দীর্ঘ দিন পর আবারও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কাছে সাগরে ডলফিনের দৌড়ঝাঁপ উপভোগ করেছেন স্থানীয়রা। শুক্রবার ও শনিবার ভোর সকালে কক্সবাজার সৈকতের কাছাকাছি ডলফিনের ছুটাছুটির এই দৃশ্য ধারণ করেন সৈকতের জেটস্কি চালক সোনা মিয়া। কয়েক মিনিট ধরে তিনি ডলফিনের সঙ্গে খেলায় মেতে ছিলেন বলে জানান।

স্থানীয়দের মতে, ভোরে সৈকতে পর্যটকদের আনাগোনা থাকে কম । এই সময়টাতেই সৈকতের লাবণী থেকে কলাতলী পয়েন্টের সমুদ্রের একটু দুরে দেখা মিলছে ডলফিন পালের। কখনো দুই একটা করে আবার কখনও দল বেঁধে সাগর পানিতে সাঁতার কাটা ও ডোব দিয়ে খেলায় মেতে ছিল ডলফিন দল।
লাইফ গার্ড কর্মীরা বলছেন, শীত মৌসুমে সমুদ্রের মাছ চলে আসে সাগরের কিনারায়। ডলফিনও মাছ শিকারে সমুদ্র পাড়ের কাছাকাছি চলে আসে।

স্থানীয় জেলেদের ভাষ্যমতে, গত বছর লকডাউনে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে কিছু ডলফিন খেলা করতে দেখা গেছিল। এরপর কোথাও উধাও হয়ে যায়। পরে গত দুইদিন ধরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আবারো ডলফিনের বিচরণ চোখে পড়ে।
জেলেদের মতে গভীর সাগরে মাছ ধরতে গেলে মাঝেমধ্যে ঝাঁকে ঝাঁকে ডলফিনের দেখা মেলে। বিশেষ করে শীত মৌসুমের শেষের দিকে এসব ডলফিনের দল সাগরে ঘুরে বেড়ায়। গত ২ থেকে ৩ বছর আগেও একবার এসব ডলফিন সাগর উপকূলের কাছাকাছি চলে আসতে দেখা গেছে। তবে এটা অহরহ ঘটে না।
পেঁচারদ্বীপ এলাকার জেলে রুহুল আমিন জানান, সাগরে ডলফিন নতুন কিছু নয়। তবে উপকূলের কাছাকাছি চলে আসায় স্থানীয়দের মধ্যে কৌতূহল জমেছে। গত বছরও হিমছড়ি এলাকায় সাগর উপকূলের কাছাকাছি চলে আসতে দেখেছি ডলফিন। সাগরে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পানিতে ডলফিনের দল সাঁতর কেটে বেড়ায়।

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপুর মতে স্তন্যপায়ী এই প্রাণীটি বহু জাতের হয়। তবে সমুদ্র উপকূলে যা দেখা যায়, তা মূলত শুশুক জাতের ডলফিন।
তিনি জানান, ডলফিন মূলত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ পানিতে বিচরণ করে। ফলে স্বচ্ছ পালিতে এসব স্তন্যপায়ী প্রাণী গুলো খেলায় মেতে উঠে।
বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বায়োলজিক্যাল ওশানোগ্রাফি বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু
সাঈদ মুহাম্মদ শরীফ বলেন, “কক্সবাজারের সোনাদিয়া মহেশখালী বঙ্গোপসাগর চ্যানেলে দুটি ডলফিন পরিবার দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে। একেকটি পরিবারে ১০/১২টির বেশি ডলফিন থাকে। সাগরে মূলত এগুলো দল বেঁধে চলাফেরা করে। বর্তমানে চ্যানেলগুলোতে প্রতিনিয়ত তাদের দেখা মেলে। ডলফিন সবসময় নিরিবিলি পরিবেশ পছন্দ করে। হতে পারে সকালবেলা নীরবতার সুযোগে সাগরের লাবনী পয়েন্টে চলে এসেছে।
এদিকে গতবছর জলদস্যুদের হাতে ২টি ডলফিন মারা পড়েছিল। নিরীহ এই সামুদ্রিক প্রাণী হত্যায় তখন নিন্দার ঝড় উঠেছিল।