Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বহু বিবাহ : কারণ, যুক্তি ও প্রয়োজনীয়তা

মুফতী পিয়ার মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

পূর্ব প্রকাশিতের পর

দুই
আমরা জানি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমন ছিল পৃথিবী ও পৃথিবীর মানুষের জন্য আর্শীবাদ স্বরুপ। তাঁর আগমনের মূল লক্ষ্যই ছিল আল্লাহর দীনের প্রচার-প্রসার এবং মানুষকে কলুষমুক্ত করে তার মুক্তি সাধন ও আল্লাহর অবতীর্ণ কালামের বাণীকে বিশ্ব মানবের দ্বারে পৌছে দেওয়া। তিনি ইসলামের মহান শিক্ষাকে কথা ও কাজে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। মানব জীবনের এমন কোনো একটি অধ্যায় বা বিভাগ নেই, যেখানে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঐশি আলোয় প্রজ্বোল হেদায়ত ও শিক্ষার প্রয়োজন নেই। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডল থেকে রান্না ঘর পর্যন্ত, জামাতবদ্ধভাবে নামায আদায় করা থেকে শুরু করে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক সম্পর্ক, পরিবার-পরিজনের লালন-পালন, এমনকি পেশাব-পায়খানা ও পবিত্রতা অর্জনের যাবতীয় বিষয়ও তাঁর আলোকিত শিক্ষা ও দিক নির্দেশনায় পরিপূর্ণভাবে বিদ্যামান রয়েছে। তাঁর এ শিক্ষা ও হেদায়াত তো কেবল পুরুষদের জন্য ছিল এমন নয়। নারী জাতির জন্যও ছিল আলাদা ও বিশেষ হিদায়াত ও শিক্ষা। নারী জাতির সাথে বিশেষভাবে সংশ্লিষ্ট বিধান বা মাসআলাগুলো সাধারণত নারীরা নারীদের কাছ থেকে জানতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। পুরুষদের কাছে জানতে লজ্বাবোধ করেন। দ্বিধাগ্রস্ত হোন। এভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পারিবারিক জীবন ও আচার-আচরণের সাথে শরীআতের অনেক বিধি-বিধান সম্পৃক্ত ছিল। যেগুলো কেবল তাঁর জীবন সঙ্গিনীগণের জন্যই জানা সম্ভব। অন্য কোনো নারী বা পুরুষের পক্ষে সেগুলো জানা সম্ভব নয়। এত বিস্তৃত ও বিশাল বিষয়াবলির প্রচার-প্রসার কেবল একজন স্ত্রীর পক্ষে আদৌ সম্ভব ছিল না। এ জন্য প্রয়োজন ছিল একাধিক স্ত্রীর। প্রয়োজন ছিল তাঁর পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবনাচার সম্পর্কে পূূর্ণ ওয়াকেফহাল নারীদের একটি বড় জামাত। যাতে করে তাঁর পারিবারিক জীবনের সমস্ত বিষয়াবলি ও সকল দিক অত্যন্ত নির্ভরশীলতার সাথে ও সন্দেহমুক্ত অবস্থায় পৃথিবীবাসীর সামনে উত্থাপিত হয়। এ জন্যই তিনি বহু বিবাহ করেছিলেন। তাঁর পত্নীগণের মাধ্যমে কি পরিমাণ ইসলামের প্রচার-প্রসার ও খেদমত হয়েছে, তা অনুমান করার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, কেবল মাত্র আয়েশা সিদ্দীকা রা. থেকেই ২২১০ এবং উম্মে সালমা রা. থেকে ৩৭৮টি হাদীস উম্মাহ লাভ করেছে। যা হাদীসের প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ সমূহে লিপিবদ্ধ আছে। দু’শরও অধিক আয়েশা রা. এর ছাত্র ছিলেন। যারা তাঁর কাছ থেকে তাফসীর, হাদীস, ফিকহ ও ফাতওয়া শিক্ষা করেছিলেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামের ইন্তিকালের পর ৪৮ বছর পর্যন্ত তিনি ইসলামী শিক্ষা বিস্তারের কাজে মশগুল ছিলেন। আম্মাজান হযরত উম্মে সালমা রা. এর ইলমী খেদমত সম্পর্কে হাফেজ ইবনুল কাইয়্যিম রহ. ইলামুল মআক্কিয়ীন গ্রন্থে লিখেছেন, ‘যদি হযরত উম্মে সালমা রা. এর বর্ণিত ফাতওয়া ও মাসআলাগুলো একত্রিত করা হয়, তাহলে একটি বিরাট গ্রন্থের রুপ ধারণ করবে। তিনি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের এর বিভিন্ন লোকের প্রশ্নের জবাবে এ সব ফাতওয়া দিয়েছিলেন।’ এখানে দৃষ্টান্ত হিসাবে শুধু মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু’জন স্ত্রীর কথা উল্লেখ করা হলো। নতুবা তাঁর অন্যান্য স্ত্রীরগণের বর্ণিত হাদীস, বিধান ও ফাতওয়ার সংখ্যাও কম নয়। অনেক পত্নীকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিবাহের পশ্চাতে তাদের পরিবারবর্গকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার রহস্যও নিহিত ছিল। [তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন:২/২৭১-২৭২; ৭/১৮৮; সীরাতে মুস্তফা:৩/ ৩৩৯-৩৪০]

তিন
সাহাবী আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই সময়ে তাঁর ৯ জন স্ত্রীর সাথে সহবাস করতেন। কাতাদা রহ. আনাস রা.কে জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি কি এটা পারতেন? উত্তরে আনাস রা. বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামের শরীরে ৩০ জন জান্নাতী পুরুষের শক্তি ছিল। [কাজেই না পারার কি আছে?] [বুখারী, হাদীস:২৬৮] সাহাবী আনাস ইবনে মালেক রা. এর অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম বলেছেন, দুনিয়ার ১০০ মানুষের সমান শক্তি দান করা হবে জান্নাতী একজন পুরুষের দেহে। [তিরমিযী: হাদীস:২৫৩৬] বর্ণিত হাদীস দুটিকে এক করে হিসাব কষলে প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেহে দুনিয়ার ৩ হাজার মানুষের সমান শক্তি ছিল। কারণ জান্নাতী একজন পুরুষের দেহে যদি দুনিয়ার ১০০ মানুষের সমান শক্তি থাকে। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামের দেহে থাকে জান্নাতী ৩০ জন পুরুষের শক্তি, তাহলে ৩০ দিয়ে ১০০ কে গুণ দিলে হয় ৩ হাজার। সে হিসেবে পুরুষপ্রতি একজন করে বিয়ে করলেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামের ৩ হাজার স্ত্রীর প্রয়োজন ছিল। ‘একজন পুরুষ যথাযথ শর্ত সাপেক্ষে ৪ টি বিয়ে করতে পারে’ ইসলামের এই বিধান অনুপাতে তিনি ১২ হাজার বিয়ে করার সক্ষমতা রাখতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। এতে প্রমাণিত হয়, তিনি তাঁর যৌনক্ষুধাকে দুনিয়ার সকল মানুষের চেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রণ করেছেন। সেক্স বা কামক্ষুধা এভাবে নিয়ন্ত্রণ করা অন্য কারো পক্ষে সম্ভব নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের এই সংক্ষিপ্ত চিত্রটি সামনে রাখা হলে কারও পক্ষে এ কথা বলার অবকাশ থাকে কি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বহু বিবাহ কোনো মানসিক বাসনা বা যৌন ক্ষুধা চরিতার্থ করার জন্য ছিল? তাই যদি হয়, তাহলে যৌবনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অবিবাহিত ও প্রমাণিত চারিত্রিক পবিত্রতা অবস্থায় এবং তারপর নিজের বয়সের চেয়ে ১৫ বছরের বড়, কয়েক সন্তানের জননী একজন বিধবা নারীকে নিয়ে পূর্ণ যৌবন অতিবাহিত করার পর জীবনের শেষভাগকে কেন বেছে নেওয়া হলো বহু বিবাহের জন্য? এর সঠিক ও যৌক্তিক কোনো উত্তর কি দিতে পারবেন তাঁর বহু বিবাহের উপর প্রশ্ন উত্থাপনকারী মহোদয়গণ? জানি, পারবে না। তাই আমরা হলফ করে বলতে পারি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বহু বিবাহ করেছিলেন- ১.দীন প্রচারের স্বার্থে। ২. বিধবা ও অসহায় নারীদের আশ্রয় হিসাবে। ৩. পত্নীর পরিবারবর্গকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে। ইত্যাদি ইত্যাদি আরও অনেক কারণে। কামক্ষুধা বা মানসিক কামনা চরিতার্থ করার জন্য নয়। এ মহাসত্যটি কি উপলব্ধি করবেন বিবেক প্রতিবন্ধীরা!

লেখক : প্রধান মুফতী ও সিনিয়র মুহাদ্দিস জামিয়া মিফতাহুল উলূম, নেত্রকোনা



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->