বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
লবণ উৎপাদনের নতুন মৌসুম শুরু হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে লবণ চাষীরা যখন উৎপাদনের জন্য মাঠে নেমেছে তখনই বিদেশ থেকে লবণ আমদানী করা হচ্ছে। লবণের কোনো ঘাটতি না থাকা সত্ত্বেও আমদানির বিষয়টি আত্মঘাতী বলেই মনে করছেন লবণ সংশ্লিষ্টরা। গত বৃহস্পতিবার সরকার তিন লাখ ১৬ হাজার মেট্রিক টন লবণ আমদানী করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। লবণ আমদানির সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক ও কক্সবাজারস্থ বিসিকের উপ মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) জাফর ইকবাল ভূঁইয়া। সরকারের লবণ আমদানীর এই সিদ্ধান্ত এখন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বাণিজ্য
মন্ত্রণালয়ে।
এদিকে লবণ আমদানীর সিদ্ধান্ত নিয়েই আজ সোমবার কক্সবাজারে বসেছে লবণ সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভা। সকাল ১০ টায় জেলা প্রশাসনের শহীদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে দেশের অন্যতম লবণ উৎপাদন এলাকার লবণ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সভাটি। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা এবং বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান মোসতাক হাসান এনডিসি।
সভায় চলতি লবণ মৌসুমের সমস্যা ও উৎপাদনের বিষয়ে আলোচনা করা হয় বলে সভা সূত্রে জানা গেছে। তবে গেল লবণ মৌসুমের শুরুতে এরকম আলোচনা বা মতবিনিময় সভার আয়োজন হয়নি। যখন লবণের মাঠ পর্যায়ে দাম সর্বনিন্ন পর্যায়ে পৌঁছে যাবার পর চাষীরা হতাশ হয়ে মাঠ ছেড়ে পালানো শুরু করেছিল তখনই প্রায় শেষ দিকে এসে সরকারি পর্যায়ে মাঠের চাষীদের সান্তনা দেওয়া শুরু হয়েছিল।
সেদিক দিয়ে এবারের মৌসুমের শুরুতে লবণের স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে মতবিনিময় সভাটি অত্যন্ত ইতিবাচ পদক্ষেপ বলে লবণ সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এতে করে মাঠের চাষীদের মনে একটা উৎসাহব্যঞ্জক সাড়া পড়তে পারে। সরকারি এমন উদ্যোগ মৌসুমের শুরুতে হওয়াটার কারণে লবণ চাষীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তদুপরি খোদ শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং লবণ শিল্পের তদারকি সংস্থা বিসিকের চেয়ারম্যান সোমবারের মতবিনিময়ে উঠে আসা সমস্যাদি সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে পৌঁছে দিয়ে লবণ সংক্রান্ত জটিলতার বিষয়াদির সহজ সমাধানেও সহায়ক হবে। তবে এরকম একটি মতবিনিময় সভায় লবণ সংশ্লিষ্টদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা দরকার সবচেয়ে বেশী। যাতে প্রকৃত সমস্যাদি উঠে আসে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে সভার বিষয়টি অবহিত করা হয়নি বলে জানা গেছে। মহেশখালীর বিশিষ্ট ব্যক্তি আনোয়ার পাশা চৌধুরী, চকরিয়ার দরবেশকাটার জামিল ইব্রাহিম, এডভোকেট শহিদুল্লাহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ লবণ চাষীরা মতবিনিময় সভা নিয়ে অবহিত নয় বলে জানিয়েছেন। উল্লিখিত ব্যক্তিদের প্রত্যেকেই প্রায় ২০০ কানি করে লবণ চাষের
জমির মালিক ও চাষী। এসব ব্যক্তিদেরও পরামর্শ হয়তোবা কাজে আসতে পারত।
বাস্তবে যে সমস্যাটা বড় করে দেখা দিতে পারে তা হচ্ছে-লবণ চাষীদের একটি মাত্র আতংক সেটি হচ্ছে ‘আমদানি।' লবণের আমদানির কথা শুনলেই চাষীরা হতাশ হয়ে পড়েন। তাদের ঘুম হারাম হয়ে যায়। আমদানি শব্দটিই যেন লবণ চাষীদের কাছে পাহাড়-পর্বত সমান বলা-মুসিবত। মৌসুমের শুরুতে আমদানির সিদ্ধান্তের কথা শুনলেই চাষীরা আর মাঠে নামতে চায় না। তার কারণ হচ্ছে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করা হলে দেশিয় উৎপাদিত লবণের দাম পড়ে যায়। তথন চাষীরা তাদের উৎপাদিত লবণ বিক্রি করে ন্যায্য মূল্য পয়না। আবার কেউ কিনতে চায় না দেশিয় লবণ। বিদেশী লবণ ধবধবে সাদা। দামেও কম। তাই ভোক্তারা ছুটেন আমদানি করা দেশীয় লবণের পেছনে। এসব কারণে চাষীরা আমদানির বিরুদ্ধে একাট্টা থাকে। চাষীদের মতামত হচ্ছে দেশীয় একমাত্র শিল্পটি বাঁচাতে আমদানি পরিহার করাটাই শ্রেয়। চাষীরা মনে করেন, মৌসুমের শুরুতেই লবণের আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়ার মানেই হচ্ছে-‘গাছের গোড়া কেটে আগায় পানি ঢালার মতই ঘটনা।' চাষিরদের মতে আমদানীর পরিবর্তে চাষিদের সুযোগ সুবিধা বাড়িয়ে মাঠ পর্যায়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করা গেলে সমস্যা থাকেনা।
এসব বিষয় নিয়ে এমপি আশেক উল্লাহ রফিক বলেন,লবণের বিষয়টি আমাদের এলাকার জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল। চাষীরা দাম না পেলে যেমনি সরকারের উপর নাখোশ হন তেমনি আবার বাজারে কোন কারণে সংকট সৃষ্টি হলেও দোষ পড়ে সরকারের ঘাড়ে। তাই সরকার এ বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন রয়েছে। তিনি বলেন, সরকার জাতীয় স্বার্থকেই গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। যদিওবা আমি এলাকার চাষীদের স্বার্থে এমন সময়ে লবণের আমদানির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছি। আমি মনে করি, মৌসুম শেষে এমন সিদ্ধান্তটি সরকার নিতে পারত।'
কক্সবাজারস্থ বিসিকের উপ মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) জাফর ইকবাল ভূঁইয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, চলতি মৌসুমে সরকার লবণের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা আরো এক লাখ বাড়িয়ে ২৩ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করেছে। গেল বছর এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২ লাখ মেট্রিক টন। তবে গত মৌসুমে উৎপাদন হয়েছিল মাত্র ১৬ মেট্রিক টন। ভাগ্যিস আগের বছরের উদ্বৃত্ত ৩ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন ছিল বিধায় কোন রকমে মৌসুম শেষ করা গেছে কোন আমদানি ছাড়াই। তিনি জানান, গত ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত মাঠ পর্যাযে লবণের মওজুদ রয়েছে প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন। তাই মৌসুম শুরু হলেও উৎপাদন ব্যাহত হবার আশংকায় তিন লাখ ১৬ হাজার মেট্রিক টন লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত সরকার নিয়ে রেখেছে। তাও সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হলেও সেই লবণ দেশে আসতে জানুয়ারি মাসের শেষ হয়ে যেতে পারে।
টেকনাফের সাবরাং এলাকার লবণ চাষী মোহাম্মদ শফিক মিয়া বলেন, ইতিমধ্যে টেকনাফ ও কুতুবদিয়া সহ উপকুলের চাষীরা মাঠে নেমে গেছে। সাবরাং এলাকায় আগামী সপ্তাহান্তে মাঠের নতুন লবণ বাজারে উঠার সম্ভবাবনা রয়েছে। তাই এমন সময়ে লবন আমদানি করা না হওয়াটাই চাষী ও উৎপাদনের জন্য ভাল হবে বলে তিনি মত দেন।
এছাড়া কুতুবদিয়া থেকে শুরু হয়েছে লবণ উৎপাদন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জেলার ৭০ হাজার একর লবণ উৎপাদন এলাকায় একযোগে লবণ উৎপাদন শুরু হয় তাই লবণ ঘাটতির কোনো আশঙ্কা নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।