Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

উপজাতিদের ওপর পুলিশের হামলা ও নারী নির্যাতন

মাদক উদ্ধারের অজুহাত

বগুড়া ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার দাসগ্রামে গত মঙ্গলবার রাতে আদিবাসী-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক মামলা দায়ের হয়েছে। ১০ দিনের এক প্রসূতির কোলে নবজাতক থাকা অবস্থায় পেটে লাগাতার লাথি মেরে মারাত্মক আহত করা, এক নারীর হাত ভেঙে দেয়াসহ একাধিক নারীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে নন্দীগ্রাম থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। রেহাই পেতে উল্টো আদিবাসীদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা দিয়েছে বলেও অভিযোগ নির্যাতিতদের।
তবে থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ দাবি করেন, তারা উপজাতি নন। চোলাই মদ উদ্ধার করতে গেলে তারা পুলিশের ওপর হামলা করে। আহত হয়েছেন ৭ জন পুলিশ সদস্য। ঘটনাস্থল থেকে ১৮ লিটার চোলাই মদ উদ্ধার করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে সংঘর্ষের পর থানার এসআই রেজাউল করিম-১ বাদী হয়ে সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ এনে ৯ জনের নাম উল্লেখসহ ৬০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এছাড়া চোলাই মদ উদ্ধার দেখিয়ে একজনকে আসামি করে আরো একটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়েছে।
দাসগ্রামের আদিবাসী জাম্বু মাহাতো ও আবির মাহাতো বলেন, আদিবাসীদের কন্যার বিয়েতে চোলাই মদ রাখার রীতি আছে। মাদক আইন এবং সরকার আমাদের সেই সুযোগ রেখেছে। শনিবার দুই কন্যার বিয়ে। এ উপলক্ষে সামাজিক রীতি অনুযায়ী বর পক্ষের জন্য বাড়িতে চোলাই মদ রাখা হয়।
আদিবাসীরা অভিযোগ করেন, নন্দীগ্রাম থানা পুলিশের একটি দল আদিবাসীদের বিয়ে বাড়িতে হানা দেয়। সুজন নামের একজনকে আটক করার চেষ্টা করে। আদিবাসীদের বিয়েতে চোলাই মদ রাখার রীতি আছে জানালে থানার এসআই রেজাউল-১, রেজাউল-২, এএসআই মিন্টুসহ পুলিশ সদস্যরা ওসির নামে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে।
প্রত্যক্ষদর্শী উপজাতি নারীরা বলেন, আমরা নারী-পুরুষেরা জমিতে কৃষাণের কাজ করে খুব কষ্টে সংসার চালাই। পুলিশের দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় সুজনকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে তার স্ত্রী (১০ দিনের প্রসূতি) বাধা দেয়। এসময় কোলে নবজাতক থাকা অবস্থায় প্রসূতির পেটে পুলিশ লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেয়। উপস্থিত আদিবাসী নারীরা তাদের সামনে এমন অমানবিক ঘটনা দেখে চুপ থাকেননি। বাধা দিতে গেলে তাদের লাঠিপেটা করে পুলিশ। প্রসূতিকে মাটিতে ফেলে লাগাতার লাথি মেরে মারাত্মক আহত করে। ভক্তি নামের এক নারীর হাত ভেঙে দেয় পুলিশ।
স্থানীয়রা জানান, নন্দীগ্রাম উপজেলার বুড়ইল ইউনিয়নের দাসগ্রাম বৃন্দাবানপাড়ার আদিবাসী জাম্বু মাহাতোর দুই কন্যার বিয়ের প্রস্তুতি চলছিলো। বিয়ে উপলক্ষে আদিবাসী রীতি অনুযায়ী বর পক্ষের জন্য বাড়িতে চোলাই মদ রাখে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে সুজন মাহাতোকে আটক করলেও উপজাতিরা তাকে ছিনিয়ে নেয়। এসময় পুলিশ-উপজাতিরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে। আহত হয়েছেন প্রসূতি সখী সোনা, বৃদ্ধা পুশনি, কাজলী, অন্তরা, মালতি, রেনু, ভক্তি, নয়নী, সাধন মাহাতো, আবির ও হরি। তাদেরকে স্থানীয়ভাবে এবং হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ঘটনার রাতেই দফায় দফায় মিমাংশার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে উপজাতিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন নির্যাতিতরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ