বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
যশোরের ঝিকরগাছা-চৌগাছার ২২টি ইউনিয়ন পরিষদের বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) ভোট গ্রহণ। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন চলবে ভোটগ্রহণ। স্বাস্থ্যসুরক্ষা মেনে ভোটগ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী সব ধরনের প্রচার-প্রচারণাও শেষ হয়েছে। বিএনপি জামায়াত দলীয়ভাবে নির্বাচন না করায় অধিকাংশ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মূলপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে রয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থী। ভোটের সমীকরণে নৌকার প্রার্থীদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে দলের বিদ্রোহীরা। ফলে ভোটের মাঠে আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হওয়ায় ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ঝিকরগাছা ও চৌগাছা উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের মধ্যে ২০টিতে চেয়ারম্যান পদে ভোটগ্রহণ হবে। বাকী দুটি চৌগাছার ফুলসারা ও চৌগাছা সদর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করে নৌকা প্রতীক দিলেও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ২০টি ইউনিয়নের ১৩টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। ইতোমধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থীদের দল থেকে বহিষ্কার করেও লাগাম টানতে পারেনি আওয়ামী লীগ। কারণ দলের উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই বিদ্রোহীদের মদদ দিচ্ছেন। আর একই দলের একাধিক প্রার্থী মাঠে থাকায় উৎসবের নির্বাচন রূপ নিতে পারে সংঘর্ষের দিকে। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার শুরু থেকেই আধিপত্য বিস্তর ও আধিপত্য বজায় রাখার জন্য দলীয় প্রার্থীর নেতাকর্মীদের সাথে বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের হামলা পাল্টা হামলা নির্বাচনী কার্যালয়সহ প্রচার মাইক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোন প্রকার সহিংসতা ঘটানোর টেষ্টা গ্রহণ করলে জেলা পুলিশ হুশিয়ারি বার্তাও পৌঁছে দিয়েছে বিভিন্ন প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকদের কাছে। সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের জন্য প্রতিটি কেন্দ্রেই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় অন্যান্য নির্বাচনের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এদিকে, ঝিকরগাছা ও চৌগাছা উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের মধ্যে ২০টিতে চেয়ারম্যান পদে ভোটগ্রহণ হবে। এর মধ্যে ১৩টি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ ২২বিদ্রোহী প্রার্থী। ইতোমধ্যে ঝিকরগাছা উপজেলার ৬ ইউনিয়নের ৯ বিদ্রোহী প্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর আগে চৌগাছার ৭টি ইউনিয়নে নৌকার ১৩ বিদ্রোহী প্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সব মিলেয়ে দুই উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ২২ বিদ্রোহী প্রার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ৪ নভেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর প্রেরিত ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মুকুল ও সাধারণ সম্পাদক মুসা মাহমুদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ৬ ইউনিয়নের ৯ বিদ্রোহী প্রার্থীকে দল থেকে বহিস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। এরপর জেলা কমিটি তাদের সাময়িক বহিষ্কার করে কেন্দ্রে চূড়ান্ত বহিস্কারের জন্য পাঠিয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন- গঙ্গানন্দপুর ইউনিয়নে আতাউর রহমান ঝন্টু, বদর উদ্দীন বিল্টু, শহিদুল ইসলাম শহিদ ও মইজ উদ্দিন, মাগুরা ইউনিয়নে ওবাইদুর রহমান, শিমুলিয়া ইউনিয়নে জহুরুল হক, গদখালি ইউনিয়নে শাহজাহান আলী, নির্বাসখোলা ইউনিয়নে নজরুল ইসলাম, হাজিরবাগ ইউনিয়নে নুরুল আমীন মধু। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে তারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। তাদেরকে দল থেকে সাময়িক অথব চূড়ান্ত বহিস্কারের সুপারিশ করা হল। গত ২ নভেম্বর যশোরের চৌগাছায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় ১৩ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা হলেন-পাশাপোল ইউনিয়নে আবদুল মতলেব হোসেন, শাহিনুর রহমান শাহীন, সিংহঝুলি ইউনিয়নে ইব্রাহিম খলিল বাদল ও হামিদ মল্লিক, ধুলিয়ানি ইউনিয়নে এসএম মমিনুর রহমান ও আলাউদ্দিন, জগদীশপুর ইউনিয়নে সিরাজুল ইসলাম মাস্টার ও আজাদুর রহমান খান, স্বরুপদহ ইউনিয়নে শেখ আনোয়ার হোসেন, নুরুল কদর, নারায়নপুর ইউনিয়ন আবু হেনা মোস্তফা কামাল বিদ্যুৎ ও সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নে নুরুল ইসলাম মাস্টার। দল থেকে বহিষ্কার করে লাগাম টানতে পারেনি আওয়ামী লীগ। ভোটের মাঠে বিদ্রোহীরা সরব রয়েছে। আধিপত্যের লড়াইয়ে বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে সহিংসতার হয়েছে। যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন জানিয়েছেন, ঝিকরগাছা ও চৌগাছার ২২ বিদ্রোহী প্রার্থীকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদেরকে চূড়ান্ত বহিস্কারের জন্য তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্র এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ঝিকরগাছা-চৌগাছার ২২টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ৩ লক্ষ ৮৯ হাজার ৯৬৩ জন। এর মধ্যে ঝিকরগাছাতে ২ লক্ষ ১৯ হাজার ২৭৬ জন ভোটার ১২৩টি কেন্দ্রে ৬০৬টি বুথে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। আর চৌগাছায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার ৬৮৭ জন ভোটার ১০২ টি কেন্দ্রে ৪৮০ টি বুথে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। দুই উপজেলায় সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন করতে ৩ হাজার ৪৮০ জন নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়েজিত থাকবে। এর মধ্যে ঝিকরগাছায় ১১ টি ইউনিয়নে ১২৩টি কেন্দ্রে ১২৩ জন পিজাইডিং অফিসার, ৬০৫ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং ১ হাজার ২১০ জন পোলিং অফিসার থাকবে। চৌগাছায় ১১টি ইউনিয়নে ১০২ টি কেন্দ্রে ১০২ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৪০৮টি বুথের জন্য ৪৮০ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও ৯৬০ জন পোলিং অফিসার থাকবে। প্রতিটি কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য ব্যাপক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। দুই উপজেলার ১৭ শ’ পুলিশের সঙ্গে জন ৮ জন জুডিসিয়াল ও ১৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। তিন প্লাটুন বিজিবি সাথে দেড় হাজার আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া পুলিশের ৫টি মোবাইল টিম ও ৬টি স্ট্রাইকিং ফোর্সের ৬টি টিম নির্বাচনের মাঠে সার্বক্ষণিক কাজ করবে।
এ প্রসঙ্গে সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার হুমায়ুন কবীর বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নির্বাচনী সরঞ্জাম উপজেলায় পাঠানো হয়েছে। ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যে সকল ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ হবে। ২২ টি ইউনিয়নের মধ্যে শুধুমাত্র ফুলসারা ইউনিয়নে এভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ হলেও বাকী ২১ টি ইউনিয়নে ভোটযুদ্ধ হবে ব্যালটে। এই বিষয়ে জানতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) জাহাংগীর হোসেন বলেন, নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকবে। কোন প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে, আইনের ব্যত্যয় ঘটালে বা চেষ্টা করলে নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। ঝিকরগাছা ও চৌগাছায় নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা রোধে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।