Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন

চাই না নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হোক : হাসিনা

প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩০ পিএম, ২৩ অক্টোবর, ২০১৬

দলীয় নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ
বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন ও পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আওয়ামী লীগকে তৃতীয় দফা নির্বাচনে জয়ী করতে দলীয় নেতাকর্মীদের সেই লক্ষ্যে প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, সামনে নির্বাচন। জনগণের কাছে যেতে হবে। তৃতীয় দফা নির্বাচনে জয়লাভ করতে হলে জনগণের দোরগোড়ায় যেতে হবে। উন্নয়নের কথা বলতে হবে। ব্যাপক প্রচার করতে হবে। জনগণকে বোঝাতে হবে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে।
শেখ হাসিনা গতকাল রোববার সকালে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে কাউন্সিল অধিবেশনের সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় আনতে হবে। এখানে বসে থাকলে হবে না। কাজ করতে হবে। মানুষের কাছে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন হবে। গত সাত বছরে আওয়ামী লীগ যে সব কাজ করেছে, তার সুফল জনগণ পাবে আবারও ক্ষমতায় এলে। বিএনপির লুটেরারা ক্ষমতায় এলে সেটা হবে না।
তিনি নেতাকর্মীদের এলাকায় গিয়ে এখন থেকেই আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, জনগণের কাছে যেতে হবে। দেশের উন্নয়ন ও পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় আনতে হবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের সত্যিকারের আর্থ-সামিজক উন্নয়ন হয়,তা জনগনকে বলতে হবে।
সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে দলের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে কাউন্সিল অধিবেশনের কাজ শুরু করেন শেখ হাসিনা
বিগত সময়ে সরকারে থাকা বিএনপির কর্মকান্ডের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যারা মানি লন্ডারিং করে, মানুষ পুড়িয়ে মারে, যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দেয়, তারা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে।
কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্ব আনার আহ্বান জনিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, অবসরে যাওয়ার সুযোগ পেলে আমি খুশি হব। আমি চাই, আমি বেঁচে থাকতে থাকতে নেতা নির্বাচন করে দলকে শক্তিশালী করে যাব। আমার বয়স সত্তর হয়ে গেছে। আর কতো, নতুন নেতৃত্ব আনতে হবে।
এ সময়ে সারা দেশে থেকে আসা কাউন্সিলররা সমস্বরে ‘না’, ‘না’ বলে তার এ বক্তব্যের বিরোধিতা করেন এবং শেখ হাসিনাকেই মূল নেতৃত্বে থাকতে হবে বলে দাবী জানান। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের পক্ষেও ‘জয়’, ‘জয়’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‹আমি যখন দলের দায়িত্ব নিই তখন আমার ছেলে-মেয়েরা অনেক ছোট ছিল। তাদের স্নেহবঞ্চিত করে আওয়ামী লীগকে অনেক সময় দিয়েছি। আমার মনে হয়, লক্ষ্য পূরণ করেছি। এখন আমার দায়িত্ব শেষ।
শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘ সময় দলের নেতৃত্ব দিয়েছি। চলার পথে কোনো ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমা করবেন। অনেকে আমাকে আজীবন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী থাকতে বলেন। কিন্তু একজনের পক্ষে আজীবন সভানেত্রী থাকা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষে যে সব সম্ভব তা প্রমাণ হয়েছে। ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ যে কাজ করেছে সেজন্যে বাংলার মানুষ চিরদিন এ দলকে স্মরণ করবে।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‹দায়িত্ব পালনের শুরু থেকে আপনারা আমার পাশে থেকে জীবন রক্ষা করেছেন। ২১ আগস্ট মানবঢাল তৈরি করে জীবন বাঁচিয়েছেন। আপনারা আমাকে অনেক সম্মান দিয়েছেন, যা কোনোদিন ভুলবার নয়। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য চলাকালে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, এখন থেকে কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেল। নির্বাচন কমিটির ওপর দায়িত্ব দেয়া হলো। নির্বাচন কমিশন নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন।
আওয়ামী লীগের আজকের শক্তিশালী অবস্থানের কথা তুলে ধরে শেখ হসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ আজকের যে অবস্থানে এসেছে, তাতে কেউ আওয়ামী লীগকে অবহেলা করতে পারবে না। শনিবার বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অতিথিরা, যারা সম্মেলনে এসেছেন, তারা বক্তব্য দিয়েছেন। তারা সবাই আওয়ামী লীগের প্রশংসা করে গেছেন, জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে গেছেন। তিনি বলেন,জিয়াউর রহমানের সময় জয় বাংলা শ্লোগান নিষিদ্ধ ছিলো। সে সময় শুধু আওয়ামী লীগই জয় বাংলা সেøাগান দিতো। আজকে সেই শ্লোগান আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এখানে বসে তালি বাজালে হবে না। আমাদের অর্জনগুলো জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে। জনগণকে বার বার বলতে হবে। আমরা এই কাজ আপনাদের জন্য করেছি। আওয়ামী লীগ করেছে।মানুষেকে বোঝাতে হবে, সরকারের উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতে হলে অবশ্যই আওয়ামী লীগকে আরও একবার ক্ষমতায় আসতে হবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে জনগণ তার সুফল পাবে।
কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনা নেতা-কর্মীদের সম্পদের পেছনে না ছুটে জনগণকে ভালোবাসার পাশাপাশি, তাদের কল্যাণের জন্য সত্যিকারের আর্দশের কর্মী হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন,আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কাজই হবে প্রচার করা। ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া। তাদের কাছে যাওয়া। তাদের এই কথাটা বোঝানো যে আওয়ামী লীগ থাকলে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন হবে। তারা কিছু পাবে। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখতে পাবে।অবকাঠামো উন্নয়ন হবে, রাস্তাঘাট উন্নত হবে, পুল-ব্রিজ হবে। ক্ষেতে ফসল উৎপাদন হবে। এই কথাগুলো মানুষের কাছে ভালোভাবে পৌঁছে দেওয়া। আওয়ামী লীগের এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কাজ। এ জন্য সংগঠনকে শক্তিশালী করা আর জনগণের দোরগোড়ায় গিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো, এটাই আমরা আশা করি।
চাই না নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হোক : হাসিনা
বিএনপিবিহীন নির্বাচনে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পরবর্তী নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হোক তা তিনি চান না। দলের নতুন নেতৃত্বকে সংগঠন গোছানোর তাগাদা দিয়েছেন তিনি। গতকাল রোববার দলের কাউন্সিলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর নেতাকর্মীদের উদ্দেশে হাসিনা বলেন, ২০১৯ সালে জাতীয় নির্বাচন। আমি চাই না নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হোক। নির্বাচনে যেন জয়ী হতে পারি সেভাবে কার্যক্রম চালাতে হবে।
উল্লেখ্য, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ২০১০ সালের ৫ জানুয়ারির ভোট বর্জন করে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ও তার মিত্ররা। ওই নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসনে বিনা ভোটে সাংসদ নির্বাচিত হন, যাকে নির্বাচনের নামে ‘প্রহসন’ বলছে বিএনপি। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশও ভোট নিয়ে প্রশ্ন তোলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ