Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বান্দরবানে ৪৪ কোটি টাকার পানি সরবরাহ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর

বান্দরবান থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০২১, ১২:৫৪ পিএম

বান্দরবান পৌরসভাসহ তিন উপজেলা সদরে পানি সরবরাহ প্রকল্পের মেয়াদ সম্ভাব্যতা যাচাই ও মূল্যায়নেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডিপিএইচই) সোয়া ৪৪ কোটি টাকার এ প্রকল্পটির ২০২২সালের জুনে মেয়াদ শেষ হবে। কিন্তু প্রকল্পের কাজ শুরুর জন্য বিশেষজ্ঞ সংস্থার সম্ভাব্যতা ও মূল্যায়ন প্রতিবেদনটি পেতে আরও ছয় মাসের বেশি সময লাগতে পারে। বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত কোনো অবকাঠামো নির্মান কাজ শুরু করা যাচ্ছে না বলে ডিপিএইচই প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন। এদিকে প্রকল্পের তিন উপজেলা সদরে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা স্থাপনের মধ্যে আলীকদম উপজেলায় ২০১১ সালেও ডিপিএইচই কাজ করেছে। তখন দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে দুই পরিশোধনাগার অর্ধনির্মিত রেখে আর কোনো কাজ করা হয়নি। ১০ বছর ধরে পরিত্যক্ত ওই প্রকল্পে এবারে ৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সোয়া ৪৪ কোটি টাকার এ প্রকল্পে জেলা শহরে, দুর্গম থানচি এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়ন ও ১৫টি গণ শৌচাগার নির্মান করা হবে। কিন্তু এসব কাজে কোথায় কী অবকাঠামো হবে- স্থান নির্ধারণ, নক্সা তৈরি ও কাজের অংশ বিশেষে ব্যয় বিভাজনের কোনো কিছুই প্রকল্পে উল্লেখ করা হয়নি। একারণে সম্ভাব্যতা যাচাই এবং মূল্যায়নের জন্য বিশেষজ্ঞ সংস্থা নিয়োগ করতে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে বলে জনস্বাস্থ্য নির্বাহী প্রকৌশলী শর্মিষ্ঠা আচার্য জানিয়েছেন। জনস্বাস্থ্য জেলা দপ্তরের নথি পত্রে জানা যায়,‘বান্দরবান পৌরসভা, তিনটি উপজেলা সদরে পানি সরবরাহ ও শৌচ ব্যবস্থা উন্নয়ন নামের প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশন গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর অনুমোদন দিয়েছে। প্রকল্পে খাত ওয়ারি ব্যয় বরাদ্দে কোনো স্পষ্টতা নেই। বান্দরবান পৌরসভা ও আলীকদম উপজেলা সদরে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। বান্দরবান পৌরসভায় বিদ্যমান পানি সরবরাহ ব্যবস্থা সংস্কার অথবা নতুন নির্মান কোনো কিছু উল্লেখ নেই। আলীকদম উপজেলা সদরে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়নের ব্যাপারেও আগের (২০১১ সালের) পরিত্যক্ত প্রকল্পের কী হবে তা বলা হয়নি। শুধু পাম্প ক্রয়, বুষ্টার পাম্পহাউস ও ভূগর্ভন্ত দেয়াল নির্মান, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ও বাঁধ স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। প্রকল্পে তিন উপজেলা সদরে কাজের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কাজের বিভাজনে আলীকদম ছাড়া দুই উপজেলার নাম নেই। প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন থানচিতে ১২ কোটি ও নাইক্ষ্যংছড়িতে ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা স্থাপন হবে। বিভিন্ন আকৃতির (সাইজ) ২৯ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপনের উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু জেলা ও উপজেলা সদরে কোথায় কত কিলোমিটার পাইপ লাইন টানা হবে বলা হয়নি। এছাড়া পুরো প্রকল্পে অনির্ধারিত ব্যয় এক কোটি ৬৫ লাখ টাকা, প্রশিক্ষণ আয়োজনে সাড়ে ২৫ লাখ, সম্মানি ও পণ্য পরিসেবা খাতে সোয়া ৩৩ লাখ এবং বিশেষজ্ঞ পরামর্শক সংস্থার জন্য ৫৬ লাখ অর্থাৎ এক কোটি ১৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। কিন্তু কী প্রশিক্ষণ হবে,কাদের জন্য সম্মানি, অনির্ধারিত ব্যয়ে সম্ভাব্য খাত সম্পর্কে কোনো কিছু উল্লেখ নেই।
সরেজমিনে আলীকদমে গিয়ে থানার পাড়ার একটি টিলায় অর্ধনির্মিত দুইটি পুরনো পরিশোধনাগার দেখা গেছে। সেখানে সম্প্রতি পাইপ লাইন বসানো হয়েছে। এলাকার মনিরুজ্জান .নুরন্নাহার বেগম, মিনু আক্তারসহ নারীরা সবাই বলেছেন পানির হাউস করার ১১ বছর পরে পাইপ এসেছে। আরও কত বছর পরে পাম্পহাউস হবে ও পাম্প আসবে তাঁদের জানা নেই। মার্চ থেকে মে, তিন মাসে তীব্র সংকটে শুধু পানির সংগ্রহের জন্য তাঁরা কোনো কাজ করতে পারেন না।
আলীকদম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম জানান জনস্বাস্থ্যর পানি সরবরাহের আশা তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। এজন্য তীব্র পানির সংকট কিছুটা হলেও লাঘবের জন্য নিজে গভীয় নলকূপ বসিয়ে সরবরাহের চেষ্টা করছেন।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মান কাজ কখন শুরু ও শেষ হবে জানাতে পারেননি। তাঁরা জানিয়েছেন প্রকল্পের প্রস্তাবনা তৈরির আগে কোথায় কী অবকাঠামো দরকার, নক্সা তৈরি এবং কাজের কোন অংশের একক ব্যয় সম্পর্কে সম্ভাব্যতা যাচাই ও মূল্যায়ন করা হয়নি। সহকারি প্রকৌশলী ও প্রাক্কলক খোরশেদ আলম বলেছেন অবকাঠামো নির্মানের স্থান ও প্রাক্কলন নির্ধারণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বিশেষজ্ঞ সংস্থা নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। ছয় মাসের মধ্যে তাঁদের বিস্তারিত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা। তাঁদের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে জায়গা অধিগ্রহন ও অবকাঠামো নির্মানে দরপত্র আহ্বান করা হবে।
বান্দরবানের জনস্বাস্থ্য নির্বাহী প্রকৌশলী শর্মিষ্ঠা আচার্য বলেছেন প্রকল্পের মেয়াদ জুন পর্যন্ত হলেও আরও বাড়ানো হবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে সম্ভাব্যতা যাচাই ও মূল্যায়ন কাজ শেষ করা যায়নি। এজন্য কাজও শুরু করা যায়নি। তবে জেলা শহরে ও আলীকদমে পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ চলছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ