রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
‘বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ফসলি জমিতে চাষ করে জীবন ধারণ করি, অথচ প্রভাবশালী ইটভাটার মালিকরা প্রভাব দেখিয়ে সেই ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটার কাজে ব্যবহার করে আমাদের পেটে লাথি মারছে, প্রতিবাদ করলে অত্যাচার করছে।’ এইভাবে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলেন আনোয়ার হোসেন।
সদর উপজেলার পাচখোলা গ্রামের মৃত আবদুল লতিফ ফকিরের ছেলে আনোয়ার হোসেন এভাবে ইটভাটায় তার জমির ক্ষতির বিবরণ দিয়ে বলেন, আমার পৈত্রিক ৩০ শতাংশ জমির মাটি জোরপূর্বক কেটে ইটভাটার মালিক স্থানীয় রহিম খান অনেক ক্ষতি করেছে। শুধু আনোয়ার হোসেনই নয় এভাবে ওই এলাকার অনেকের ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে ইটভাটার কাজে ব্যবহার করে অনেককেই সর্বশান্ত করেছে ইটভাটার কতিপয় মালিক। তার ধারাবাহিকতায় মাদারীপুরে প্রতিবছর কৃষি জমি দখল করে গড়ে উঠছে নতুন নতুন ইটভাটা। ভাটার আগ্রাসনে হারিয়ে যাচ্ছে ৪ ফসলি জমি। ফলে দিন দিন উৎপাদন কমছে এই জেলায়।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর জেলার মোট ১ লাখ ১২ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমির মধ্যে ৮০ হাজার হেক্টর কৃষি জমি হিসেবে চিহ্নিত। এরমধ্যে অতি ঊর্বর ১ ফসলি জমি ১০ হাজার ৬৭৯ হেক্টর, দুই ফসলি জমি ৪৯ হাজার ৭২৬ হেক্টর, ৩ ফসলি জমি ২০ হাজার ১২৪ হেক্টর ও ৪ ফসলি ফসলি ২৫০ হেক্টর। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, প্রতি বছর এ কৃষি জমিতে উৎপাদিত খাদ্যশষ্য জেলার বার্ষিক চাহিদা পূরণ করেও উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।
মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, কৃষি ও কৃষি জমি বিনষ্টের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ইটভাটা। বিগত এক দশকে মাদারীপুরের অতি ঊর্বর ৪ ফসলি ১২ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমির মধ্যে ৮০ হাজার হেক্টর কৃষি জমির এক দশমাংশ জমিতে গড়ে ওঠা শতাধিক ইটভাটা প্রত্যক্ষভাবে ধ্বংস করেছে কৃষি জমি। এছাড়া ভাটার দূষণ ও বিরূপ প্রভাবে আশপাশের জমির ফসলহানি হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছরই বাড়ছে ভাটার সংখ্যা। আর এসব ইটভাটার বেশির ভাগই স্থাপন করা হচ্ছে ফসলি জমি বা এর পাশ ঘেঁষে। তার ওপর ভাটার মালিকদের আগ্রাসনের শিকার হন গরীব দু:খী কৃষিনির্ভরশীল অসহায় মানুষ।
মাদারীপুর জেলা জজকোর্টের এড. শরীফ মো. সাইফুল কবীর জানান, ইট প্রস্তুত ও ভাটা নিয়ন্ত্রন আইন ২০১৩ এর ৮(১) (ঘ) তে বলা আছে কৃষি জমিতে কোন ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। শুধু তাই নয় ওই আইনের ৩(ক)তে বলা হয়েছে নিধারিত সীমা রেখার (ফসলি জমি) ১ কিলোমিটারের মধ্যেও কোন ইটভাটা করা যাবেনা। তাছাড়া বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ ভাটা মালিকরা লংঘন করছে বলে অভিযোগ।
এদিকে সদর থানার পাচখোলা গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো কয়েকজন জানায়, স্থানীয় ইটভাটার মালিক রহিম খান ভাটায় ইট প্রস্তুতের জন্য জনৈক আনোয়ার হোসেনের ৪ ফসলি জমির মাটি জোরপুর্বক কেটে নিয়েছে। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভ্রাম্যমান আদালত ভাটার মালিককে মোটা অংকের আর্থিক জরিমানা করেছে। এরপরও ফসলি জমি মাটি কেটে নিচ্ছে ভাটা মালিক বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
সরেজমিনে জানা যায়, মাদারীপুর ৪টি উপজেলায় বর্তমানে লাইসেন্স প্রাপ্ত ৭৪টি ভাটা থাকলেও অবৈধ ইটভাটাসহ শতাধিক ইটভাটা রয়েছে।
এদিকে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর তদন্ত করে ইটভাটা স্থাপনের ছাড়পত্র দিলে জেলা প্রশাসন সে মোতাবেক লাইসেন্স প্রদান করে। তবুও ফসলি জমিতে ইটভাটা ও অবৈধ ইটভাটা স্থাপন করেছে এমন তথ্য পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপন বা ফসলি জমির মাটিকাটা প্রসঙ্গে ইটভাটা মালিকদের সাথে কথা বলতে চাইলে সাংবাদিকদের সাথে তারা কথা বলতে রাজি হয়নি বিধায় তাদের কোন মতামত পাওয়া গেলো না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।