বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
যশোরের চৌগাছায় ৪০ ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর জন্য ৭০টি বিদ্যালয় স্থাপন করার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। যার ফলে ২০ মাসে সরকারের গচ্চা যাবে সাত কোটি টাকার বেশি।
উপজেলায় মাত্র চল্লিশজন ঝরে পড়া শিক্ষার্থী থাকলেও উপজেলা শিক্ষা অফিসের যাচাই প্রতিবেদনে গুরুত্ব না দিয়ে ৭০টি শিখন কেন্দ্র (বিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠার অনুমোদন এবং প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ৩০ নভেম্বর উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক আতাউর রহমান স্বাক্ষরিত পত্রে ওইসব বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের নির্দেশনা দিয়ে আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে শিক্ষন কেন্দ্র সমূহ (বিদ্যালয়) চালু করতে বলা হয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেশের যেসব স্থানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই সেসব এলাকার শিক্ষার্থীদের শিক্ষার আওতায় আনতে ও ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের (৮-১৪ বছর বয়সী) শিক্ষার ব্যবস্থা করতে (আউট অব স্কুল চিলড্রেন) প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশের কয়েকটি জেলার বেশ কিছু উপজেলাকে প্রকল্পভুক্ত করেছে সরকার। উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর অধীনে পিইডিপি-৪ অর্থায়নে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) মাধ্যমে এসব বিদ্যালয় পরিচালনার সিদ্ধান্ত রয়েছে। প্রকল্প এলাকার প্রতিটি উপজেলাকে ৭০টি আলাদা ক্যাচমেন্ট এরিয়া ধরে সেখানে ৭০টি বিদ্যালয় স্থাপিত হবে। যেখানে একজন শিক্ষক চারবছর মেয়াদে ৩০ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করবেন। ২০১৯ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে এনজিও বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করার পর ২০২০ সাল থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর কথা ছিলো। তবে করোনা সংক্রমণের কারণে তা কিছুটা পিছিয়ে যায়।
সূত্র জানায়, যশোর জেলায় প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে বেসরকারি সংস্থা (দিশা)। তাদের কাছ থেকে চৌগাছা উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা মাদার এন্ড চাইল্ড ডেভলাপমেন্ট ওরগানাইজেশন (ম্যাকডো)। প্রকল্পটি ৪২ মাস চলার কথা থাকলেও সেটি সংক্ষিপ্ত হয়ে ২০ মাসে সমাপ্ত হওয়ার কথা রয়েছে। ২০ মাসের প্রকল্প ব্যয় হিসেবে যশোর জেলার লিড এনজিওর সাথে ৫৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকার চুক্তি হয়। সে হিসেবে প্রতি উপজেলায় বরাদ্দ হয় ৭ কোটি ৬ লাখ টাকার ওপরে।
সূত্র জানায়, গত জুন মাসে সংস্থাটি তাদের জরিপকৃত ২১০০ শিক্ষার্থীর তালিকা স্ক্যানিং করে অনলাইনে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক বরাবর পাঠায়। সেখান থেকে তালিকাটি যাচাইয়ের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে গত ১৮ জুলাই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তালিকাটির সঠিকতা যাচাইয়ে জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। নির্দেশনা পেয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস উপজেলার সংশিষ্ট ক্যাচমেন্ট এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দিয়ে তালিকাটি যাচাই করেন। যাচাইকালে দেখা যায়, এই ২১০০ শিক্ষার্থী তালিকার মধ্যে মাত্র ৪০ জন ঝরে পড়া শিক্ষার্থী রয়েছে। আর ১২ জন রয়েছে যাদের এখনো বিদ্যালয়ে যাওয়ার বয়স হয়নি। যাচাইকালে দেখা যায়, ১১ ইউনিয়ন ও চৌগাছা পৌরসভার ৭০টি ক্যাচমেন্ট এরিয়া ধরে সংস্থাটি মোট ২১০০ ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর তালিকা করেছে সেসব এলাকায় পড়েছে ৬৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সংস্থাটির দেয়া তালিকায় দেখানো ২১০০ শিক্ষার্থীর ২০৪৮ জন ক্যাচমেন্ট এরিয়ার এসব প্রাথমিক বিদ্যালয় অথবা পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির নিয়মিত শিক্ষার্থী। তারা নিয়মিত উপবৃত্তিও পাচ্ছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ আগস্ট চৌগাছা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান শিক্ষার্থী জরিপের যাচাই প্রতিবেদন যশোর জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে উর্দ্ধতন কর্তপক্ষের কাছে পাঠিয়েছেন। প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২১০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে এক হাজার ২৫৩ জন শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট ক্যাচমেন্ট এরিয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী। আর ৭৯৫ জন শিক্ষার্থী ক্যাচমেন্ট এরিয়ার বাইরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বা ক্যাচমেন্ট এরিয়ার এবতেদায়ী মাদরাসা অথবা দাখিল মাদরাসায় নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে লেখাপড়া করে। অন্য ১২ জনের বিদ্যালয়ে যাওয়ার বয়স হয়নি। যাচাইকালে জরিপ তালিকায় দেখানো মাত্র ৪০ জন শিক্ষার্থী ঝরে পড়া হিসেবে পাওয়া গেছে। অর্থাৎ এখন এই ৪০ জন শিক্ষার্থীর জন্য উপজেলায় ৭০ টি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। আর সেখানে সরকারের গচ্চা যাবে সাত কোটি টাকার ওপরে।
এদিকে এই জরিপ যাচাই প্রতিবেদন প্রাথমিক শিক্ষা অফিস পাঠানোর পর সংস্থাটি আবারো একটি জরিপ উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোতে জমা দেয়। যে জরিপ তালিকায় স্থানীয় দাখিল, ফুরকানিয়া, হাফেজি ও কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের নাম দেয়া হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
পুনঃতালিকা ফের যাচাইয়ের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসে না পাঠিয়েই কর্মসূচি শুরুর জন্য শিখন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষক নিয়োগের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ফলে সংস্থাটি শিক্ষক নিয়োগের জন্য যে নীতিমালা রয়েছে সে নীতিমালা না মেনে নিজেদের মত করে একটি শিক্ষক তালিকা নিয়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতর তদবির অব্যহত রেখেছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির চৌগাছা উপজেলা সাধারণ সম্পাদক ও স্বরুপদাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহিদুজ্জামান সবুজ বলেন, আমাদের কাছে ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থী যাচাইয়ের যে তালিকা দেয়া হয় তার মাত্র একজন ছাড়া সকল শিক্ষার্থীই আমাদের বিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী। তিনি আরো বলেন, উপজেলার অন্যান্য বিদ্যালয়গুলির শিক্ষকরা আমাকে জানিয়েছেন তারা যেগুলি যাচাই করেছেন তার অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের কাছে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের তালিকা দেয়া হয়েছিলো তা শিক্ষকদের মাধ্যমে যাচাই করে দেখা গেছে তালিকার ১২ জনের বিদ্যালয়ে যাওয়ার বয়স হয়নি। মাত্র ৪০ জন ঝরে পড়া শিক্ষার্থী। অন্য ২০৪৮ জনই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর নিয়মিত শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, যাচাই প্রতিবেদন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়। তবে সম্প্রতি ওই কেন্দ্রগুলো প্রতিষ্ঠার অনুমোদন করে এবং শিক্ষক নিয়োগের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সংস্থাটি নীতিমালা না মেনে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার জন্য আমাদের কাছে প্রতিনিয়ত তদবির অব্যাহত রেখেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রকৌশলী কাফী বিন কবির বলেন, সংস্থাটির পক্ষ থেকে আমার কাছে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে স্বাক্ষর করতে এসেছিলেন। নীতিমালা অনুযায়ী না হওয়ায় তাদের সে নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।