পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আবুল হাসান সোহেল, প্রকল্প এলাকা থেকে ফিরে : পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণে প্রাথমিক অবস্থাতেই বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শিবচর উপজেলার কাদিরপুর ইউনিয়নের বড় কেশবপুর মৌজার অধিগ্রহণ করা জমিতে জমির মালিকরা নানা অনিয়ম ও চতুরতার আশ্রয় নিয়ে নতুন নতুন ঘরবাড়ি তৈরি ও জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব করা হচ্ছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায়। হাজার টাকা ব্যয় করে লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মহোৎসব চলছে প্রকল্প এলাকায়। এসব করা হচ্ছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী নেতা ও প্রশাসনের ছোটকর্তা-বড়কর্তাদের যোগসাজশে। যে কারণে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না। এমন অভিযোগ পাওয়া গেল শিবচরে অনুসন্ধানকালে। তবে প্রশাসন ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসবের কোনো সুযোগ নেই। ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে ভিডিও দেখে।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রেললাইনের ভূমি অধিগ্রহণের জন্য চলতি বছর ১৩ জানুয়ারি মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়। প্রাথমিকভাবে শিবচর উপজেলার বিভিন্ন মৌজার ২১৩.২৮১৫ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারণ করা হয়। জমি অধিগ্রহণের জন্য ৩ ধারার নোটিশ প্রদান করা হয় সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে। পরবর্তীতে যৌথ তদন্ত শেষে করা হয়েছে। বর্তমানে ৬ ধারা চলমান রয়েছে।
সরেজমিন অনুসন্ধান করে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার ওপর দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের পদ্মা সেতু সংযোগ প্রকল্পে রেলপথ নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ কাজ শুরু করেছে কর্র্তৃপক্ষ। অধিগ্রহণের প্রাথমিক কাজ শুরুর পর থেকেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী নেতা ও প্রশাসনের অসাধু ছোটকর্তা-বড়কর্তাদের যোগসাজশে অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারিত জমির শ্রেণি পরিবর্তন ও নতুন ঘর-বাড়ি তৈরি করে সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে তৎপরতা শুরু করা হয়। কথায় আছে ‘সরকারী মাল দরিয়ামে ঢাল।’ শিবচরে সরকারী টাকা এখন হরিলুটের বাতাসায় পরিণত হয়েছে। অথচ, এসব দেখার কেউ নেই।
বর্তমানে পদ্মা সেতুর রেললাইন সংযোগ প্রকল্পে অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবিত জমিতে শ্রেণি পরিবর্তন করে নতুন করে ঘর-বাড়ি তৈরির হিড়িক পড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ঘর-বাড়ি। ৫ লাখ টাকা ব্যয় করে ৫০ লাখ টাকা পাওয়ার আশায় সক্রিয় চক্রটি অত্যন্ত তৎপর। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রায় ২ শতাধিক নতুন ঘর-বাড়ি তৈরি করা হয়েছে, যার সম্ভাব্য মূল্য ১০ কোটি টাকা। অথচ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ২০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবীর প্রস্তাবনা দাখিলের পাঁয়তারা চলছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ক্ষতিপূরণের বিল দাখিল করা হবে ভিন্ন-ভিন্নভাবে, যাতে বড় অঙ্কের টাকা কর্তৃপক্ষের চোখে না পড়ে। আর এসব কৌশল শিখিয়ে দিবে এলএ শাখার কেরানীরা, যারা রেলপথ প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। যাদের বিরুদ্ধে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ক্ষতিপূরণের বিল পরিশোধের সময় ১৫% নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল, তাদের কেউ কেউ এখনো এলএ শাখায় বহাল তবিয়তে।
অনুসন্ধান করতে গিয়ে আরো দেখা গেছে, কোথাও মাস তিনেক আগে ফসলি জমি ছিল সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে কাঁচাবাড়ি আবার কোথাও দালান, কোথাও টিনশেড বাড়ি। ফসলি জমিতে পুকুর কেটে তৈরি করা হয়েছে মৎস্য খামার। চোখে পড়ে মৎস্য খামারের সাইনবোর্ড। অথচ মাছের খামারে নেই কোনো প্রজাতির মাছ, এমনকি পুকুরে পানিও নেই। আবার কোথাও নতুন ঘর তৈরি করে মুরগির খামারের সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে দিলেও সেখানে নেই কোনো প্রজাতির মুরগি।
দুর্নীতি আর প্রতারণার প্রকৃত উদাহরণ পাওয়া যায় শিবচর পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকায় গেলে। শিবচর উপজেলার কাদিরপুর ইউনিয়নের ৯৫নং বড়কেশবপুর মৌজার মৃত্যু রশিদ মাতুব্বরের ছেলে সেলিম মাতুব্বর একটি টিনশেড ঘর তুলেছে। মাস কয়েক আগেও এখানে ছিল ফসলি জমি। একই মৌজার মৃতু করিম বেপারীর ছেলে নুর ইসলাম বেপারী ২টি টিনশেড ঘর তুলেছেন। পাশে একটি মাছের খামারও তৈরি করেছেন। অথচ পুকুরে নেই পানি, খামারে নেই মাছ। পাশে ঝুলে আছে মাছের খামারের সাইনবোর্ড। এছাড়াও একই মৌজার আব্দুল হক বেপারী ৩টি ঘর তুলেছে। নান্নু মোল্লা ৩টি, ইব্রাহিম মোল্লা ৫টি, আলি মোড়ল ৫টি, আক্তার শিকদার ৪টি টিনসেট ঘর তুলেছেন। সাথে আমের বাগান করেছেন। পাশেই মাছের খামার করেছেন। শিকদার কান্দি চররঘুনাথপুর এলাকার শাহজাহান মিয়া ৪টি টিনসেড ঘর তৈরি করেছেন। এভাবেই বিভিন্ন এলাকায় মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কিছু অসাধু সার্ভেয়ার ও কর্মকর্তাদের যোগসাযোসে প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন ঘর-বাড়ি তৈরির কাজ চলছে।
অভিযোগে জানা গেছে, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে অধিগ্রহণ করার নির্ধারিত ফসলি ও জলাবদ্ধ পতিত জমি শ্রেণি পরিবর্তন করে ভিটা, আবার কাঁচা বাড়ি-ঘরকে পাকা বাড়ি-ঘরে কিম্বা টিনশেড বিল্ডিংকে পাঁচতলা ফাউন্ডেশন তৈরি করা হয়েছে। এতে সরকারের কত কোটি টাকা লোপাট হবে তার হিসেব পাওয়া যাবে না। আর এতে লাভবান হবে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালীমহল, জমি এবং ঘর-বাড়ির সুবিধাবাদী মালিক ও টাউট-বাটপাররা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী বলেন, (জীবনের নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশ করা গেল না) ‘অফিসের স্যারেরা কইছে তোমরা নতুন ঘর উঠাও। নতুন ঘরের বিল যা পাবা অর্ধেক আমাগো দিবা অর্ধেক তোমরা পাবা। তাই আমরা নতুন ঘর উটাইচি। আমাগো কি ? স্যারেগো কতা না হুনলে আমরা কিচুই পামু না। আমরা বাপ-দাদার জমি দিতাচি কিচু লাভ না হলে দিমু ক্যান?’
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো.কামাল উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘৩ ধারা নোটিশের পর যদি তারা ৪০ তলা বিল্ডিংও করে তাহলে তারা ক্ষতিপূরণ পাবে না। ৩ ধারা নোটিশের পূর্বে আমরা ভিডিও করে রেখেছি। ওই ভিডিও অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাবে।’
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এসকে চক্রবর্তীর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘চলতি বছর ১৩ জানুয়ারির পরে ৩ ধারা নোটিশের পূর্বে অধিগ্রহণকৃত জায়গার ভিডিও করে রাখা হয়েছে। তা দেখেই ক্ষতিপূরণ বিল পরিশোধ করা হবে। অযৌক্তিক কোনো ধরনের দাবী গ্রহণ করা হবে না।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।