বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
হোসেন মাহমুদ : বাংলাদেশ প্রকৃতির অনুপম সৌন্দর্যশোভিত এক ভূখ-। আমাদের কবি বলেছেন, ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি/ সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি।’ প্রাচীনকাল থেকে এ দেশে আসা বিদেশিদের অনেকেই এ শ্যামল ভূখ-ের প্রশংসা করেছেন। এ সময়ে প্রায়ই সে প্রশংসা শোনা যায়। তবে যে দেশে প্রকৃতি এত সৌন্দর্য ছড়িয়ে রেখেছে সে দেশের মানুষ হৃদয়ের সৌন্দর্যে যে তত সমৃদ্ধ নয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা নিজেরা পরস্পরের মঙ্গল ও কল্যাণ কামনায় খুব একটা উদার নই। তাই সংকীর্ণ স্বার্থের দ্বন্দ্বে একে অন্যের ক্ষতি ও নিন্দা করায় যেমন সদা সক্রিয় তেমনি সর্বনাশা বিভেদের ঊর্ধ্বে উঠতেও আমরা অপারগ। যেমন সমাজ জীবনে তেমনি রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও এটা আমাদের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে।
ড. আবুল বারকাত বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের একজন। তার বিশেষ পরিচয় তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে ১৯৭৩ সালে প্রথম বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করে মেধাবৃত্তি নিয়ে পড়তে যান সোভিয়েত ইউনিয়নে। সেখান থেকে ফিরে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপনা শুরু করেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি কয়েক বছর জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বেসরকারি একাধিক প্রতিষ্ঠান ও কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত। তার বহু গবেষণা আছে এবং বেশ কিছু গ্রন্থও লিখেছেন। গণজাগরণ মঞ্চের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ৬ ফেব্রুয়ারি শনিবার বিকালে রাজধানীর শাহবাগে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বৈষম্যহীন ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ কোন পথে আমরা?’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা দুই ধরনের। এক ধরন হলো বাই চয়েস, যারা স্বেচ্ছায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। অন্যটি হলো বাইচান্স মুক্তিযোদ্ধা, যারা হঠাৎ সুযোগের কারণে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন। অবৈধ রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ছিলেন বাইচান্স মুক্তিযোদ্ধা।’
লক্ষ্যণীয় যে তিনি এখানে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বলে উল্লেখ করেছেন যদিও আমরা জানি যে, জিয়াউর রহমান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ছিলেন। বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে লে. কর্নেল থেকে জিয়া পদোন্নতি পেয়ে মেজর জেনারেল ও উপ-সেনাপ্রধান হয়েছিলেন। পরে জিয়া লে. জেনারেল হন, অবশ্য তখন ক্ষমতার চাবিকাঠি ছিল তারই হাতে। হতে পারে, ‘অবৈধ রাষ্ট্রপতি’ জিয়ার পদোন্নতি ড. বারকাত স্বীকার করেন না। যদি এটাই তার যুক্তি হয় তাহলে তো এরশাদের রাষ্ট্রপতি ও লে. জেনারেল পদও বৈধ নয়। সেটা তিনি বলেন কিনা জানি না। যা হোক, বিস্ময়কর বিষয় হলো তার জিয়াউর রহমানকে বাইচান্স মুক্তিযোদ্ধা বলায়। এর আগেও আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে জিয়া প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন, তিনি আইএসআই-এর এজেন্ট ছিলেন, তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছেন ইত্যাদি কথা শোনা গেছে। এখানে প্রশ্ন ওঠে যে, জিয়া যদি মুক্তিযোদ্ধা না হয়ে থাকেন তাহলে বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধা কে? তিনি যদি বাইচান্স মুক্তিযোদ্ধা হন তাহলে বাই চয়েসের মুক্তিযোদ্ধা কারা? আসলে যারা এ ধরনের কথা বলেন তাদের কথার ওজন এতই কম যে তা শুনে অনেকেই আর অবাক হন না। এবার ড. বারকাত নিজেকেও সেই ওজনহীন কথা বলিয়েদের দলে শামিল করলেন। তিনি নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে কেন আরেকজন শ্রেষ্ঠস্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাকে বাইচান্স মুক্তিযোদ্ধা বললেন তার কোনো ব্যাখ্যা দেননি। সবার জানা যে, ’৭১-এর ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর হামলার খবর শুনে জিয়াউর রহমান যেভাবে তাৎক্ষণিক সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শনসহ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নেতৃত্ব প্রদান ও অ্যাকশনে গিয়েছিলেন, বাংলাদেশে থাকা আর কোনো বাঙালি সামরিক অফিসার তা করেননি বা পারেননি। সেদিন তিনি সম্পূর্ণ একক সিদ্ধান্তে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন তা ছিল সর্বপ্রথম চরম দুঃসাহসিকতা ও ভয়ংকর ঝুঁকিপূর্ণ। ২৭ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবের পক্ষে জিয়া যে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন তার পেছনে তার নিজেকে হিরো করে তোলার মতো সংকীর্ণ উদ্দেশ্য থাকার কথা তখন জানা যায়নি। আর সেখানে তিনি কোনো ব্যক্তিগত মতলব হাসিল করতেও যাননি, তার নিয়তি তাকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। ২৫ মার্চের যে কাল রাতে ড. বারকাত কুষ্টিয়ায় পৈতৃক বাড়িতে নিদ্রাতুর ছিলেন সে রাতে জিয়া জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তার ভাষায় যিনি ‘বাইচান্স মুক্তিযোদ্ধা’ সেই জিয়া যুদ্ধের গোটা সময়টায় সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্স কমান্ডারের ‘অতি সামান্য!’ দায়িত্ব পালন করেন। তরুণ বারকাত সাহেব হয়তো মুক্তিযুদ্ধে তার চেয়ে আরও বড় কোনো পদাধিকারী ছিলেন ও অধিকতর গৌরবময় অবদান রেখেছেন। আর এখন নিশ্চয়ই কর্ম ও কৃতিতে তিনি জিয়াকে ছাড়িয়ে গেছেন। নইলে জিয়াউর রহমান সম্পর্কে এ রকম তাচ্ছিল্যপূর্ণ ও অবমাননাকর মন্তব্য তিনি করেন কী করে? তিনি তো রাজনীতির ব্যবসায়ী নন। তার কথায় তিনি স্পষ্ট করতে চেয়েছেন যে জিয়া হলেন বাইচান্স মুক্তিযোদ্ধা আর তিনি হলেন বাই চয়েস মুক্তিযোদ্ধা। যে সাহস ও প্রত্যয়ে আজ তিনি এ কথা বলছেন তা কেন তিনি ’৮১ সালের ৩০ মে’র আগে জিয়া বেঁচে থাকতে তার মুখের ওপর বলেননি তা বুঝে ওঠা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আসলে রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত বিদ্বেষের কারণে তার সম্পর্কে মন্তব্য করা এক জিনিস আর দলীয় বিদ্বেষবশত সত্যকে সরিয়ে দিয়ে অকারণে তাকে ছোট করার চেষ্টা আরেক জিনিস। এতে আসলে কে ছোট হচ্ছেন, সে এক প্রশ্ন বটে।
শক্তি ও ক্ষমতা মানুষকে পাল্টে দেয়। কথাবার্তা, আচার-আচরণে পরিবর্তন আসে। শক্তির ওপর আস্থা তাকে দিয়ে এমন কথা বলিয়ে নেয় যা তিনি আগে বলতেন না। যেমন তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ (ইনু) সভাপতি হাসানুল হক ইনু। শনিবার বিকালে বগুড়ার শহীদ খোকন পার্কে জেলা জাসদের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, জাসদকে বাদ দিয়ে কেউ ক্ষমতায় যেতে পারবে না, কেউ ক্ষমতায় থাকতেও পারবে না। হাসানুল হক ইনু একজন পোড় খাওয়া রাজনীতিক। তিনি যা বলেছেন তার গুরুত্ব বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতারাই ভালো উপলব্ধি করতে পারবেন। তবে আম-জনতার কেউ কেউ তার কথায় কিছুটা বিস্ময় প্রকাশ করতেই পারে। যদি এর স্পষ্ট অর্থ এই হয় যে, দেশের অন্যতম বৃহত্তম দল আওয়ামী লীগ জাসদের সাহায্য না হলে ক্ষমতায় আসতে পারত না, তাদের সাহায্য ছাড়া ক্ষমতায় থাকতে পারবে না এবং আগামীতেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না তাহলে আওয়ামী লীগের অবস্থা প্রায় এতিমের সমতুল্য দাঁড়ায়। জাসদ (ইনু) আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সরকারের অন্যতম শরিক। সাধারণ মানুষ এ কথা বুঝতে অক্ষম যে কোনো কারণে যদি জাসদ বর্তমান মহাজোট সরকার ত্যাগ করে তাহলে সরকার কেন ক্ষমতায় থাকতে পারবে না? আর এখন এই রাজনৈতিক উত্তাপবিহীন সময়ে তার এ কথা বলার পেছনে আসল কারণটি কী? তিনি কাকে কী মনে করিয়ে দিতে চাইছেন? এটা কি জাসদ (ইনু)-কে কোনো প্রকার উপেক্ষা না করার জন্য আওয়ামী লীগের প্রতি আগাম হুঁশিয়ারি?
এ কথার পর তিনি তার জিয়া পরিবার-চর্চার ধারাবাহিকতায় আরও নানা কথার সঙ্গে জিয়াকে চতুর্থ মীরজাফর বলে আখ্যায়িত করেছেন। তার এ কথায় কারও মনে হতে পারে যে, এ দেশের ইতিহাস চর্চায়ও তিনি অবদান রাখতে চান। এ দেশের রাজনীতিতে হাসানুল হক ইনুর একটি ভূমিকা আছে। তিনি জিয়া বিষয়ে যা বলছেন তা ভেবেচিন্তেই বলছেন। এর নেপথ্য কারণও বোঝা কঠিন নয়। তবে এ নিয়ে কোনো তর্ক-বিতর্কে যাওয়া বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরর্থক। তাই জিয়া কে ও কী ছিলেন এবং তার অবস্থান কোথায় আর হাসানুল হক ইনু কে ও কী এবং তার অবস্থান কোথায় এবং তার বক্তব্যের সারবত্তা বিবেচনা করে দেখার ভার এ মুহূর্তে আমজনতার ওপর ছেড়ে দেয়া যায়।
বাংলাদেশের কারাগারে দ-ভোগসহ মোট ১৮ বছর আটক থাকার পর ভারতের হাতে প্রত্যর্পণ উত্তরকালে শেষ পর্যন্ত নিজের জন্মভূমি আসামে ফিরে যেতে সক্ষম হয়েছেন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম (উলফা)-এর সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়া। সম্প্রতি আসামের ডিব্রুগড় জেলার জেরাইগাঁওয়ে নিজ বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ উলফাকে সমর্থন করে। তার বক্তব্যকে বিশদ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক মানুষ চায় ভারত ভাগ হয়ে যাক। ভারত দুর্বল প্রতিবেশী হোক। রাজনৈতিকভাবে সচেতন এমন কেউ কেউ চায় শক্তিশালী প্রতিবেশীর চেয়ে দুর্বল প্রতিবেশী থাকলে আমাদের জন্য ভালো হবে। আর এই ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ মানুষের উলফার প্রতি সমর্থন রয়েছে। তারা সাহায্য করতে না পারে কিন্তু সহানুভূতি আছে। সহযোগিতার মানসিকতা আছে। এটা আওয়ামী লীগ বলে কথা না, বিএনপি বলে কথা না এবং জামায়াত বলেও কথা না। এই ৮০ ভাগ মানুষের মধ্যে আওয়ামী লীগের সংখ্যাটা একটু কম।
অনুপ চেটিয়ার এ বক্তব্য এক হিসেবে বিপজ্জনক। এ কথা কারো অজানা নয় যে ভারত তার আঞ্চলিক অখ-তা রক্ষায় যে কোনো পদক্ষেপ নিতে দৃঢ়সংকল্প। উত্তর-পূর্ব ভারতে স্বাধীন রাষ্ট্রসত্তার রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের সব তোড়জোর ভারত কঠোর হাতে দমন করেছে। ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর থেকে পরবর্তীকালে জন্মলাভকারী সব স্বাধীনতাকামী সংগঠনই আজ হয় প্রায় নিষ্ক্রিয় বা সরকারের সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত। এভাবে ত্রিপুরার ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অব ত্রিপুরা (এনএলএফটি), ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম (উলফা), ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট অব বোরোল্যান্ড (এনডিএফবি), নাগা ন্যাশনাল কাউন্সিল ইত্যাদি। ভারতের জন্য কোনো হুমকি নয়, উলফা বা নাগা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কিছু গোপন নিরাপদ আশ্রয় বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তের কোনো কোনো স্থানে ছিল। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদকালে এবং পরবর্তীতে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশ ভূখ- থেকে ভারত বিরোধী সব সশস্ত্র তৎপরতা নির্মূল করেছে এবং যে সব নেতা আটক হয়েছেন তাদের ভারতের হাতে তুলে দিয়েছেন। এভাবে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নবাদী লড়াইয়ের চাপ থেকে পরম বন্ধু বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের কল্যাণে চিরমুক্তি লাভ করেছে নয়াদিল্লি। আসামে এখন কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (কেএলও)-সহ দু’একটি সংগঠন মাঝেমাঝে একটু আধটু নড়েচড়ে বটে, কিন্তু গজরানোর অবকাশ পায় না।
এ পরিস্থিতিতে অনুপ চেটিয়া জেলখানায় ১৮ বছর বন্দী থেকে ভারত সরকার কর্তৃক সে দেশে নিষিদ্ধ সংগঠন উলফার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা কীভাবে আবিষ্কার করলেন তা তিনিই জানেন। বাংলাদেশের অনেক মানুষ চায় ভারত ভাগ হয়ে যাক। ভারত দুর্বল প্রতিবেশী হোকÑতার এসব কথা বলা তো বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে ভারতকে খেপিয়ে দেয়ার প্রয়াস। উল্লেখ্য, অনুপ চেটিয়া এ দেশে দ-িত হলেও তিনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ক্ষতিকর কিছু করেননি। অবৈধ অনুপ্রবেশ ও বিদেশি মুদ্রা রাখার অভিযোগে তিনি এখানে দ-িত হন। এটি এমন কোনো মহাঅপরাধ ছিল না। সরকার ইচ্ছে করলেই কিছু দিন দ-ভোগের পর তাকে ছেড়ে দিতে পারত, ভারতের অসন্তুষ্টির ভয়ে তা করেনি। বস্তুত নিজ জনগণের মুক্তির সংগ্রামে নিয়োজিত থাকাই ছিল অনুপ চেটিয়ার অপরাধ। অনুপসহ অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদী ভারতীয় নেতাদের প্রত্যর্পণ করা ও তাদের এ দেশের গোপন আস্তানাগুলো গুঁড়িয়ে দেয়ায় ভারতের লাভ হয়েছে বিরাট, তবে বাংলাদেশের কোনো লাভ হয়নি। লাভ যা হয়েছে তা বর্তমান সরকারের, ভারতকে খুশি করতে পেরে ক্ষমতায় টিকে থাকার ব্যাপারে অতি প্রয়োজনীয় সমর্থন মিলেছে। আর এটারই প্রতিফলন ঘটেছে ভারতীয় কর্মকর্তাদের বক্তব্যে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সম্প্রতি বলেছেন, ভারত, শেখ হাসিনার সরকারকে সর্বাত্মক সমর্থন দেবে। আর বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের নবনিযুক্ত হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ৭ ফেব্রুয়ারি বলেছেন, নয়াদিল্লি ঢাকার সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয় এবং এই সম্পর্ককে ‘নতুন উচ্চতায়’ নিয়ে যেতে চায়। কেন নেপাল, শ্রীলংকা, মিয়ানমার বা পাকিস্তান কারও সঙ্গে সম্পর্ককে ভারত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার না দিয়ে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা না করে শুধু বাংলাদেশের সঙ্গেই তা করছে তার জবাব কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ভালো দিতে পারবেন।
সবারই জানা যে, ভারত এখন বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বন্ধু। দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বর্তমানে সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে নয়াদিল্লি খুবই আন্তরিক ও সচেষ্ট। এ উচ্চতার কোনো শেষ নেই। দুই দেশের সম্পর্কের উচ্চগামী হতে থাক এবং তা অনন্ত আকাশস্পর্শী হোক। কিন্তু অনেকেরই মনে সেই পুরনো প্রশ্নটিই ঘুরপাক খেয়ে ফিরছেÑতাতে বাংলাদেশের বাস্তব লাভটা কী?
লেখক : সাংবাদিক
যথসধযসঁফনফ@ুধযড়ড়.পড়স
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।