছে এখনও কোনো প্রস্তাব বা তথ্য আসেনি। কমিশন জানিয়েছে, প্রকল্পটিতে গত নভেম্বর পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫১.৮২ শতাংশ। এ পর্যন্ত প্রকল্পটিতে খরচ হয়েছে ২০ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৪৮ শতাংশ।

প্রকল্প সংশোধনীর কারণ হিসেবে বলা হয়, ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়া তৃতীয় ডুয়েলগেজ লাইন, ভাঙ্গা জংশনে ওভারহেড স্টেশন, কমলাপুরের টিটিপাড়াতে আন্ডারপাস, নড়াইলের তুলারামপুরে নতুন আন্ডারপাস, ভায়াডাক্টের পিয়ারের (সেতু কর্তৃপক্ষ বা বিবিএর চাহিদা মোতাবেক) নকশা পরিবর্তন, ১০০টি বিজি কোচের ডিজাইন পরিবর্তন, মাওয়া-পদ্মবিলা-কাশিয়ানি-রুপদিয়া স্টেশনগুলোতে অপারেশনাল ফ্যাসিলিটি বৃদ্ধি, নদীর নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত সম্ভাব্য ব্যয় প্রায় ১৩৮.৫৮ মার্কিন ডলার বা প্রায় ১ হাজার ১৭৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে। নির্মাণকাজের চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নকাল ডিসেম্বর ২০২২ এবং ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড বিবেচনায় ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত। ঠিকাদার কর্তৃক দাখিলকৃত সর্বশেষ ওয়ার্ক প্রোগ্রাম (এফ) অনুযায়ী বাস্তবায়নকাল জুলাই ২০২৪ পর্যন্ত। ভ‚মি অধিগ্রহণ, ইউটিলিটি শিফটিং, ভেরিয়েশন, বর্ষাকাল, করোনা প্রকোপ ইত্যাদি কারণে ঠিকাদার কর্তৃক প্রায় ১.৫ বছর প্রকল্প বাস্তবায়নকাল বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।

পিআইসি সভায় প্রকল্পের বেশ কিছু জটিলতার কথা তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, মাঝপথে এলো প্রকল্পটি ভ‚মি অধিগ্রহণে এখনও সমস্যা রয়ে গেছে। প্রকল্পের আওতায় নতুন করে ১৫২ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এখন পর্যন্ত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও যশোরের জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে জমি পাওয়া যায়নি। তাই তা ঠিকাদারকে বুঝিয়ে দেয়া যায়নি। জমি পেতে বিলম্ব হওয়ায় এরই মধ্যে ঠিকাদার অভিযোগ দিয়েছেন। মৌজা ম্যাপের সঙ্গে প্রকল্প অধিগ্রহণ পরিকল্পনার অসামঞ্জস্যতা, জিও রেফারেন্সিং সমস্যা, নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স বৃদ্ধি, স্টেশন নির্মাণকাজের পরিমাণ বৃদ্ধি, স্টেশন এক্সেস রোডের জন্য বাড়তি জমি লাগবে। তা ছাড়া প্রকল্প এলাকায় ইউটিলিটি শিফটিং (বিভিন্ন সংস্থার সেবা অন্যত্র সরিয়ে নেয়া) কাজেও সমস্যা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক কোড পরিবর্তন হওয়ায় ব্যয় পরিশোধ করা যাচ্ছে না। বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতির জন্য পাঠানো হয়েছে। এই প্রকল্পে পরামর্শক সেবাসংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে। পরামর্শকের সঙ্গে বর্তমান চুক্তি রয়েছে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রথম সংশোধনীতে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হলেও পরামর্শকের মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। তাই পরামর্শক্রমে আত্মগর্ব মেয়াদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বানানো প্রয়োজন।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন-আল-রশীদ বলেন, এ প্রকল্পের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব এখনও আমাদের হাতে আসেনি। এমনকি এই বিষয়ে কোনো চিঠিও পাইনি। প্রস্তাব পেলে সময় ও ব্যয় বিষয়ে কমিশন যাচাই-বাছাই করে মতামত দেয়া যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পদ্মা সেতু রেল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ