দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
উত্তর : বিচারের জন্য আল্লাহ তায়ালা সব সৃষ্টজীবকে হাশরের ময়দানে জমায়েত করবেন। কাউকে বাদ দেবেন না। সেখানে সবার চূড়ান্ত বিচার হবে। হাশরের এই সুবিশাল ভয়ানক মাঠে যা কিছু প্রথম সংঘটিত হবে এ নিয়ে অত্যন্ত পরিষ্কার আলোচনা রয়েছে নবীজির বিভিন্ন হাদিসে। এমন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিম্নে তুলে ধরা হলো।
সর্বপ্রথম যিনি কবর থেকে উঠবেন : হাশরে হিসাবের জন্য কবর থেকে সর্বপ্রথম উঠবেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব হজরত মোহাম্মদ (সা.)। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবী (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন আমি হব সব আদমসন্তানের সরদার এবং আমিই প্রথম কবর থেকে উঠব। আল্লাহর নিকট আমিই প্রথম সুপারিশ করব এবং আমার সুপারিশই প্রথম কবুল হবে।’ (মুসলিম : ২২৭৮)।
সর্বপ্রথম যাকে কাপড় পরানো হবে : হাশরের মাঠে মানুষ খালি পায়ে, বস্ত্রহীন হয়ে উঠবে। কারও শরীরে কোনো কাপড় থাকবে না। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘হে মানবমণ্ডলী, নিশ্চয় কেয়ামতের দিন নগ্নপদে, বস্ত্রহীন ও খৎনাবিহীন অবস্থায় হাশরের ময়দানে তোমাদের একত্র করা হবে এবং কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম কাপড় পরানো হবে হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে।’ (বুখারি : ৬৫২৪)। ওলামায়ে কেরাম হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম কাপড় পরানোর বেশ কিছু রহস্য বর্ণনা করেছেন। তার মধ্যে চমৎকার একটা রহস্য হলো, মুশরেকরা যখন হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে আগুনে জ্বালানোর ইচ্ছা করল। এর জন্য বিশাল অগ্নিকুণ্ড প্রস্তুত করল। কয়েক মাস ব্যাপী লাকড়ি জমা করল। এমনকি আগুনের লেলিহান শিখা উর্দ্ধ দিগন্তে উঠতে লাগল। পাখিরা আগুনের তাপে গলে গলে পড়তে থাকল। এমতাবস্থায় যখন তাকে নিক্ষেপের ইচ্ছা করল। তখন তাকে বস্ত্রহীন করে ফেলল। এতে তিনি ধৈর্য ধারণ করলেন, সওয়াবের আশা রাখলেন এবং আল্লাহর ওপর ভরসা করলেন, এজন্য আল্লাহ তায়ালা তাকে এর প্রতিদান দিলেন। তাকে দুনিয়া-আখেরাতের আগুন থেকে রক্ষা করলেন এবং বিনিময়ে কেয়ামতের দিন তাকে সব মানুষের উপস্থিতিতে কাপড় পরিয়ে সম্মানিত করবেন।
সর্বপ্রথম যাদের হিসাব নেওয়া হবে : হাশরে সব নবীর উম্মত থেকে হিসাব নেওয়া হবে। সর্বপ্রথম হিসাব নেওয়া হবে উম্মতে মুহাম্মদি থেকে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, আমরা সর্বশেষ উম্মত এবং সর্বপ্রথম আমাদের হিসাব নেওয়া হবে। বলা হবে, উম্মি উম্মত ও তাদের নবী কোথায়? আমরা হলাম শেষ (আগমনের দিক থেকে) প্রথম (হিসাব ও জান্নাতে প্রবেশের ক্ষেত্রে)। (ইবনে মাজাহ : ৪২৯০)।
সর্বপ্রথম যে ইবাদতের হিসাব হবে : হাশরের দিন প্রত্যেকটা ইবাদতের হিসাব নেওয়া হবে। আর ইবাদতের মধ্যে সর্বপ্রথম হিসাব হবে নামাজের। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন বান্দার সর্বপ্রথম হিসাব নেওয়া হবে নামাজের। যদি নামাজ সঠিক হয় তাহলে তার সব আমল ঠিক, আর নামাজ যদি নষ্ট হয়, তাহলে সব আমল নষ্ট।’ (আল মুজামুল কাবির, তাবরানি : ২৪০)।
সর্বপ্রথম যে কৃতকর্মের হিসাব হবে : রক্তপাত ঘটানো, কাউকে হত্যা করা জঘন্য একটি অপরাধ। তিরমিজির একটি হাদিসে এসেছে, ‘দুনিয়া ধ্বংস করে দেওয়ার চেয়েও আল্লাহর কাছে ঘৃণিত কাজ হলো মানুষ হত্যা করা।’ এজন্য মানুষের কৃতকর্মের মধ্যে সবার আগে হিসাব হবে এ রক্তপাতের। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম মানুষের মাঝে ফয়সালা হবে রক্তপাতের ক্ষেত্রে।’ (বুখারি : ৬৮৬৪)।
রক্তপাতের বিষয়টি জটিল হওয়ার কারণে এর বিচার আগে হবে। কুুুফর-শিরকের পর এটি সবচেয়ে বড় পাপ। ইমাম নববি (রহ.) বলেন, এ হাদিসটি সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব হবে এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। কারণ, নামাজ হলো আল্লাহর হক। এটি বান্দা ও আল্লাহর মাঝের বিষয়। আর রক্তপাত ঘটানোর বিষয়টি বান্দার হক। এটি বান্দাদের পারষ্পরিক বিষয়। অতএব আল্লাহর হকগুলোর মধ্যে নামাজের হিসাব আগে হবে আর বান্দার হকগুলোর মধ্যে রক্তপাতের বিচার আগে হবে। (আদদিবাজ আলা মুসলিম : ৪/২৭৯)। এখন প্রশ্ন থাকে, এ দুটির মধ্যে কোনটির বিচার আগে হবে এ ব্যাপারে কথা হলো নামাজের হিসাব আগে হবে। কারণ, হাদিসের বাহ্যিক শব্দাবলি দ্বারা বুঝা যায়, বান্দার হকের আগে আল্লাহর হকের বিচার হবে। (তুহফাতুল আহওয়াজি : ৩/৪৪০)।
সর্বপ্রথম যিনি আল্লাহর সামনে বিতর্ক করবেন : সর্বপ্রথম আল্লাহর সামনে বিতর্ক করবেন হজরত আলী ইবনে আবি তালেব (রা.)। এ সম্পর্কে তিনি নিজেই বলেন, ‘আমিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি কেয়ামতের দিন রহমানের সামনে বিতর্ক করার জন্য হাঁটু গেড়ে বসবেন। হজরত কায়েস ইবনে উবাদ (রা.) বলেন, তাদের ব্যাপারেই নাজিল হয়েছে, ‘ওই দুই সম্প্রদায় তাদের মধ্যে তাদের যারা রবের ব্যাপারে ঝগড়া রয়েছে।’ কায়েস বলেন, তারা হলেন ওই সব ব্যক্তিবর্গ যারা বদরের দিন মল্লযুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। হামজা (রা.), আলী (রা.) এবং উবাইদা কিংবা আবু উবাইদা (রা.) [মুসলমানদের পক্ষে] আর শাইবা ইবনে রবিআ, উতবা ইবনে রবিআ এবং ওয়ালিদ ইবনে উতবা (কাফেরদের পক্ষে)।’ (বুখারি : ৩৯৬৫)।
সর্বপ্রথম যারা আত্মীয়-স্বজন থেকে পালাবে : কেয়ামতের দিন মানুষ নেকি দিয়ে দিতে হবে এজন্য কিংবা লজ্জায় আত্মীয়-স্বজন থেকে পালিয়ে বেড়াবে। হজরত হাসান (রহ.) বলেন, কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম পিতা থেকে পালাবেন ইবরাহিম (আ.), সর্বপ্রথম আপন পুত্র থেকে পালাবেন হজরত নুহ (আ.) এবং সর্বপ্রথম স্ত্রী থেকে পালাবেন হজরত লুত (আ.)। (তাফসিরে কুরতুবি : ১৯/২২৫)
উত্তর দিচ্ছেন : নূর মুহাম্মদ রাহমানী
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।