Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সেচ সঙ্কটে বিপাকে কৃষক

আটটি ট্রান্সফরমা চুরি : বিকল বরেন্দ্র টিউবওয়েল : পানি শূন্যতায় কয়েকশত বিঘা জমি আবাদী

আশরাফুল আলম, রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) থেকে | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৫ এএম

ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈলে চলতি বছরের নভেম্বর মাসেই বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ছয়টি সেচ টিউবওয়েলের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমা চুরি হওয়ায় বন্ধ হয়ে রয়েছে পানি সরবারহ। এতে পানি শূণ্যতায় পড়েছে কয়েকশ’ বিঘা আবাদী জমি। পানির অভাবে সেচ সংকটে ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা। ফসল উৎপাদনে ধস নামার আশঙ্কা কৃষকদের।
উপজেলা বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বলছেন, নভেম্বর মাসের ছয়টিসহ মোট আটটি টিউবওয়েলের ট্রান্সফরমা চুরি হয়েছে। এ কারণে এগুলো থেকে পানি সরবারহ বন্ধ রয়েছে। চুরি হলে আমাদের কিছু করার নেই। সুবিধাভোগী কৃষকদের নিজ অর্থায়ানে ট্রান্সফরমা ক্রয় করে টিউবওয়েল চালু করতে হবে।
এদিকে কৃষকরা বলেছেন, রাতের আঁধারে কারা এই চুরির ঘটনা ঘটালো তা আমরা জানি না। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্বসহকারে টিউবওয়েল চালু করবে। আমরা কেন টাকা দিয়ে ট্রান্সফরমা কেনবো। আমরাতো আর বিনা পয়সায় পানি নেই না। তারা তো এখান থেকে লাভবান হয়। তাছাড়া তাদের কারণে আমাদের সেচ মেশিনগুলো আমরা বন্ধ করে রেখেছি। এখন এগুলো চালু করতেও সময়ের ব্যাপার। কৃষকদের অভিযোগ বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ এখন আমাদের এক ধরনের জিম্মি করছে।
উপজেলা বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাস মিলিয়ে মোট আটটি ট্রান্সফরমা চুরি হয়েছে। এগুলো হলো, উপজেলার নয়নপুর, সন্ধারই, বলিদ্বাড়া, খঞ্জনা, সন্ধারই মীরডাঙ্গী অংশ, ভদ্বেশরী-১ ভদ্বেশরী-২ ও ভবানন্দপুর। এই আটটি টিউবওয়েল থেকে প্রায় আটশত বিঘাজমিতে পানি সরবরাহ করা হতো বলে জানা গেছে।
গতকাল সরেজমিনে নয়ানপুর গিয়ে দেখা যায়, ভুট্টা, গম, আলু খেতের পাশে পৃথকভাবে কয়েকজন কৃষক বসে রয়েছে, এদের মধ্যে ভুট্টা চাষি আব্দুল জালাল, কবিরের সাথে কথা হয়। তারা জানান, ভুট্টার গাছের বয়স প্রায় এক মাস পানি দেয়া খুব জরুরি। বরেন্দ্র টিউবওয়েল নির্ভর আমরা, তা বর্তমানে বিকল। পানি নেয়া বন্ধ। কি যে হবে কিভাবে যে খেতে পানি দেবো বুঝে আসছে না। সঠিক সময়ে পানি না দিলে ভুট্টার ফলন হওয়ার সম্ভবনা খুব কম। দ্রæত টিউবওয়েল চালু না করা হলে এখানকার শতাধিক বিঘা জমির ফসলহানির আশঙ্কা রয়েছে।
একইভাবে সন্ধারই গ্রামের কৃষক মুকুল ইসলাম বলেন, দুই বিঘা গম লাগিয়েছি পানির অভাবে গমের গাছ বৃদ্ধিতে ব্যাহত হচ্ছে। দ্রæত পানি না দিতে পারলে সমস্যা রয়েছে।
আরেক কৃষক খায়রুজ্জামান বলেন, ট্রান্সফরমা চুরি হয়েছে বেশ কয়েকদিন আগে। চুরির ব্যাপারে তেমন কোন ব্যবস্থা না নিয়ে। উল্টো এখন তারা কৃষকদের নিজের টাকায় ট্রান্সফরমা ক্রয় করে টিউবওয়েল চালু করতে বলছে। তারা টিউবওয়েল স্থাপন করেছে সেখান থেকে আমরা টাকার বিনিময়ে পানি নেই। তারা তো সেখান থেকে লাভবান হয়। এখন তাদের ট্রান্সফরমা চুরি হয়েছে তারা পূণরায় ট্রান্সফরমা স্থাপন করবে। তা না করে আমাদের চাপানোর চেষ্টা করছে। যা অযৌক্তিক। ওই কৃষক আরো বলেন, এটা বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ এক ধরনের জিম্মি করে চুরিকৃত ট্রান্সফরমাগুলো আমাদের পয়সায় ক্রয় করার চেষ্টা করছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ জানান, সঠিক সময়ে খেতে পানি না দিতে পারলে মাটির আদ্রঁতা হ্রাস পায়। এতে বীজের অঙ্কুরোগদম কমে যায়। তাতে ফসল উৎপাদন কমে যেতে পারে। এতে করে উপজেলায় রবি মৌসুমের ফলন উৎপাদনে হ্রাস পেতে পারে। যা আমাদের জন্য বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।
উপজেলা বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কাযার্লয়ের সহকারী প্রকৌশলী তিতুমীর রহমান বলেন, এ যাবত আটটি টিউবওয়লের ট্রান্সফরমা চুরি হয়েছে। সবগুলোই আপাতত বন্ধ। ট্রান্সফরমা চুরি হলে কর্তৃপক্ষের কিছু করার নেই। কৃষকদের অর্থের বিনিময়ে ট্রান্সফরমা নিয়ে সেচ টিউবওয়েল চালু করতে হবে। তাছাড়া আমাদের তেমন কিছু করার নেই। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, কৃষকরা না কিনতে চাইলে আমার কাছে একটি দরখাস্ত দিতে বলেন, আমি উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষ যদি ব্যবস্থা নেয় তাহলে হবে, না হলে কিছু করার নেই।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, ট্রান্সফরমা চুরি হয়েছে জানি। এখন কৃষকদের টাকা দিয়ে ট্রান্সফরমা নিয়ে সেচ টিউবওয়েল চালু করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ