Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

’জাওয়াদ’ সৃষ্ট বৃষ্টি বগুড়া কৃষি অঞ্চলে আশীর্বাদ

মহসিন রাজু | প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:২৬ পিএম

বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলাকে নিয়ে গঠিত বগুড়া কৃষি অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় ’জাওয়াদ’ সৃষ্ট নিম্নচাপের কারনে যে ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হয়েছে তাতে সামগ্রিকভাবে কৃষির জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখছেন স্থানীয় চাষিরা ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বগুড়া কৃষি অঞ্চলের ৬ ডিসেম্বর তারিখের রিপোর্ট মোতাবেক এই ৪ জেলায় রোপা আমন ধানের ৯৫ শতাংশ জমির ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ শেষ হয়েছে । ৪ জেলায় মোট ৩ লাখ ৮১ হাজার ১৭০ হেক্টর জমির রোপা আমনের মধ্যে ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৩৪৯ হেক্টর জমির ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ শেষ হয়েছে।

এখন প্রস্তুতি চলছে বোরো ধানের বীজতলা তৈরীর কাজ। সূত্র মোতাবেক বগুড়ায় ৯ হাজার ২১২ হেক্টরের বিপরীতে ৪ হাজার ১৯৩ হেক্টর, জয়পুরহাটে ৩ হাজার ৪৩০ হেক্টর , পাবনায় ২ হাজার ৭৩২ হেক্টরের বিপরীতে ১ হাজার ৬৪০ হেক্টর এবং সিরাজগঞ্জে ৬ হাজার ৯২৯ হেক্টরের বিপরীতে ৩ হাজার ১৩ সহ মোট ২২ হাজার ৩০৩ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা তৈরীর টার্গেটের বিপরীতে ৯হাজার ৭০৭ হেক্টরে বীজতলা তৈরীর কাজ শেষ হয়েছে। মোট বোরো বীজতলা তৈরীর শতকরা হার ৪৩।

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে বগুড়া ১ দিন সামান্য বৃষ্টি হয় এবং মেঘলা আবহাওয়া ছিল ২ দিন । ৭ ডিসেম্বর বিকেলে বগুড়া আবহাওয়া অফিসে যোগাযোগ করা হলে পর্যবেক্ষক রবিউল ইসলাম জানান, বগুড়ায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে মাত্র ১ মিলিমিটার । একই তারিখে সন্ধ্যায় তাপমাত্রা ( ম্যাক্সিমাম ) ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ।

বগুড়া কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি রবি মওসুমে (শীতকালীন ) বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা ও সিরাজ গঞ্জ জেলায় ৪৪ হাজার ৬৩৮ হেক্টরে শাকসবজী,৯২ হাজার ৪৯৭ হেক্টরে আলু,৮ হাজার ৬৫৭ হেক্টরে মরিচ,৯ হাজার ৯৯৫ হেক্টরে পেঁয়াজ ,১১ হাজার ২৯৮ হেক্টরে রশুন,১ লাখ ১৯ হাজার ৭৪২ হেক্টরে সরিষা, ৩ হাজার ৪০০ হেক্টরে চিনাবাদাম, ১৭ হাজার ৫১৩ হেক্টরে ভুট্টা,১৭ হাজার ৬৪০ হেক্টরে মসুর ডাল,২০ হাজার ৪৩০ হেক্টরে খেসারি,৮৫ হেক্টরে কেশর আলু, ২৩ হাজার ২১৩ হেক্টরে গম,১ হাজার ৬৩০ হেক্টরে মিষ্টি আলু, মাত্র ২৭ হেক্টরে তিশি ও ৬ হেক্টরে ছোলা ,২১৫ হেক্টরে তিল, ১৫১ হেক্টরে সূর্যমুখী , ১১ হেক্টরে মুগডাল, ৬২৫ হেক্টরে মটরদানা,৩৯৮ হেক্টরে কালোজিরা , ৩৫ হেক্টরে তুলা,৩৭ হেক্টরে মৌরী, ১৫৯ হেক্টরে যব,৬২৮ হেক্টরে আখ এবং ৬১৫ হেক্টরে ধনিয়া চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক দুলাল হোসেন জানান, জাওয়াদ সৃষ্ট কারনে যে ধুলি ভেজা বৃষ্টি হয়েছে তাতে বগুড়ায় চাষাবাদে কোনো ক্ষতির কারন হয়ে বরং উপকার বয়ে এনেছে । তবে সামান্য বৃষ্টি চরাঞ্চলের ফসলের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দিয়েছে । শীতের শুরুতে বর্তমানে যে আবহাওয়া বিরাজ করছে শীঘ্রই শীত না বাড়লে আলু , সরিষা এবং গম জাতের ফসলের ফলনে কিছু বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে ।

বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ জুলফিকার হায়দার প্রধান বলেন, জাওয়াদ সৃষ্ট কারনে মেঘলা আবহাওয়া থাকলে আলুর জমিতে ফাংগাস সংক্রমণের ঝুঁকি ছিল । এখন আবহাওয়া পরিষ্কার থাকায় সেই আশংকা আপাতত নেই । মঙ্গলবার দুপরে বগুড়া সদর গাবতলী ও শিবগঞ্জ এলাকায় ঘুরে দেখা যায়। কৃষাণ কিষাণীরা আলু এবং শাকসবজীর জমি পর্যায় ব্যস্ত।

বগুড়া সদরের সাবগ্রামের একটি আলুর জমি পর্যায় ব্যস্ত কৃষক আমির বললেন , সামান্য বৃষ্টিতে আলুর জমি ভিজে গেছে । এতে সেচ দেওয়া আর লাগলোনা । প্রান্তি পর্যায়ের চাষি আমির আলী বলেন , তিনি তার ১ বিঘা জমিতে একই সাথে আলু ও ভুঁই কুমড়া রোপণ করেছেন । আলুর বয়স ৭০ দিন হলে তিনি আলু তুলে জমির মাটি লেভেল করে দেবেন। ততদিনে তার জমিতে লাগানো ভুঁই কুমড়ো গাছে ফুল ও ফল ধরতে শুরু করবে ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ