Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লন্ডন সফরে যেয়ে বেফাঁস মন্তব্য, বরখাস্ত হলেন সিলেট গোলাপগঞ্জের মেয়র রাবেল

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৪৯ পিএম

বেঁফাস বক্তব্য দিয়ে মেয়র পদ হারালেন সিলেট গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল। তাকে করা হয়েছে সাময়িক বরখাস্ত। আজ সোমবার (ডিসেম্বর) স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ সচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ জারি করা হয়। ‘কাজ নিতে গেলে মন্ত্রণালয়ে ৫ পার্সেন্ট আগেই দিতে হয়’- এ বক্তব্যের কারণে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এ ধরনের জনহানিকর বক্তব্য স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ এর ধারা ৩২ এর (খ) ও (ঘ) অনুযায়ী মেয়র পদ থেকে অপসারণযোগ্য অপরাধ। এ আদেশ যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে জারি করা হয়েছে এবং তা দ্রুত কার্যকর হবে বলেও জানানো হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। আমিনুল ইসলাম ছুটি নিয়ে বিদেশে গিয়ে ‘গ্রেটার সিলেট ডেভেলপমেন্ট ফোরাম’ আয়োজিত এক সভায় বক্তব্য রাখেন। ওই সভায় তিনি বাংলাদেশ সরকার, স্থানীয় সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হানিকর বক্তব্য রাখেন। তার এ ধরনের জনহানিকর বক্তব্য স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইনের ধারা মতে মেয়র পদ থেকে অপসারণযোগ্য। প্রসঙ্গত,আমিনুল ইসলাম রাবেল। এক সময় ছিলেন লন্ডন যুবলীগ নেতা। সেখান থেকে এসে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে গোলাপগঞ্জ পৌর নির্বাচনে মেয়র হয়েছিলেন । এরপর গত বছরের নির্বাচনে পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। গোলাপগঞ্জের উন্নয়ন কর্মকান্ডের বরাদ্দের কথা ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী এবং মন্ত্রী-সচিবদের নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। এ নিয়ে তোলপাড় চলছে এলাকায়। নানা সমালোচনা, আলোচনায় বিদ্ধ হচ্ছেন তিনি। তার এই বক্তব্যে ক্ষেপেন নিজ দল আওয়ামী লীগ নেতা ও কাউন্সিলররাও। গত ২৪ নভেম্বর (বুধবার) রাতে লন্ডনে গ্রেটার সিলেট ডেলেপমেন্ট কাউন্সিল এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। এতে উপস্থিত ছিলেন টাওয়ার হ্যামলেটের স্পিকারও। অনুষ্ঠানে মেয়র রাবেল বলেন, ‘বাংলাদেশে যে ইলেকশনগুলো হচ্ছে, সেখানে আমি নৌকার বিরুদ্ধে দু’বারই পাস করেছি। আমি একবার মেয়র ছিলাম বলে মানুষের আস্থা অর্জন করেছি। পরের বার মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছে। আপনারা জানেন নির্বাচনে যে দলীয় প্রতীক পাবেন তাকে পাস করাতেই হবে। এর মাঝেও গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় নৌকা, ধানের শীষ থেকে ৫-৭ গুণ বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছি। একজন প্রবাসী হিসেবে মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছে। আমি প্রবাসীদের মুখ উজ্জ্বল রাখতে কাজ করছি।’ গোলাপগঞ্জের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বিষয়ে মেয়র রাবেল জানান, গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় আমি এখন পর্যন্ত ১০০ কোটি টাকার কাজ করেছি। গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডকে আমি সাজিয়েছি। লাইটিং করেছি। আরিফ ভাই যেভাবে টাউনকে উন্নত করেছেন আমি সেভাবে গোলাপগঞ্জের উন্নয়ন করেছি। আমরা প্রবাসী থাকায় বাংলাদেশের মতো মন-মানসিকতার নয়। এ কারণে কাজ করতে পেরেছি।’ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে চ্যালেঞ্জের বিষয়ে রাবেল অনুষ্ঠানে বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেবকে গিয়ে বলেছিলাম আমি একজন প্রবাসী নির্বাচন করবো। কিন্তু তিনি দেননি। ‘প্রবাসে যাও’- বলে দিয়েছিলেন। আমি তখন চ্যালেঞ্জ করে উনাকে বলেছিলাম- আপনারা যে প্রার্থীই দেন; আমি পাস করবো। আপনার বাংলাদেশি প্রার্থী পাস করাতে পারবেন না। এরপর তিনি আমাকে মনোনয়ন দেননি। আসলে আমাদের বাংলাদেশের মানুষের চরিত্র এখনো ঠিক হয়নি।’ দেশের উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু দুর্নীতি কমছে না- এমন বক্তব্যে উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘দেশ খুব সুন্দর এগিয়ে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ আরও উন্নত হোক- এটা আমরা আশা করি। একজন ভালো মানুষ গোটা দেশকে ভালো করবে সেটি সম্ভব নয়। দেশে এখনো প্রচুর পরিমাণ দুর্নীতি হচ্ছে। আমরা যারা জনপ্রতিনিধি, আমরা তো গিয়ে ফান্ডিং আনি। আমরা মন্ত্রণালয়ে যাই। সচিবালয়ে সচিবদের সঙ্গে মিটিং করি, এলজিইডি মিনিস্টারের সঙ্গে মিটিং করি। তাদের কাছ থেকেই ফান্ড আনতে হয় আমাদের। ওখানে বিরাট একটা পার্সেন্টিজ দিয়ে আনতে হয়। আপনি ১০০ কোটি টাকার ফান্ড নিয়ে আসলেন। সেখানে ৫ পার্সেন্ট আগেই দিয়ে আসতে হয়। এটাই হচ্ছে বাস্তব দিক। একটি বরাদ্দ তিনি ৫ পার্সেন্ট টাকা দিয়ে আনতে হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।’ মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল ছিলেন গোলাপগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি। বিদ্রোহী হয়ে প্রার্থী হওয়ার কারণে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল তাকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ