Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তাড়াশে খেজুর গুড় তৈরিতে ব্যস্ত গাছিরা

শামিম হোসেন, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ৩০ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৭ এএম

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে শীত মৌসুমের শুরুতই খেজুর গুড় তৈরিতে পুরোপুরি ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন গাছিরা। ইতোমধ্যে সংগ্রহ করছেন সুস্বাদু ও সুমিষ্টি রস। আর ওই রস থেকে তৈরি করছেন সুস্বাদু খেজুর গুড়ের পাটালী, ঝোলা ও দানা গুড়। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত চলবে তাদের ওই কর্মযজ্ঞ। শীত মৌসুমের শুরুতেই খেজুর রস থেকে গুড় তৈরির জন্য রাজশাহী জেলার বাঘা ও চারঘাট উপজেলা, নাটোর জেলার গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম ও সিংড়া উপজেলা থেকে আসা ৩০ থেকে ৩৫টি গাছির দল তাড়াশের বিভিন্ন এলাকায় এসে তারা তাদের ভাটি স্থাপন করেছেন। এ সময় তারা মাঠ থেকে খেজুর রস জাল দেয়ার জন্য জ্বালানী হিসেবে রোপা আমন ধানের নাড়া (খড়) সংগ্রহ করে থাকেন। অনেক সময় জ্বালানীর সংকট হলে গার্মেন্টের বর্জ্য ঝুট জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করেও থাকেন।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন রাস্তায়, বসতবাড়ি, পুকুর পাড়ে ও পরিত্যাক্ত ভিটে-ভাটিতে অযন্ত অবহেলায় ছোট-বড় প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। এ গাছ থেকে প্রতি বছর প্রায় ১ হাজার ৫০০ মে.টন রস সংগ্রহ হয়ে থাকে। যা থেকে তৈরি হয় ১৫ থেকে ২০ মে.টন খেজুর গুড়। উৎপাদিত এসব গুড় স্থানীয় হাট-বাজার ও পাশের জেলা-উপজেলাগুলোতে বিক্রি হয়ে থাকে। রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার তুলশীপুর (হরিপুর) গ্রামের গাছি মো. পলাশ হোসেন জানান, কার্তিকের মাঝা-মাঝিতে এসে এলাকার খেজুর গাছ মালিকদের কাছ থেকে গাছ প্রতি ৩ কেজি থেকে সাড়ে ৩ কেজি গুড়ের বিনিময়ে খেজুর গাছগুলো লিজ নেয়া হয়। চলতি মৌসুমে প্রতিটি গাছ থেকে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কেজি গুড় তৈরি করা সম্ভব হবে আশা করছি।
এ সময় তারা প্রতিটা দল প্রতিদিন ১শ’ ৫০ থেকে ২শ’ টি পর্যন্ত খেজুর গাছ লাগিয়ে তা থেকে রস সংগ্রহ করে থাকেন। প্রতিটি দলে ৪ থেকে ৫ জন ওই কর্মযজ্ঞ করে থাকেন। উপজেলার দেশিগ্রাম ইউনিয়নের মাঝদক্ষিণা গ্রামের বাসিন্দা মো. আবু নাসের জানান, উপজেলার দেশিগ্রাম, তালম, মাধাইনগর, সগুনা ও নওগা ইউনিয়নে খেজুর গাছ তুলনামূলক বেশি থাকায় ওই সমস্ত অঞ্চলগুলোতে গাছিরা ভাটি স্থাপন করে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন এবং তা থেকে গুড় তৈরি করে থাকেন। তাড়াশ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার রাস্তা-ঘাট বা পুকুর পাড়ে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। তাদের উৎপাদিত গুড় এলাকার চাহিদা মিটিয়ে পাশের জেলা উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে থাকে।
এ ব্যাপারে রানীরহাটের গুড় ব্যবসায়ী মো. জালাল উদ্দিন বলেন, শীতের সময় খেজুর রস গুড়ের বেশ চাহিদা থাকে। এ সময় মানুষ পিঠে, পায়েস খাওয়ার জন্য খেজুর গুড় কিনে থাকেন। এ বছর বাজারে খেজুর গুড়ের দাম একটু বেশি। তারপরও শীত মৌসুমে বাজারে খেজুর গুড়ের চাহিদা অনেকটাই বেশি থাকে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ লুৎফুন্নাহার লুনা জানান, শীত মৌসুমে খেজুরের রস থেকে তৈরীকৃত গুড় সবার কাছেই বেশ সমাদৃত। খেজুর রস থেকে কৃষকের বাড়তি আয় হয়। সে জন্য কৃষকদের বাড়ির আঙ্গিনায়, পুকুর পাড়ে ও ভিটে-ভাটিতে থাকা খেজুর গাছের যত্ন নেয়া প্রয়োজন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ