Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

উৎপাদনে যাচ্ছে নাটোর সুগার মিল

আখ চাষে কৃষকদের অনীহা

মো. আজিজুল হক টুকু, নাটোর থেকে | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৪ এএম

প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম আখ পাওয়ার ঝুঁকি নিয়ে আসামি ৩ ডিসেম্বর থেকে চলতি মওসুমের উৎপাদনে যাচ্ছে নাটোর সুগার মিল। খাদ্য ও চিনি কর্পোরেশনের বরাত দিয়ে নাটোর সুগার মিল কর্তৃপক্ষ জানায় এবার ৪ হাজার ৫৩০ একর জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে এবং ৩ লাখ মে.টন আখ মাড়াইয়ের বিপরিতে ৯৭ হাজার মে.টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চিনি আহরণের হার ধরা হয়েছে ৭.৬০%। অথচ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাটোর সুগার মিল সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায় এই মওসুমে সাড়ে ৪ হাজার একর জমিতে আখ হাষ করা হয়েছে। আখ উৎপাদন ৯২ হাজার মে.টন ধরলেও ৫০ হাজার মে.টনের বেশি আখ উৎপাদন হবে না তবে প্রকৃতপক্ষে আখের উৎপাদন ৩০ হাজার মে.টন। এতে চিনি উৎপাদন হতে পারে দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার মে.টন। এবার আখ মাড়াই কার্যক্রম ৬৫ দিন চলার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ৪৫-৫০ দিনের বেশি মিল চালানো কঠিন হয়ে পড়বে এবং প্রয়োজনীয় পরিমাণ আখের অভাবে তার আগেই এ কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে নাটোর সুগার মিল সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
আগের দিনগুলোতে মাঠে পর্যাপ্ত আখ থাকার প্রেক্ষিতে ৪-৫ মাস ধরে মিল চালু থাকতো। সে সময় প্রতি মওসুমে এ সুগার মিলকে কেন্দ্র করে এতদ অঞ্চলে কমপক্ষে ১শ’ কোটি টাকার অর্থনৈতিক লেনদেন সম্পন্ন হতো। কিন্তু এখন সে অবস্থা আর নেই। অন্যান্য ফসলের তুলনায় কম লাভ হওয়ার কারণে আখচাষিরা এখন আখ চাষ ছেড়ে দিয়ে অন্যান্য লাভজনক ফসল উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছে। ১৮ মাস মেয়াদী আখ চাষ করে একজন আখচাষি প্রতি বিঘায় খরচ বাদে পাচ্ছেন ১২-১৩ হাজার টাকা। অথচ ঐ একই সময়ে একই জমিতে ধান, গম, ভুট্টা, পাট বা অন্যান্য ফসল চাষাবাদ করে কৃষক পাচ্ছেন ৪৫-৫৫ হাজার টাকা।
জাঠিয়ান অঞ্চলের কৃষক বাবর আলী জানান আগে আখ চাষ করতাম। প্রথম প্রথম আখের উৎপাদন বেশি হলেও পরবর্তীতে আখের উৎপাদন কমে যায়। ফলে লাভ হয় না দেখে ছেড়ে দিয়ে ধান, গম, ভুট্টা, মসুর, পাট চাষ করি।
কেন্দ্রীয় আখ চাষি ফেডারেশনের সহ-সভাপতি মো. মোসলেম উদ্দীন বলেন- ১ বিঘা আখ উৎপাদন করে যে দাম সুগার মিল দেয় তাতে কোন পরতা পড়ে না বা লাভ হয় না। কৃষক যেদিকে লাভ হবে সেদিকে যাবে। আখ উৎপাদন করতে ১৮ মাস সময় লাগে। এসময়ে ১ বিঘা আখ উৎপাদন করে বিক্রি করে পাওয়া যায় ২০ হাজার টাকা। তা থেকে সার-কীটনাশক, জমি লীজ, বীজ ক্রয়, জমি নিড়ানি, আখ কাটাই বাবদ যে খরচ হয় তা বাদ দিয়ে সর্বসাকূল্যে থাকে ৫ হাজার টাকা। সেখানে একই জমিতে অন্যান্য ফসল যেমন ধান, ভুট্টা, গম, মসুর ইত্যাদি ৩ বার চাষ করা যায়। এতে কৃষক পায় ৪৫-৫৫ হাজার টাকা। তারপর সুগার কর্পোরেশন আখ নেওয়ার পর যে টাকাটা আখ চাষির পাওনা থাকে তা পরিশোধ করতে দীর্ঘদিন সময় লাগে। আথচ অন্যান্য ফসলে নগদ অর্থ পায়।
নাটোর সুগার মিলের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মো. আবু বকর বলেন, এবার এই মিলের আওতাধীন জমিতে ৫০ হাজার মে.টনের বেশি আখ উৎপাদন করা যায় নি। তবে আখের মূল্যবৃদ্ধি, সময়মত প্রয়োজনীয় সার সরবরাহ ও মিলে আখ সরবরাহের সাথে সাথেই আখের মূল্য পরিশোধ করা হলে চাষিরা আবার আখ উৎপাদনে আগ্রহী হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ