পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কে হচ্ছেন বাংলাদেশের পরবর্তী প্রধান বিচারপতি? এবারের নিয়োগ কি সিনিয়রিটির ভিত্তিতে হবে নাকি সুপারসিড (সিনিয়রিটি লঙ্ঘন) করে দেয়া হবে এ পদে নিয়োগ- এ প্রশ্ন এখন বিচারাঙ্গনের মানুষের মুখে মুখে। বয়স ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় আগামী ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। দীর্ঘতম সময়ের এই প্রধান বিচারপতির শেষ কর্ম দিবস ৩০ ডিসেম্বর।
এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট সাংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদের এখতিয়ার বলে নিয়োগ দেবেন পরবর্তী প্রধান বিচারপতি। আপিল বিভাগ থেকেই দেয়া হবে দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি নিয়োগ। সৈয়দ মাহমুদ হোসেন অবসরে গেলে আপিল বিভাগে থাকছেন চার বিচারপতি। তারা হলেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ননী এবং বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে বিচারপতি নিয়োগে সুনির্দিষ্ট কোনো বিধি নেই। নির্দিষ্ট বিধি নেই প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রেও। এখন পর্যন্ত হাইকোর্ট, আপিল বিভাগ এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগ চলছে সংবিধানের আলোকে। প্রধান বিচারপতি নিয়োগ সম্পর্কে সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগ দান করিবেন।’ এ বিষয়ে সংবিধানে বিস্তৃত কিছু নেই।
বিচারপতি এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়টি এখনও রীতি-রেওয়াজ আশ্রিত। দীর্ঘদিনের চর্চিত রীতি অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট আপিল বিভাগে কর্মরত বিচারপতিগণের মধ্য থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেন। মহামান্য প্রেসিডেন্ট আপিল বিভাগের যে বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেবেন তার বিষয়ে সম্মতি দিয়ে প্রথমে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবেন। মন্ত্রণালয় থেকে ওই বিচারপতির ব্যাপারে ফাইল তৈরি করে তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরের পর বিষয়টি প্রেসিডেন্টের কাছে যাবে। প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের পর প্রধান বিচারপতি নিয়োগের গেজেট প্রকাশ করবে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
তবে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ না দেয়া হলে কিংবা প্রধান বিচারপতির পদটি ‘শূন্য’ হলে বিচার কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে প্রধান বিচারপতি তার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বলে রাষ্ট্রপতির কাছে সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হলে ক্ষেত্র মতে অন্য কোনো ব্যক্তি অনুরূপ পদে যোগদান না করা পর্যন্ত বা প্রধান বিচারপতি স্বীয় কার্যভার পুনরায় গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারকের মধ্যে যিনি কর্মে প্রবীণতম, তিনি অনুরূপ কার্যভার পালন করবেন।’
সংবিধানের এ দু’টি অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সিনিয়রিটি প্রাধান্য পেয়ে আসছে। কিন্তু সিনিয়রিটি লঙ্ঘন করে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার নজিরও দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে অনেক রয়েছে। যদিও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের মতে, আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা উচিত। প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সিনিয়রিটির নীতি অনুসরণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। সাবেক এ আইনমন্ত্রী বলেন, বিচার প্রশাসনে শৃঙ্খলা আনার জন্য সিনিয়রিটির ভিত্তিতে শুধু প্রধান বিচারপতি নয়- আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রেও সিনিয়রিটির নীতি অনুসরণ করা উচিত। সংবিধানও সিনিয়রিটির ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের রীতির প্রতি সমর্থন রয়েছে।
একই প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে সংবিধানে অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ব্যাপারে যিনি কর্মে প্রবীণতম তার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। যা বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন। তাই রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে যেকোনো বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিতে পারেন।
বাস্তবতা হচ্ছে, স্বাধীন বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসে এ পর্যন্ত ২২ জন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পেয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত: ৮ জনের নিয়োগের ক্ষেত্রে সিনিয়রিটি লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় ২ বার, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় একবার এবং আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে অন্তত: ৫ বার সিনিয়রিটি লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস. কে. সিনহা পদত্যাগ করলে সেবছর ২ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি আবদুল ওয়াহাব মিঞাকে সুপারসিড করে আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়। ওই নিয়োগের কয়েক ঘণ্টা পর পদত্যাগ করেন আবদুল ওয়াহাব মিঞা।
সিনিয়রিটি লঙ্ঘনের রেওয়াজটি শুরু হয় ২০০৩ সালে বিএনপি’র সরকার আমলে। তারা বিচারপতি এমএম রূহুল আমিন ও মোহাম্মদ ফজলুল করিমকে সুপারসিড করে বিচারপতি কেএম হাসানকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়। পরবর্তীতে অবশ্য উভয়েই প্রধান বিচারপতি হন। বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম পরপর চার বার সুপারসিডেড হন।
আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এসে ২০০৯ সালে প্রথম আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগের সুযোগ পায়। ওই বছর মার্চ মাসে বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান ও বিচারপতি মো. আবদুল আজিজকে ৮ মার্চ এবং বিচারপতি বিজন কুমার দাস, বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক, বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন ও বিচারপতি এস কে সিনহাকে নিয়োগ দেয়া হয় ১৬ জুলাই। ২০০৯ সালের ২২ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি এম এম রূহুল আমিন অবসরে যান। এ সময় আওয়ামী লীগ প্রথম কোনো প্রধান বিচারপতি নিয়োগের সুযোগ পায়। ওই সময় আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি মো. ফজলুর করিমকে প্রধান বিচারপতি করে। তিনি অবসরে গেলে বিচারপতি তাফাজ্জাল ইসলামের প্রধান বিচারপতি হওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে- এ চিন্তা থেকে ২০০৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর তাকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়। ২০১০ সালে অবসরে যান বিচারপতি তাফাজ্জাল ইসলাম। ওইবছর ৭ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মো. ফজলুল করিম প্রধান বিচারপতি হন। ২০১০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর অবসরে যান তিনি।
পরে কে হবেন প্রধান বিচারপতি- এ প্রশ্নে ধারণা করা হয়েছিল বিচারপতি এমএম মতিন সেটি হচ্ছেন। কারণ, তিনি প্রধান বিচারপতি হলেও সিনিয়র বিচারপতি হিসেবে এবিএম খায়রুল হকের প্রধান বিচারপতি হতে কোনো সমস্যা ছিল না। কয়েক সপ্তাহ পরই বিচারপতি এম এ মতিনের অবসরে যাওয়ার তারিখ ছিল। কিন্তু বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ও বিচারপতি এম. এ. মতিনকে এক সঙ্গে একই বেঞ্চে আর দেখা যায়নি। প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১১ সালের ১৭ মে অবসরে যান এবিএম খায়রুল হক।
তার আগেই সিনিয়রিটি লঙ্ঘন করে বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়। ওই সময় সিনিয়র ছিলেন বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান। কিন্তু তাকে নিয়োগ না দেয়ায় ওইবছর ১২ মে আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।