Inqilab Logo

বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বৈজ্ঞানিক কোনো মেথড মানা হয়নি

জ্বালানি তেল আগের দামে ফিরিয়ে নেয়ার সুপারিশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

করোনাভাইরাসের অর্থনীতির ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে মানুষ যখন মরিয়া; তখন জ্বালানি তেল ডিজেল ও কেরোসিনের যে দাম বৃদ্ধিকে অযৌক্তিক উল্লেখ করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি সরকারের কাছে জ্বালানি তেল আগের দামে ফিরিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করেছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, জ্বালানির দাম বৃদ্ধিতে বৈজ্ঞানিক কোনো মেথড মানা হয়নি। কেরোসিন ও ডিজেলের দাম বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যুক্তিসংগত নয়। সরকারের নীতিমালার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়, নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এটা রাজনৈতিকভাবে এটা কোনো আলোকিত সিদ্ধান্ত নয়। গতকাল বুধবার ‘জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি কতটুকু প্রয়োজন ছিল?’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির পক্ষ থেকে এ সুপারিশ এবং অভিমত তুলে ধরা হয়।

মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সম্মানীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমূখ।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জ্বালানির দাম বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যুক্তিসংগত নয়। সরকারের নীতিমালার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয় এবং রাজনৈতিকভাবে এটা কোনো আলোকিত সিদ্ধান্ত নয় বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ফলে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি ও মানুষের জীবনযাত্রার ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হবে। এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে হয়তো বিত্তবানদের ওপর খুব একটা প্রভাব পড়বে না। কিন্তু যারা দরিদ্র এবং যারা নতুন করে দরিদ্র হয়েছে, যারা কোভিড আক্রান্ত অর্থনীতিতে নতুন করে রিকোভারির চেষ্টার মধ্যে রয়েছে, তাদের ওপর প্রভাব পড়বে। আমরা যদি ন্যায্যতার কথা বলি সেই ন্যায্যতার দিক থেকেও এটা (জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি) একটা অন্যায্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এই দাম বাড়ানো হচ্ছে বিপিসির লোকসানের কথা বলে। বিপিসির লোকসানের কারণ কি? আমরা জানি এখানে সুশাসনের অভাব রয়েছে। বিপিসির তেল সংগ্রহ, বিক্রি, মার্কেটিংয়ে সিস্টেমের ব্যবস্থাপনা ও সুশাসনের অনেক অভিযোগ রয়েছে। তারা বিভিন্ন মার্কেটিং কোম্পানিকে দিয়ে তেল মার্কেটিং করে। সেখানেও আমরা দেখি দুর্নীতির খবর এসেছে। তেলের যে হারে দাম বাড়ানো হয় বাজারে তার থেকে বেশি হারে প্রভাব পড়ে এমন অভিযোগ করে ড. ফাহমিদা বলেন, যখন কোনো একটা জিনিসের মূল্য ৫, ১০ বা ২০ শতাংশ বাড়ানো হলো, তখন আমরা বাজারে গিয়ে দেখবো, মূল্য অনেক বেশি। এই যে এখন তেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে, সেখানে বাসের ভাড়া প্রকৃতপক্ষে ৫০ শতাংশ বেশি নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, মূল্য নির্ধারণ করার মেকানিজমে আমরা বৈজ্ঞানিক কোনো মেথড দেখি না। আমরা যদি আন্তর্জাতিক বাজারের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকি, তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে যখন মূল্য কম থাকে তখন সেটার সুফল কেন জনগণ পায় না? যখন আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি হয়, লোকসানের দোহাই দিয়ে দাম বাড়ানো হয়। এই যুক্তিকে কোনো বৈজ্ঞানিক বা সঠিক যুক্তি বলে মনে হয় না। সুতরাং এই প্রাইস মেকানিজমটিকে ঠিক করার প্রয়োজন রয়েছে।

মূল্যবৃদ্ধি বিভিন্ন নেতিবাচক দিক তুলে ধরে জ্বালানি তেল আবার আগের দামে ফিরিয়ে নেয়ার সুপারিশ করে ফাহমিদা বলেন, এটি (জ্বালানি তেল) একটি কৌশলগত পণ্য। এই পণ্য ছাড়া অর্থনীতি অচল হয়ে পড়বে। এই প্রেক্ষিতে আমরা বলছি পূর্ববর্তী দামে ফিরে যাওয়া দরকার। ডিজেল এবং কেরোসিনের যে মূল্য বাড়ানো হয়েছে, আমরা এই মূল্য প্রত্যাহার করে আগের মূল্যে ফেরত যাওয়ার সুপারিশ করছি। তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

জ্বালানির মূল্য আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে পদ্ধতি দেখিয়ে দিয়ে সিপিডির এই নির্বাহী পরিচালক বলেন, তেলের ওপর বিভিন্ন ধরনের শুল্ক কর রয়েছে। সেখান থেকে কোনো একটি শুল্ক প্রত্যাহার করে ভর্তুকি হিসেবে দেওয়া যেতে পারে। যখন অর্থনীতিতে কোনো ধরনের সংকট দেখা দেয় বা জরুরি অবস্থা দেখা দেয়, মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষের ওপর একটা বোঝা হয়ে দেখা দিচ্ছে, তখন সরকারের হাতে বিভিন্ন ধরনের ফিসক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট থাকে। সেই ফিসক্যাল ইন্সট্রুমেন্টগুলা তখনই ব্যবহার করার সময়। ভর্তুকি বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে দেওয়া হয়ে থাকে। এখানে কেন এই মুহূর্তে দেওয়া হবে না? না দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই।

এক প্রশ্নের উত্তরে ফাহমিদা বলেন, প্রতিদিন ২০ কোটি টাকা ধরলে বছরে ৭ হাজার দুইশ কোটি টাকা। এই ৭ হাজার দুইশ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া খুব কঠিন বিষয়? মনে তো হয় না।

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, তেলের দাম বাড়ানো সরকারের এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ভুল সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত থেকে সরকারের সরে আসা উচিত। তিনি আরো বলেন, ২০২২ অর্থবছরে প্রক্ষেপণ হচ্ছে বিপিসি থেকে আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট বাবদ সরকার ৭ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা আয় করার কথা লিখেছে। সুতরাং ৭ হাজার দুইশ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার জন্য এই আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহার করলে আর বাড়তি টাকার প্রয়োজন হয় না। শুধুমাত্র আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট সমন্বয় করেই সরকার লোকসানের টাকা সমন্বয় করতে পারে। ##



 

Show all comments
  • Somir Basak ১১ নভেম্বর, ২০২১, ১:৩৬ এএম says : 0
    কোন কিছুর মূল্য বৃদ্ধি করতে হবে আগে সংবাদ সম্মেলন করতে হবে। জনগণকে জানাতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Polash ১১ নভেম্বর, ২০২১, ১:৩৭ এএম says : 0
    আমরা এমন এক গণতন্ত্র দেশে বসবাস করি যেখানে সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নাই, হুট করেই প্রতি লিটারে ১৫ টাকা দাম বাড়ানো কি করে সম্ভব বিনা নোটিশে এতে কি প্রমাণ হয় না যে এরা জনগণের সরকার জনগণের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছেন ।
    Total Reply(0) Reply
  • Saifullah Zaman ১১ নভেম্বর, ২০২১, ১:৩৭ এএম says : 0
    চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে।
    Total Reply(0) Reply
  • Jasmin Hoque ১১ নভেম্বর, ২০২১, ১:৩৮ এএম says : 0
    আপনার সুপারিশ পছন্দনীয়, তবে সরকারকে এই পরিকল্পনাগুলি অনেক আগেই দেয়া উচিত বা প্রেশারে রাখা উচিত, যেনো সরাসরি জনগণের ভোগান্তি না হতে পারে
    Total Reply(0) Reply
  • Md Hanif ১১ নভেম্বর, ২০২১, ১:৩৮ এএম says : 0
    আমাদের কথা শুনার মতো কেউ থাকলে তো বলবো
    Total Reply(0) Reply
  • Shafiqul Alam ১১ নভেম্বর, ২০২১, ১:৩৯ এএম says : 0
    কোন প্রয়োজনই ছিলো না,,, সব দুর্নীতি করার ধান্দা
    Total Reply(0) Reply
  • Avishek Bhowmik ১১ নভেম্বর, ২০২১, ১:৪২ এএম says : 0
    একটা বাস ১ লিটারে ৪ কিলো যায়, তাহলে একটা বাস মিরপুর থেকে মতিঝিল ১৬ কিলো রাস্তা যাইতে ৪ লিটার তেল লাগে মানে খরচ বাড়ছে ৪*১৫=৬০ টাকা, যদি ২০ জন যাত্রিও নিয়ে যায় তার বাড়তি প্রতি জনে ৩ টাকা বেশি লাগবে, সহজ হিসাব। তাহলে সরকার কেনো ন্যূনতম ভাড়া ১০ টাকা করে? একজন মানুষ এমনিতেই ২-১ কিলো যাইতে ৫-১০ টাকা দেয় আগে থেকেই, তাহলে ৪ কিলোর হিসেবে তার ১৫ টাকা অতিরিক্ত খরচ হয় মানে ন্যূনতম ভাড়া বাড়ানোর প্রশ্নই আসেনা। আর যদি করেই তাহলে সেই টাকা দিয়েই তো তাদের অতিরিক্ত ডিজেলের দাম চলে আসে, তাহলে ১.৮ টাকা করে প্রতি লিটার বা হাবিজাবির মানে কি?
    Total Reply(0) Reply
  • Md.Rashadujaman ১১ নভেম্বর, ২০২১, ১:৪৪ এএম says : 0
    আমাদের দাবি অবিলম্বে বাড়তি ভাড়া প্রত্যাহার করা হোক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ