Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিদেশিদের নিরাপত্তায় শিথিলতা কাম্য নয়

প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইফতেখার আহমেদ টিপু
কূটনীতিক ও বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা সম্পর্কে এক মতবিনিময় সভায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেছেন, ঢাকার কূটনৈতিক এলাকা এখন শতভাগ নিরাপদ। সরকারের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়টিও তিনি বিদেশি কূটনীতিক ও ব্যবসা প্রতিনিধি দলের সদস্যদের সামনে তুলে ধরেন।
কূটনৈতিক এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন, সার্কুলার বাস ও রিকশা সার্ভিস চালু করা এবং নগর অ্যাপ সম্পর্কে তিনি উপস্থিত রাষ্ট্রদূত ও বিদেশি ক্রেতাদের অভিহিত করেন। বিদেশি কূটনীতিক এবং ব্যবসা প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের মোকাবিলা ও বিদেশিদের নিরাপত্তা দানের ক্ষেত্রে সরকারের এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন। সিটি করপোরেশনের নানা উদ্যোগকেও তারা ইতিবাচক হিসেবে মূল্যায়ন করেন।
এর আগে গত ২৮ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক মেগা প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা জোরদারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে র‌্যাব-পুলিশকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়। ওইসব উন্নয়নমূলক কর্মসূচির (পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প ইত্যাদি) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিদেশিদের আবাসস্থল, বিচরণক্ষেত্র এবং তাদের পরিবারবর্গের নিরাপত্তা জোরদার করতেও বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশিদের সন্তানরা যেসব স্কুলে অধ্যয়নরত সেসব স্কুলের নিরাপত্তা জোরদার করতেও বলা হয়।
সম্প্রতি বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য, ঘটনাপ্রবাহ অনুসরণ, জঙ্গি নেটওয়ার্ক পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি এবং বিশ্লেষণ থেকে ধারণা করা যায় কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনা বা বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠী বাংলাদেশে এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে যাতে দেশের উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিদেশিরা নিরাপত্তাহীনতার কারণে এদেশ ত্যাগে বাধ্য হয়। যা উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে জঙ্গিগোষ্ঠী পদ্মা সেতুর উন্নয়ন কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য পদ্মা সেতুর নির্মাণ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট স্থানে জঙ্গিবাদী কর্মকা-ের নামে সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী অসৎ উদ্দেশ্যে নাশকতামূলক কর্মকা- পরিচালনা করতে পারে বলেও বলা হয়।
বিদেশি কূটনীতিকদের মতে, সরকার ও সিটি করপোরেশনের গৃহীত পদক্ষেপে আস্থার পরিবেশ ফিরে আসছে। পুরোপুরি আস্থা সৃষ্টিতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। বিদেশি ক্রেতারা যেসব এলাকায় তাদের প্রায়শই যেতে হয় সেসব এলাকার নিরাপত্তা বিধানের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার পর কূটনীতিক ও বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে নিরাপত্তাজনিত যে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছিল সরকার ও সিটি করপোরেশনের নানামুখী উদ্যোগে তার অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে।
বাংলাদেশে কখনই সন্ত্রাসবাদের স্থান হবে না। প্রতিটি খুনের সঙ্গে জড়িত খুনিদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে কূটনীতিকদের এমন দৃঢ়তার কথা তুলে ধরা হয়েছে। সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপে সন্তুষ্ট বলেও কূটনীতিকরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। সরকারের বিচক্ষণতা, প্রতিশ্রুতি নিয়ে আমাদের সংশয় নেই। এখন কাজের মাধ্যমেই এর প্রমাণ দিতে হবে।
সর্বোপরি বলতে চাই, বিদেশিদের নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক জননিরাপত্তা নিশ্চিতেও কঠোর হওয়া আবশ্যক। কেননা, নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হওয়ার আশঙ্কা অমূলক নয়। গুলশানের হলি আর্টিজানের হামলার মতো মর্মন্তুদ ঘটনা দেশবাসী কখনো ভুলে যেতে পারবে না। ফলে বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কাও তাই উড়িয়ে দেয়া যায় না। আমরা মনে করি, এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর ও সতর্ক অবস্থানও জরুরি। কোনো অপশক্তিই যেন পার না পায় সে ব্যবস্থা সরকারকেই নিতে হবে।
আশা করা হচ্ছে এর ফলে কূটনীতিক ও বিদেশিদের আস্থা অর্জনের পরিপূরক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সরকার ও সিটি করপোরেশনের পক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হবে। বাঙালিরা ঐতিহ্যগতভাবে অতিথিপরায়ণ জাতি হিসেবে পরিচিত। সে পরিচিতি অক্ষুণœ রাখতেই কূটনীতিকসহ বিদেশিদের নিñিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জাতীয় কর্তব্য হিসেবেই বিবেচিত হওয়া উচিত।
ষ লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক দৈনিক নবরাজ



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদেশিদের নিরাপত্তায় শিথিলতা কাম্য নয়
আরও পড়ুন