Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কুড়িগ্রামে ফিডের মূল্যবৃদ্ধিতে পোলট্রি ব্যবসায় মন্দা

কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৫ নভেম্বর, ২০২১, ২:১৬ পিএম

কুড়িগ্রামে হু-হু করে বাড়ছে ফিডের মূল্য বৃদ্ধি, সেই সাথে বাড়ছে ভ্যাকসিনের দাম। মধ্যসত্বভোগীরা উচ্চ ফুনাফার লোভে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়াচ্ছে লেয়ারের বাচ্চার মূল্য। সে অনুযায়ী ডিমের পড়তি দামের কারণে পোলট্রি খামারীদের ব্যবসায় নেমেছে ধ্বস। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বেশ কিছু খামার। এই শিল্প রক্ষায় সরকারকে লেয়ারের বাচ্চা, ফিড ও ঔষধের মূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবী জানিয়েছে খামারীরা।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে ২০০৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক লেয়ার খামারী ব্যক্তিগত উদ্যোগে পোলট্রি ব্যবসা শুরু করে। প্রাথমিকভাবে ব্যবসায় লাভের মুখ দেখলেও ২০১৬ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে ফিড, ভ্যাকসিন ও বাচ্চার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভ কমতে থাকে। সেই সাথে গরমের সময় নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ না থাকায় কলেরা রোগে লেয়ার মুরগীর মড়ক শুরু হয়। পাশাপাশি করোনা আসার ফলে বন্ধ হয়ে যায় বিক্রি বাট্টা। ফলে বিরাট ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হয় খামারীরা। লোকসানে থাকা অনেক খামারী ব্যবসা গুটিয়ে নেয়। কিন্তু বেশিরভাগ খামারী ঋণ করে লক্ষ লক্ষ টাকা লগ্নি করায় তারা না পারছে খামার বন্ধ করতে; না পারছে চালিয়ে যেতে।
জেলায় সবচেয়ে বেশি লেয়ার খামার রয়েছে ফুলবাড়ী উপজেলায়। এখানে প্রায় ৭৪টি খামার রয়েছে। এখানকার বড় খামারী কুরুষা ফেরুষা মলিকার কুটি গ্রামের ধরলা পোলট্রি ফার্মের মালিক ডলার জানান, ২০০৫ সালে ৫লক্ষ টাকা ব্যয় করে কাজী ফার্ম থেকে এক হাজার ব্রাউন জাতের লেয়ারের বাচ্চা দিয়ে ব্যবসা শুরু করি। ২০১৫/১৬ সাল পর্যন্ত আমরা লাভের মুখ দেখি। এজন্য খামার বড় করে বর্তমানে আমার খামারে ২০ হাজার লেয়ার রয়েছে। কিন্তু বিদেশে কাচামালের মূল্য বৃদ্ধির কথা বলে কোম্পানীগুলো ১৬০০ টাকা সিডের বস্তা এখন ২৩০০টাকায় বিক্রি করছে। ফলে প্রতিবস্থায় আমাদের অধিক ৭শ’ টাকা বাড়তি মূল্য দিতে হচ্ছে। ৩০০ টাকার ভ্যাকসিনের দাম হয়েছে ৫৫০টাকা। এছাড়াও ২৫ টাকার লেয়ারের বাচ্চা ফরিয়ারা সিজনে ৬০ টাকা পর্যন্ত দামে সাপ্লাই দিচ্ছে। ফলে আমরা মাঠে মারা যাচ্ছি। আমার খামারে প্রতিদিন ২০হাজার কেজি সিড লাগে। এখন সবকিছুতে মূল্য বৃদ্ধির ফলে মাসে আমার ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। আমার খামারের ব্যবসায় এক কোটি টাকা লগ্নি করা আছে। আমি এখন ব্যবসাও ছাড়তে পারছি না।
পাশর্^বর্তী সাদৃশ্য পোলট্রি ফার্মের মালিক মমিনুল ইসলাম জানান, আমার ফার্মে ৬হাজার লেয়ার জাতের মুরগী আছে। আমি ৬০/৭০ লাখ টাকা লগ্নি করে অবকাঠামো তৈরী করেছি। এনজিও থেকে ঋণ করেছি ৬লক্ষ টাকা। মাসে কিস্তি দিতে হয় ৬০ হাজার টাকা। মাসে ডিম বিক্রি হয় ৯০ হাজার হাজার টাকার মতো। সবকিছু দিয়ে থুয়ে আমার ৩০ হাজার টাকা ঘাটতি থাকে। এই ব্যবসা আমাদের গলার কাটা হয়ে গেছে। এমন অভিযোগ করলেন ওই এলাকার দোয়া পোলট্রি ফার্মের মালিক সিমু, আপন পোলট্রি ফার্মের মালিক ফজলু। তাদের প্রতিবেশী এমদাদুল খামার ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, একটি লেয়ার মুরগীর ১২০দিন পর ডিম আসা শুরু হয়। ১৫০ দিনে ফুল প্রডাকশন শুরু হয়। এসময় গড়ে ৯৮ভাগ মুরগী ডিম দেয়। ৭/৮ মাস পর্যন্ত ফুল প্রডাকশন থাকে। এরপর কমে গিয়ে ৯০ থেকে ৮৫ ভাগে নেমে যায়। ১৭/১৮ মাস পর ৭৫ভাগে প্রডাকশন নেমে গেলে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে মুরগীগুলো মার্কেটে বিক্রি করা হয়। শুরুতে ব্যবসায়ীরা ১হাজার মুরগী দিয়ে ৬/৭ লাখ টাকা আয় করে। বেশি আয় হওয়ায় ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় খামারে বেশি মুরগী উঠিয়ে এখন তারা বিপদে পরেছে। বিশেষ করে করোনাকালিন সময়ে ভাইরাস আক্রমন ও ডিম বিক্রি না হওয়ায় লক্ষ লক্ষ টাকা লোকসান গুণেছেন ব্যবসায়ীরা। তারপর থেকে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না।
বিষয়টি নিয়ে পোলট্রি খামার মালিক সমিতির সভাপতি লিয়াকত আলী লিটু জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে র-ম্যাটারিয়ালসের মূল্য বৃদ্ধি দেখিয়ে কোম্পানীগুলো দাম বাড়িয়েছে। ফলে আমরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। বিষয়টি সরকারের খতিয়ে দেখা দরকার।
ফুলবাড়ী উপজেলার ভেটেনারী সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান জানান, বর্তমানে প্রান্তিক খামারীদের লসের প্রধান কারণ হচ্ছে খাদ্যের ক্রমাগত মূল্য বৃদ্ধি। দেশের বাইরে থেকে আনা কাচামালগুলোর মূল্যবৃদ্ধির কারণে দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরেকটি কারণ হলো একই বয়সের বাচ্চা কিনতে হচ্ছে উচ্চ মূল্যে। দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে তাদের লাভটা বেশি নিশ্চিত করা যাবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
অপরদিকে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল হাই সরকার জানান, করোনা পরবর্তীতে খামারীরা প্রডাকশনে এসেছে। খাদ্যের মূল্য কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিষয়টি আমরা জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় উত্থাপন করেছি এবং সমাধান চেয়েছি। পাশাপাশি আমরা লোকালী ভুট্টা সংগ্রহ করে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ফিড তৈরীর পরামর্শ দিচ্ছি। খামারীরা নিজেরা ফিড তৈরীর উদ্যোগ নিলে গেলে লস কমে যাবে। তারা লাভের মুখ দেখবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ