Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খালেদা জিয়াকে বিদেশে না পাঠালে রাজপথে কোটি মানুষের সমাবেশ ঘটবে : মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ৫:১২ পিএম

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে না পাঠালে রাজপথে কোটি কোটি মানুষের সমাবেশ ঘটবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, দেশনেত্রীকে যদি মুক্ত না করেন, গণতন্ত্রকে যদি মুক্ত না করেন তাহলে কোটি কোটি মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে। তাই কাল বিলম্ব না করে আপনাদের স্বার্থে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে তাকে বিদেশে চিকিৎসা করতে পাঠান। তাকে সুস্থ করে দেশে নিয়ে আসুন। তা না হলে আপনারা পালাবার পথটাও খুঁজে পাবেন না। রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে খালেদা জিয়াকে বিদেশে সুচিকিৎসার জন্য পাঠানোর দাবিতে শ্রমিক দল আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

দুর্যাগপূর্ণ আবহাওয়ায় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যে শ্রমিক দলের কয়েক‘শ নেতা-কর্মীরা ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, দেশনেত্রীর মুক্তি চাই’, ‘খালেদা জিয়ার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’ ইত্যাদি শ্লোগানে সমাবেশস্থল মুখর করে রাখে।

সরকারকে শিক্ষার্থীদের লাল কার্ড প্রদর্শন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ছেলেরা রাস্তায় নেমেছে। সরকারকে লাল কার্ড দেখিয়ে দিয়েছে। কী কারণে রাস্তায় নেমেছে? কারণ আপনারা এতোবছর কথা রাখেননি। এর আগে যখন ছাত্ররা আন্দোলন করেছিলো আপনারা বলেছিলেন যে, সড়ককে সঠিকভাবে চালাবেন। সড়ক তো সঠিকভাবে চালাতে পারছেন না। এটা আপনাদের ব্যর্থতা। আবার বলেন কি যে, এক্সিডেন্ট (রামপুরায়) হলো হঠাৎ করে এতো লোক কোত্থেকে আসলো? আসলো তো আপনাদের ব্যর্থতার কারণে। এখন মানুষের ক্ষোভ এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, আপনারা কোনো কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নাই। তখন তো মানুষ বেরিয়ে আসবেই।

 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তাকে আমরা সন্মান করি, তাকে আমরা অবশ্যই শ্রদ্ধা করি। তিনি কখনোই বিএনপির ভূত ছাড়া আর কিছু দেখেন না। দুঃস্বপ্ন দেখেছেন, সারাক্ষন খালি বিএনপি বিএনপি আর বিএনপি।আরে বিএনপি তো ভয়ে আপনাদের বিএনপি নাকী নাই। বিএনপি যদি নাই তাহলে স্বপ্ন দেখেন কেনো এতো?

শ্রমিক দলকে আরো সংগঠিত হওয়ার আহবান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনাদের আরো বেশি শক্তিশালী হতে হবে, আরো বেশি সক্রিয় হতে হবে। আমাদের শ্রমিক ভাইদের কাছে যেতে হবে, দেশের বর্তমান অবস্থার কথা বলতে হবে। তাদেরকে তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সোচ্চার হওয়ার কথা বলতে হবে। আসুন, আমাদের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বে প্রতীক, আমাদের গণতন্ত্রের প্রতীক, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জীবন রক্ষার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর মুক্তির আন্দোলনে আমরা আরো সোচ্চার হই এবং জনগনের উত্তাল তরঙ্গে মধ্য দিয়ে এই সরকারকে বাধ্য করি দেশনেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে এবং তার উন্নত চিকিতসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠাতে হবে।

 

মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা নির্বাচন নির্বাচন করছেন। নির্বাচন ব্যবস্থাকে আপনারা ধবংস করে ফেলেছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অসংখ্য মানুষ মারা গেলো। আপনাতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন কী? নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। এই যদি নির্বাচন সুষ্ঠু হয় সেই নির্বাচনে মানুষ চায় না, তারা ভোট দিতে চায় না। আজকে সেজন্যই এই নির্বাচন ব্যবস্থা পাল্টাতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে একেবারে ফেলে দিতে হবে। আমরা সুস্পষ্ট করে আমরা বলতে চাই, নির্বাচন কমিশনকেই সরালে হবে না, এই সরকারকে সরে যেতে হবে। নির্বাচনকালীন সময়ে একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন দিয়ে মানুষের ভোটের নির্বাচিত সরকার গঠন করতে হবে। এই নির্বাচন সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য হতে হবে।

দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি ও আয় বৃদ্ধি না পাওয়ায় শ্রমিকদের জীবনমান নি¤œতর পর্যায়ে চলে গেছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য আমাদের। যারা সরকারের আছেন তারা কাদের কথা চিন্তা করেন। তারা চিন্তা করেন বড় মানুষদের কথা। যাদের মিল আছে, ফ্যাক্টরি আছে তাদের প্রণোদনা দেন। ভালো কথা তাদেরকে দেন। কিন্তু যারা মিল-ফ্যাক্টরিগুলো চালায়, যারা গাড়ির চাকা চালায় তাদেরকে আপনারা কোনো প্রণোদনা দেন নাই। যারা পরিবহন শ্রমিক তাদেরকে আপনারা কোনো পয়সা দিয়ে সাহায্য করেননি। ফলে তারা রাস্তায় বেরিয়ে এসেছিলো। কাগজে কলমে বলায় হয় আড়াই হাজার কোটি টাকা নাকী দিয়েছেন। কাকে দিয়েছেন? আপনারা দলের নেতারা ওরা নাম লিখে সেই টাকা পুরোটা নিজের পকেটে ভরে নিয়েছে।আজকে উন্নয়ন উন্নয়ন বলছেন, এই উন্নয়ন কাদের উন্নয়ন হচ্ছে? সাধারণ মানুষের কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না। গরীব আরো গরীব হচ্ছে।

 

ঢাকা মহানগরের উত্তরের আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে যদি বিদেশে চিকিতসার জন্য না পাঠানো হয় তাহলে এই সরকারের অভ্যুত্থান হবেই হবে। শ্রমিক ভাইদের বলব, আরেকটি গণঅভ্যুত্থানের জন্য সর্বাত্মক নিন।আপনারা ভয় পাবেন না।

এই সরকার দূর্বল। তাদের সাথে জনগন নাই। সেজন্য আগামী দিনে রাজপথে নামার জন্য আপনারা প্রস্তুতি গ্রহন করুন।বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একটি শ্লোগান দিয়েছেন- যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ। যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবে তুমি বাংলাদেশ। শহীদ জিয়াউর রহমানের স্বপ্নের বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে, স্বনির্ভর বাংলাদেশ, কল্যাণমুখী বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য সকলে আজ এক হতে হবে।

 

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক আবদুস সালাম বলেন, এখনো সময় আছে, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, তাকে চিকিতসার জন্য বিদেশে পাঠান। আপনি অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে তার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। তানা হলে এবার পালানো সময় পাবেন না। ওবায়দুল কাদেরের ভাই বসিরহাটের মেয়র বলছেন না যে, পালানো দরজা খুঁজি পাইতো নো। ওবায়দুল কাদের নিজে গত নির্বাচনের আগে তার কর্মীদের বলেছিলেন, যদি ক্ষমতায় না আসতে পারো এই লুটপাট করে যা কামাইছো পোটলা বাইধা নিয়ে যাইতো পারবা না। একবার স্মরণ করুন সেই কথা।

শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেইনের সভাপতিত্বে ও প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির হুমায়ুন কবির খান, ফিরোজ-উজ-জামান, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, শ্রমিক দলের সালাহউদ্দিন সরকার, আবুল খায়ের খাজা, মিজানুর রহমান, মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, কাজী আমীর খসরু, খন্দকার জুলফিকার মতিন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ