পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিতর্কিত, অডিও-ভিডিও স্ক্যান্ডাল, আদর্শবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত, ভাবমর্যাদা নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আ.লীগ
অপকর্মের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীনরা কঠোর অবস্থানে। দল ও সরকারের ভাবমর্যাদা বিনষ্টকারীদের কাউকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না। তাই বিতর্কিত ও আদর্শবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকা, অডিও-ভিডিও স্ক্যান্ডাল রয়েছে আওয়ামী লীগের এমন নেতারা এখন আতঙ্কে রয়েছেন। কখন কার স্ক্যান্ডাল ফাঁস হয় সে ভয়ে তটস্থ তারা। গত এক মাসে একজন প্রতিমন্ত্রী, একজন সিটি মেয়র ও দুই পৌর মেয়রকে কঠোর শাস্তি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের শৃঙ্খলা না মেনে বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচন করায় দুই শতাধিকের বেশি নেতাকে বহিষ্কার করেছে আওয়ামী লীগ। বর্তমানে কিছু নেতার অপকর্ম, স্ক্যান্ডাল, অতিকথন, ইমেজ ক্ষুন্ন করা, সংগঠনের শৃঙ্খলা না মানা নিয়ে বেশ বিব্রত দিন পার করছে আওয়ামী লীগ সরকার।
‘আওয়ামী লীগের ভিশন-২০২১ : ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের ফলে প্রত্যেক মানুষের হাতে রয়েছে তথ্য প্রযুক্তির ক্ষমতা। হাতে হাতে মোবাইল, ক্যামেরা, ফেসবুক, ইউটিউব। যে কোনো অপকর্মের অডিও রেকর্ড, ভিডিওসহ প্রমাণ ধারণ করা এখন খুবই সহজ। এবং তা ছড়িয়ে দিতে অর্থাৎ ভাইরাল করতেও এখন আর সংবাদপত্রের প্রয়োজন হচ্ছে না; সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই ছড়িয়ে পড়ছে অনেক কিছু। তাই অপকর্ম করে এখন পার পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তবে অপকর্মকারী ব্যক্তিরা ক্ষমতায় থাকার কারণে নানা সময় বেঁচে যান। কিন্তু একটু সমস্যায় পড়লেই অতীতের অপকর্ম সামনে চলে আসে। তাই ক্ষমতার এই পিচ্ছিল পথে স্ক্যান্ডালের সাথে জড়িতরা হঠাৎই যেন বেকায়দায় পড়ে গেছেন। কখন কার অপর্কমের প্রমাণ ভাইরাল হয়ে যায়।
আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত পদবিহীন একজন সিনিয়র নেতা ইনকিলাবকে বলেন, অনেক এমপি-মন্ত্রীর স্ক্যান্ডাল রয়েছে। তারা ক্ষমতায় শক্ত অবস্থানে থাকার কারণে প্রমাণগুলো চাপা রাখা হচ্ছে। কোনোভাবে যদি তারা একটু সমস্যায় পড়ে অথবা সরকার যদি একটু বেকায়দায় পড়ে তাহলে হাজার হাজার স্ক্যান্ডাল এক রাতেই ভাইরাল হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়লেও ডিজিটাল নিরাপত্তা না থাকার কারণে আওয়ামী লীগের ক্ষতিই বেশি হবে। আর দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে অনেকেই ধরা কে সরা জ্ঞান করছেন। ফলে দিন শেষে আওয়ামী লীগ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইমেজ ক্ষুণœ হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা ইনকিলাবকে বলেন, অপকর্মের সাথে জড়িত অনেক নেতাই এখন আতঙ্কে রয়েছেন। কখন কার অডিও-ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। কিন্তু তারা সচেতন থাকেন না, প্রধানমন্ত্রী যে আশা করে তাদের দায়িত্ব দেন তা পালন করেন না। দলের নেতাদের সমস্যা হলো যখন যে-ই কোনো সরকারি দায়িত্ব পান এরপর থেকে দলের আর কাউকে চেনেন না। বেপরোয়া হয়ে উঠেন এবং দুর্নীতিবাজদের সিন্ডিকেটে আবদ্ধ হয়ে পড়েন। দলের হয়ে পদ পেয়েও তখন তারা নিরপেক্ষতা দেখাতে চান। বিরোধী দলের লোকজন কী ভাববে সে চিন্তা করেন এবং তাদের হয়ে কাজ করেন। দলের মতাদর্শ ভুলে যান। এ জাতীয় নেতাদের জন্য দলের ইমেজ ক্ষুণœ হচ্ছে। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এ জাতীয় নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকায় প্রত্যেক নেতাকর্মী খুশি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, ক্ষমতার পালাবদলে আওয়ামী লীগ যদি একটু গর্তে পড়ে তাহলে দল ও সরকারের ইমেজ ধূলিসাৎ হতে একদিনের বেশি লাগবে না। অনেক বড় বড় নেতার বেপরোয়া জীবনযাপনের তথ্য প্রমাণ সামনে চলে আসবে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে। ক্ষমতায় থাকলে অনেক কিছুই চাপা থাকে, তখন আর চাপা থাকবে না।
তিনি বলেন, নারী কেলেঙ্কারি, আওয়ামী লীগের আদর্শবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকা, অনৈতিক অর্থ লেনদেনের ভিডিও সবকিছুই সামনে চলে আসবে।
দলের হাইকমান্ডের নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো অপকর্মকে প্রশ্রয় দেন না। দিন-রাত পরিশ্রম করে তিনি দেশ ও দলের জন্য কল্যাণ বয়ে আনছেন। কিন্তু একশ্রেণির সুবিধাবাদী দল ও সরকারের মধ্যে ঢুকে পড়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে। যার বদনাম আসছে আওয়ামী লীগের ঘাড়ে। কিন্তু যেকোনো অপকর্ম, অন্যায়, দুর্নীতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নিচ্ছেন। অতীতেও এর অনেক নজির রয়েছে। স¤প্রতিও তিনি কাউকে ছাড় দিচ্ছেন না এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক শিষ্টাচারে বিশ্বাসী। দলে কিংবা সরকারে কেউ শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজ করলে তাকে ছাড় দেয়া হয় না, এ কথা শেখ হাসিনা বার বার প্রমাণ করেছেন। যত বড় রাজনৈতিক পরিচয় হোক, অন্যায়-অনিয়ম কিংবা রাজনৈতিক শিষ্টাচার অথবা শৃঙ্খলা বহির্ভূত কাজ করলে দল কখনো তার পক্ষে দাঁড়ায় না। দেশবাসী দেখেছে একজন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বহীন বক্তব্য ও অসদাচরণের জন্য শেখ হাসিনা ছাড় দেননি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগ অশালীন বক্তব্যকে কখনো প্রশ্রয় দেয় না, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। বুয়েটছাত্র আবরার হত্যাকান্ডের রায় প্রমাণ করেছে সরকার আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। অন্যায় করলে তাকে আইনের আওতায় আসতে হবে; আওয়ামী লীগ কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয় না। তিনি বলেন, রাজনীতি করতে হলে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের আদর্শ ও চেতনা মেনে চলতে হবে। রাজনীতি করতে এসে অপকর্মে জড়িত হওয়া যাবে না।
এ প্রসঙ্গে আরেক আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে, আদর্শবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকলে শাস্তি পেতে হবে- এটাই হলো সকলের জন্য বার্তা। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, এটা শুধু আওয়ামী লীগের জন্য নয়, সবার জন্যই সতর্কবার্তা। বাংলাদেশের মানুষের চিন্তা-চেতনার বাইরে গিয়ে নারী বা পুরুষের জন্য মানহানিকর বক্তব্য দেয়ার অধিকার কারও নেই। আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী এমন কাজ করলে তো অবশ্যই শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। কেননা এগুলো আওয়ামী লীগের দলীয় নীতি ও আদর্শের সঙ্গে যায় না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মুরাদ যেসব কথা বলেছে, এসব কথা বলার অধিকার বাংলাদেশের কোনো মানুষের নেই। সব ধরনের অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিরো টলারেন্সে আছেন। যত বড় প্রভাবশালীই হোক না কেন, কোনো অপকর্ম করে কেউ পার পাবে না।
এর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে তিনি মেয়র পদও হারান। এর রেশ কাটতে না কাটতেই রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। অথচ টানা দু’বার তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক এবং জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্যপদ হারান তিনি।
করোনার মধ্যে পাপিয়া-সাহেদ, জি কে শামীম এবং সিলেট-নোয়াখালীর ঘটনাসহ বিভিন্ন জায়গায় দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় দলীয় এমপি হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ইরফান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। এ ঘটনার পর তাকে বহিষ্কার করা হয়। তার শ্বশুর নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করীম চৌধুরী।
এর আগে পাবনার বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে পৌর মেয়র আবদুল বাতেনকে মেয়রের পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে সরকার। আবদুল বাতেন বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হকের ভাই। টানা ২১ বছর বেড়া পৌরসভার মেয়র পদে ছিলেন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কয়েক মাস আগে জেলা আ.লীগ তাকে দলীয় পদ থেকেও অব্যাহতি দিয়েছে। ছোট-বড় এরকম আরো বেশ কিছু ঘটনা আছে।
স¤প্রতি বহিষ্কৃত নেতারাই শুধু নন; এর আগেও যারা দলের নীতি-আদর্শের বিপরীতে গিয়ে প্রভাব খাটাতে চেয়েছেন তাদেরও বিদায় নিতে হয়েছে। ২০১৫ সালে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন রেলমন্ত্রী বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে। তখন ব্যাপক সমালোচনার মুখে তিনি পদত্যাগ করেন। ২০১৪ সালে ধর্মীয় বিষয়ে বেফাঁস মন্তব্যের জেরে দলীয় পদ ও মন্ত্রিত্ব হারান আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। তা ছাড়া অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজুয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটসহ প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।