পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চলন্ত বাস থেকে ফেলে হত্যা করা হয় ফুল বিক্রেতা দশ বছরের শিশু মরিয়ম আক্তারকে। গত ৯ নভেম্বর সকালে রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কের বিপরীত পাশে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার চারদিন পর রাইদা পরিবহন বাসের চালক রাজু ও হেলপার ইমরানকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই শিশুটিকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে গ্রেফতারকৃতরা। গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর ও টঙ্গী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গতকাল শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। র্যাব কর্মকর্তারা জানান, মরিয়ম ফুল বিক্রির পাশাপাশি মানুষের কাছে সাহায্য চেয়ে বেড়াতো। ঘটনার দিন সে সাহায্য চাইতে বাসটিতে উঠেছিল। হেলপার এসময় তাকে বলে, ‘এটা গেটলক বাস’ বলে বাসের গেট খুলে চলন্ত বাস থেকে মরিয়মকে ফেলে দেয়া হয়। এতে গুরুতর আহত অবস্থায় ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরবর্তী সময়ে স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে শিশুটির বাবা রনি মিয়া জানতে পারেন ভাটারা থানাধীন এলাকায় একটি মেয়ে মৃত্যু হয়েছে। ওইদিন বিকালে তিনি মেয়ের লাশ শনাক্ত করেন। পরে এই ঘটনায় রাতেই অজ্ঞাত গাড়িচালককে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পরবর্তী সময়ে র্যাব এই ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে। এসময় র্যাব ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসিটিভি ছাড়াও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে। এরপরই শিশুটির মৃত্যু রহস্য উদঘাটন হয়।
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার আল মঈন বলেন, মরিয়ম তার পরিবারের সঙ্গে খিলক্ষেতের কুড়াতলী এলাকায় বসবাস করত। তার বাবা রনি একজন প্রাইভেটকার চালক। মরিয়ম ২০১৯ সালে স্থানীয় একটি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। তবে অর্থের অভাবে তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সে বিভিন্ন জায়গায় অর্থ সহায়তা পাওয়ার উদ্দেশ্যে কুড়িল ও আশপাশের এলাকায় ঘোরাঘুরি করত। ঘটনার দিন সকালে মরিয়ম বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় পথচারী ও বাস যাত্রীদের কাছে ঘুরে ঘুরে সাহায্য চাচ্ছিল।
র্যাব মুখপাত্র বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে মরিয়ম হেঁটে হেঁটে ফুটওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তা অতিক্রম করে যমুনা ফিউচার পার্কের বিপরীত পাশে আসে। এরপর সে রাইদা সিটিং সার্ভিস নামক একটি পরিবহনের বাসে ওঠে। বাসটি সামনে যেতেই একজন পথচারীকে হাত দিয়ে ইশারা করতে থাকে। সিসিটিভি ক্যামেরার এক ফ্র্রেমের ঠিক পেছনে ভিকটিম মরিয়মকে আহত অবস্থায় পাওয়া যায়। সিসিটিভি ক্যামেরার অবস্থান এবং সময় বিবেচনা করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এখানেই মৃত্যু হয় মরিয়মের।
তিনি আরো বলেন, অর্থ সহায়তা চাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসটিতে উঠেছিল মরিয়ম। কিন্তু ভিকটিমের বাসে উঠা এবং পড়ে যাওয়ার কোনো সিসিটিভি ফুটেজ না পাওয়া যাওয়ায় ঘাতক বাসের ড্রাইভার এবং হেলপারকে শনাক্ত করতে গোয়েন্দা কার্যক্রম এবং নজরদারি আরো বৃদ্ধি করা হয়। এরপরই পৃথক অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা নির্মম, হৃদয় বিদারক অকাল মৃত্যুর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে।
গ্রেপ্তার দুজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, ড্রাইভার রাজু মিয়া এবং হেলপার ইমরান হোসেন প্রতিদিনের মতোই রাইদা পরিবহনের একটি বাস (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৯০২২) নিয়ে পোস্তগোলা থেকে দিয়াবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করে। সকালে স্বল্পসংখ্যক যানবাহন ও যাত্রী কম থাকায় তারা দ্রুতবেগে গাড়ি চালাচ্ছিল। বাসটি প্রগতি সরণি যমুনা ফিউচার পার্কে পৌঁছালে মরিয়ম বাস যাত্রীদের কাছে সাহায্য চাইতে গাড়িতে ওঠে। হেলপার ইমরান হোসেন এসময় যাত্রীদের কাছে ভাড়া নিচ্ছিলেন। ইমরান তখন চালককে বলেন, একজন ছিন্নমূল পথশিশু গাড়িতে উঠে অর্থ সাহায্য চাচ্ছে। তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিতে চালক রাজুকে গাড়ির গতি কমাতে বলেন। এসময় মরিয়মকে দরজার কাছে গিয়ে নেমে যেতে বলা হয়। চালক রাজু কিছুদূর না যেতেই আবার থামতে বলায় বিরক্ত চালক বাসের গতি হালকা কমিয়ে, মরিয়মকে তাড়াতাড়ি নামতে বলে। মরিয়ম তাড়াহুড়ো করে নামার সময় হঠাৎ বাসচালক জোরে চালানো শুরু করেন। এতে মরিয়ম বাসের দরজার থেকে ছিটকে রাস্তায় পড়ে গুরুতর আহত হয় এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এদিকে অবস্থা বেগতিক দেখে চালক গাড়ি না থামিয়ে দ্রুতবেগে দিয়াবাড়ির দিকে চলে যায়। এরপর পোস্তগোলায় হাসনাবাদের একটি বাস ডিপোতে গাড়িটি রেখে, দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর বিষয়টি কাউকে না বলে আত্মগোপনে চলে যায়।
বাসটির চালকের সঠিক কাগজপত্র ছিল কি-না জানতে চাইলে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে তাদের সব কাগজপত্র সঠিক ছিল। এছাড়াও বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী সময়ে আমরা তদন্ত করব। বাসটি গেটকল সার্ভিস ছিল। তাই মেয়েটিকে হেলপার প্রেসার করেছিল, যেন দ্রুত নেমে যায়। নিহত মরিয়ম বাস থেকে নামানোর সময় বাসের গতি ছিল প্রায় ৪০ কিলোমিটার। এতে সে বাস থেকে রাস্তায় পড়ে মারা যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।