Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চলতি বছরে ৩৪ জন এইডস রোগী চিহ্নিত সিলেটে

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:০৩ পিএম

চলতি বছর এইচআইভি আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত হয়েছেন ৩৪ জন সিলেটে। আর এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছেন ১০২০ জন। এর মধ্যে ৪৩১ জন গেছেন মারা। বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষ্যে সিলেটে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় এসব তথ্য ওঠে আসে। বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষ্যে আজ বুধবার (১ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ব্রায়ান বঙ্কিম হালদার বলেছেন, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এইচআইভি আক্রান্তদের জন্য সব ধরনের সেবা ব্যবস্থা রয়েছে। সাধারণ রোগীর মতোই কোনো ধরনের বৈষম্য ছাড়াই এসব সেবা পাচ্ছেন রোগীরা। ক্ষেত্র বিশেষে বিশেষায়িত চিকিৎসার ব্যবস্থাও আছে তাদের। তবে চিকিৎসা ব্যবস্থা যতই উন্নত এবং সময়োপযোগী হোক না কেন আমাদের কে সবার আগে মনযোগ দিতে হবে এইচআইভির সংক্রমণ প্রতিরোধের উপর। এইরোগ নিয়ে ভীত না হয়ে সচেতন হতে হবে। “সমতার বাংলাদেশ, এইডস ও অতিমারী হবে শেষ” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ওসমানী হাসপাতালে বিশ্ব এইডস দিবস-২০২১ পালিত হয়েছে। দিনের শুরুতে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ব্রায়ান বঙ্কিম হালদারের নেতৃত্বে স্ট্যান্ডিং র‌্যালি কর্মসূচি পালিত হয়। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে সব ধরনের স্ব্যাস্থ্য সুরক্ষার নিয়ম মেনে র‌্যালি সহ পালন করা হয় এইডস দিবসের যাবতীয় কর্মসূচি। কর্মসূচিতে হাসপাতালের বিভিন্ন পর্যায়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, অধ্যাপক, চিকিৎসক, সেবিকাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মচারী ও সেবা গ্রহীতাগণ অংশগ্রহণ করেন। র‌্যালি শেষে হাসপাতালের সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় একটি আলোচনা সভা। হাসপাতলের পরিচালক এবং ইউনিসেফের সহায়তায় পরিচালিত পিএমটিসিটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ব্রায়ানের সভাপতিত্বে ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. মোতাহের হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভার শুরুতে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রদত্ত এইচআইভি সেবা এবং মা হতে শিশুর শরীরে এইচ আইভি সংক্রমন প্রতিরোধ কার্যক্রম পিএমটিসিটি’র সেবা সম্পর্কে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ও এআরটি সেন্টারের ফোকাল পার্সন ডা. আবু নঈম মোহাম্মদ। প্রধান অথিতির বক্তৃতায় উপাধ্যক্ষ অধ্যপক শিশির রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশে এইচআইভি আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবায় প্রভূত উন্নতি হয়েছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে ঔষধ বেশ ভাল কাজ করছে এবং সংক্রান্ত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া খুবই কম হওয়ায় অধিকাংশ রোগীই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছেন। গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাঃ নাসরিন আক্তার তার বক্তব্যে বলেন, এই হাসপাতালে সব গর্ভবতী মায়েদের বিনামূল্যে এইচআইভি পরীক্ষা করার মাধ্যমে আক্রান্ত মায়েদের চিহ্নিত করে যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে এইচআইভির সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায় তাদের বাচ্চাদের শরীরে। পিএমটিসটি কার্যক্রম চলমান রাখার উপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, যেকোন মূল্যে এই সেবা অব্যহত রাখতে হবে। শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ যোগিন্দ্র সিনহা বলেন, এইচআইভি আক্রান্ত মায়েদের সুস্থ সন্তান জন্মদান বাংলাদেশের এইচআইভি সেবা দানের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী ঘটনা।

সিওমেক হাসপাতালের আবসিক চিকিৎসক ডাঃ আবু নঈম মোহাম্মদ তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়ে এইচঅঅইভি আক্রান্ত ব্যাক্তিদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের চিকিৎসা প্রদান করা হয়। ভাইরাল লোড পরীক্ষা করে দেখা গেছে নিয়মিত চিকিৎসার কারণে আক্রান্ত ব্যাক্তিগন এখন অনেক ভাল আছেন এবং করতে পারছেন স্বাভাবিক জীবন যাপন। ইউনিসেফের সহযোগিতায় পরিচালিত “সিলেট বিভাগের বিভিন্ন সরকারী হাসপাতাল সমূহে পিএমটিসিটি সেবা জোরদারকরণ” প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. মোতাহের হোসেন জানান, ২০১৩ সাল থেকে সরকারী হাসপাতাল সমূহে এইচআইভি সেবা প্রদানের সক্ষমতা তৈরীর লক্ষ্যে পিএমটিসিটি প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। প্রকল্পের আওতায় এপর্যন্ত সিওমক হাসপাতালে ৬৭ জন মা সুস্থ সন্তান প্রসব করেছেন। বর্তমানে সিওমকে হাসপাতালে এইচআইভি আক্রান্ত মায়েদের চিকিৎসার একটি ভালো পরিবেশ বিদ্যমান আছে। তবে ধারাবাহিকতা প্রয়োজন এই সেবাটির।

প্রসঙ্গত, সিলেটে এবছর নতুনভাবে এইচআইভি হিসেবে চিহ্নিত হওয়া ৩৪ জন সহ এ পর্যন্ত মোট সনাক্ত হওয়া এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা ১০২০ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৪৩১ জন। বাকীদের মধ্যে ৫৫৮ জন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মৌলভীবাজার জেলা সদর হাসপাতালে অবস্থিত এআরটি সেন্টার হতে নিয়মিত ঔষধ সেবন করে যাচ্ছেন। সরকারি অর্থায়ানে এ রোগীদের মধ্যে ঔষধ এবং অন্যান্য সেবা বিনামূল্যে প্রদান করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি এইচআইভি আক্রান্ত মা হতে শিশুর শরীরে এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধের মাধ্যমে এইচআইভির নতুন সংক্রমণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ইউনিসেফের সহায়তায় এই দুটি হাপসাতালে পিএমটিসিটি প্রকল্প চলমান আছে, এর মেয়াদ চলতি মাসের ৩১ ডিসেম্বও পর্যন্ত।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ