Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জমজ সন্তান বুকে নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন রুমানা!

ঝিনাইগাতী (শেরপুর) সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০২১, ৬:৪৮ পিএম

বেকার স্বামী, চায়ের দোকানের আড্ডায় দিন কাটে, বেশ ফুরাফুরা। কোন কাজকর্ম নেই। জমজ দুটি কন্যাসন্তান দুনিয়াতে এনে ছেড়ে দিয়েছে মায়ের কোলে। মা এখন কোথায় যায়। বুকের ধন। তাদের তো বাচাঁতে হবে। দিন শেষে নিত্য দিন বাচ্চার দুধ ও নিজের খাদ্য এবং বাকি আরো ২জনের খাবার যোগাতে ভিক্ষা বৃত্তিতে নেমেছেন রুমানা খাতুন। ১০ মাসের জমজ ২টি শিশুকন্যা বুকে নিয়ে ঘুরছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। লক্ষ্য একটাই মেঘ, বৃষ্টি, রোদ যাই থাকুক না কেন আজকের দিনটিতে অনন্ত দুবেলা দুমোঠো ভাত ও বাচ্চা দুটির দুধ যোগাড় করতেই হবে। ভিটে বাড়ীহীন এই হতভাগ্য মা হচ্ছেন, শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার মরিচপুরান ইউনিয়নের গোজাকুড়া শীলপাড়া গ্রামের রুমানা খাতুন (৩০)। এই রুমানা স্বামী মোশারফ হোসেন (৩৮) কে নিয়ে থাকেন খালার বাড়ীতে। নিজেদের জমিজমা বলতে কিছুই নেই। রুমানার সাথে কথা বলে জানা গেছে, সাড়ে তিন বছর হয়েছে বিয়ে হয়েছে। দাম্পত্য জীবনে স্বামী, আড়াই বছরের ছেলে রুমান ও ১০ মাসের জমজ কন্যাসন্তান মারিয়া, ফারিয়া নিয়ে ৫জনের সংসার। বেকার স্বামী মোশারফ হোসেন ইতি পূর্বে ইট খলায় কাজ করতো ও মাঝে মাঝে রিকশাও চালাত। বর্তমানে বছর খানি যাবৎ সে কোন কাজকর্ম করে না। স্বামী বলে কথা, শুধু চায়ের দোকানে বসে টিভি দেখা আর বাজে আড্ডায় মেতে থাকাই যেন তার কাজ। এদিকে সংসার জীবন কিভাবে চলবে তার কোন খেয়াল নেই।
এদিকে স্ত্রী রুমানা প্রতিদিন জমজ দুটি পুষ্টিহীন কন্যাসন্তান বুকে নিয়ে বুকের রক্ত পানি করে ক্লান্ত শরীল নিয়ে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সারা বাজার ঘুরে ভিক্ষা করে চাল, ডাল, বাচ্চার দুধসহ যে টুকু বাজার করে আনে তা আবার দিন শেষে সে নিজেই রান্না করে খাবার তৈরি করে পরিবারের সবাই খায়। এখন সংসারের একমাত্র অবলম্বনই এই রুমানা। আর এভাবেই রোজ সকালে উঠে খাদ্যের সন্ধানে হন্ন্যে হয়ে ঘুরছে। কোন কোন দিন তো মেঘ বৃষ্টির কারণে কিছুই যোগাড় করতে পাড়েনা। সে দিন তাদের থাকতে হয় উপোষ। তার এই বেঁেচ থাকার কঠিন জীবন সংগ্রাম, বাচ্চাঁর মুখে তুলে দেওয়া দুধ কিনতে ও নিজের খাবার জোগাড়ে নিজের জীবন সাথী স্বামী মোশারফ সহযোদ্ধা হয়নি। স্বামী মোশারফ হোসেন তার করা তৈরি খাবার খেয়েই ফুরফুরে মেজাজে থাকছেন আনায়াসে। আর রুমানার বুকে দুটি সন্তান তুলে দিয়ে ভিক্ষা বৃত্তিতে ঠেলে দিয়ে পথে পথে শহরের অলিতে গলিতে ঘুরাচ্ছেন স্বামী মোশারফ। এবস্থায় কিন্তু নিজের ভাগ্য পরিবর্তনে নিরন্তর ছুটে চলা কষ্টের পথ যেন শেষ হচ্ছে না রুমানার। রুমানার ইচ্ছে এত কষ্টের মধ্যেও বাচ্চা তিনটি একুট বড় হলেই কিছুটা চিন্তা মুক্ত হতে পারবে। এদিকে সরকারী কোন সাহায্য-সহযোগীতা ও সে পা”েছ না। অপর দিকে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা হেলেনা পারভিন অবশ্য তার খোঁজ নিয়েছেন কিš‘ু পায়নি কোন সাহায্য-সহযোগীতা।
রুমানা বলেন, আমাকে প্রতিদিন বাচ্চার দুধ কিনতে হয় এবং পরিবারের খাদ্য যোগাতে ভিক্ষা করে যা পাই তাই দিয়ে বাজার করে পরিবারের সবার খাবারের ব্যবস্থা করি। এই ছোট ২টি জমজ সন্তান বুকে নিয়ে সারাদিন ঘুরতে আমার খুব কষ্ট হয়। প্রতিটি দোকানে যাই কেউ দেয় কেউ দেয় না। প্রতিদিন মানুষ ভিক্ষা দিতেও চায় না। এবস্থায় এই দুধের বাচ্চা কার কাছে রেখে আসবো। আর এদিকে দাম্পত্য জীবন নিয়ে স্বামীর সাথে তো নানা কথা হয়ই। কি করবো। বাচ্চার মা তো আমি। কে নেবে এই দায় ভার! আজ স্বামী থেকেও নেই। দেখি আল্লাহ ভাগ্যে কি রেখেছেন। আমি আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই।
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেলেনা পারভীন জমজ কন্যা সন্তানের মা রুমানার ব্যাপারে কথা হলে তিনি বলেন, আমি তার অবস্থা জানতে তাদের বাড়ীতে গিয়েছিলাম। রুমানা সেদিন বাইরে ছিল। তার বেকার স্বামীর সাথে কথা হয়। তাকে কর্ম জীবনে ফেরার জন্য বলা হয়েছে। তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ