Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আজকের শিশু জাতির সোনালি ভবিষ্যতের স্থপতি

প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হেলেনা জাহাঙ্গীর
দেশের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে শিশুদের জন্য সুষ্ঠু কার্যক্রম গ্রহণ অপরিহার্য। প্রত্যেক শিশুকে দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্ঠায় সকলের অংশগ্রহণ একান্ত বাঞ্জনীয়। শিশুরাই দেশের ভবিষ্যত কর্ণধার। জাতিকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে শিশুদের উন্নয়নের সার্বিক কার্যক্রম অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গ্রহণ ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
একজন মা তার সন্তানকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার সবচেয়ে নিখুঁত কারিঘর। বাবা হতে পারেন মায়ের যোগ্য সহকর্মী। একজন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষকের চেয়ে পিতামাতা তার সন্তানের সুপ্ত প্রতিভার খোঁজ বেশি রাখেন। যে সন্তানের যেদিকে ঝোঁক থাকে তাকে সে পথে চলতে দেয়াটাই উত্তম। বিখ্যাত মনীষী হওয়ার জন্য, বিশ্বের সবার কাছে শ্রদ্ধেয় হওয়ার জন্য ডাক্তার আর ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার খুব বেশি প্রয়োজন পড়ে না। অর্থবিত্ত উপার্জনের পেছনে সন্তানদের লেলিয়ে দিলে তার পরিণত অনেকক্ষেত্রে মঙ্গল বয় না। অর্থ ক্ষণকালের নিরাপত্তা দিতে পারে হয়ত কিন্তু মানব চিত্তের স্থায়ী সুখ তার সহজাত বৃত্তির বিকাশের মধ্যেই লুকায়িত।
এ+ কে সন্তানের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয়ার মত ভুল সিদ্ধান্ত অন্তত আদর্শ পিতামাতার গ্রহণ করা উচিত নয়। সন্তানকে বইয়ের পাতায় লুকিয়ে আর কোচিংয়ের মধ্যে ডুবিয়ে রেখে ভালো রেজাল্ট হয়তোবা করানো যাবে কিন্তু তার যে বহুমুখী প্রতিভা থাকে সেগুলো মূলেই ধ্বংস করে দেয়া হয়। সন্তানকে সৃজনশীল হতে সাহায্য করুন। তাকে খেলতে দিন, হাসতে সাহায্য করুন। অনুধাবন করতে দিন জীবনের প্রকৃত অর্থ। সন্তানকে প্রকৃতির সাথে মিশতে দিন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার শান্তি নিকেতন প্রতিষ্ঠা করেই বলেছেন, ‘আমি আকাঙ্খা করি, গাছপাল ও পাখি ওদের শিক্ষার জন্য যথেষ্ট হবে’।
জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের অধীনে (অনুচ্ছেদ-৩৪, শিশু আইন) মতে, শিশুর হেফাজতের দায়িত্বে নিয়োজিত কোন ব্যক্তি শিশুটির প্রতি কোন অমানবিক আচরণ করতে পারবে না বা শিশুটিকে অরক্ষিত অবস্থায় কোথাও ফেলে রেখে যেতে পারবে না এবং এ ধরনের অবহেলার মাধ্যমে যদি শিশুটির ক্ষতি হয় তাহলে সেটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে শিশু আইনে বিবেচিত হবে।
জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের অধীনে শ্রম আইনে শিশুর অধিকার: ঝুঁকিপূর্ণ ও শিশু শ্রমে নিয়োগ নিষিদ্ধ স্থানে নিয়োগ থেকে সুরক্ষা, শ্রম বিষয়ে বন্ধকী চুক্তি থেকে রক্ষা, কর্মজীবী শিশু হিসেবে বিশেষ সুবিধা, কর্মজীবী মায়ের সন্তান হিসেবে শিশু কক্ষ।
দেশে শিশু নির্যাতনের ঘটনা ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের টনক তেমন একটা নড়ছে না। এই নিষ্পৃহতার জন্যই সমাজে শিশু নির্যাতন না কমে বরং বাড়ছে। নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ার কারণেও মানুষ সতর্ক হচ্ছে না, বিবেক কথা বলে না। তবে আমার আশা, অসহায় শিশু-কিশোরদের প্রতি মানুষ একটু সহানুভূতিশীল হবেন এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করবে।
পারিবারিক আইনে শিশুর: ভরণপোষণ, শিশুর হেফাজত, সঠিক প্রতিপালন। প্রতিটি শিশুই জšে§র পর যথাযথ সেবা পাবার অধিকারী। শিশুরা একটি জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার বিধায় শিশুর প্রতি যতœ নেবার ব্যাপারে দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিটি ব্যক্তিকেই শিশুর বিকাশে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবার ব্যাপারে সতর্ক হতে শিশু আইনের এ ধারাটি নির্দেশনা দেয়।
প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারলে আজকের শিক্ষার্থীরা দায়িত্ব নিতে পারবে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের। কিছু কিছু ঘটনাকে শুধু বর্তমানের মধ্যে সীমিত ভাবলে ভুল ভাবা হয়। শিক্ষার মতো ক্রমবিকাশমান ক্ষেত্রটির বেলায় এ কথা শতভাগ প্রযোজ্য। কারণ এক্ষেত্রের বাধা-বিপত্তি, ত্রুটি-বিচ্যুতির মধ্যে ভবিষ্যতের বিপদ-আশঙ্কা লুকায়িত থাকে। তাই বলছি শিশুদের শিকলে বেঁধে রাখা তাদের মানবাধিকারের লঙ্ঘন। এটি দেশের প্রচলিত আইনেও দ-নীয় অপরাধ।
শিশুরা হচ্ছে জাতির ভবিষ্যৎ এবং একই সাথে সমাজের সবচেয়ে দুর্বল অংশ। শিশুর প্রতি ব্যবহারে সতর্কতা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আজকের শিশু জাতির সোনালি ভবিষ্যতের স্থপতি। সুন্দর কল্যাণকর জাতি গঠনের জন্য প্রয়োজন এমন সুন্দর পরিবেশ যেখানে জাতির ভবিষ্যৎ স্থপতিগণ সকল সম্ভাবনাসহ সুস্থ, স্বাভাবিক ও স্বাধীন মর্যাদা নিয়ে শারীরিক, মানসিক, নৈতিক, আধ্যাত্মিক এবং সামাজিকভাবে পূর্ণ বিকাশ লাভ করতে পারবে। এ জন্য প্রয়োজন শিশুর অধিকার সম্বলিত উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন এবং তার সফল বাস্তবায়ন।
ষ লেখক : চেয়ারম্যান, জয়যাত্রা ফাউেন্ডশন



 

Show all comments
  • Satyajit Das ১১ নভেম্বর, ২০২০, ৭:৫৪ এএম says : 0
    ভালো লাগলো । আমার ধন্যবাদ আপনাকে ।
    Total Reply(0) Reply
  • Satyajit Das ১১ নভেম্বর, ২০২০, ৭:৫৫ এএম says : 0
    ভালো লাগলো । আমার ধন্যবাদ আপনাকে ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আজকের শিশু জাতির সোনালি ভবিষ্যতের স্থপতি
আরও পড়ুন