Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুয়াকাটার ভাঙন রোধে প্রকল্পব্যায় বেড়ে ১ হাজার ২০৬ কোটি টাকা হচ্ছে

আমলাতান্ত্রিক জটিলতা পরিহার করে দ্রুত বাস্তবায়নের তদাগিদ

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০২১, ১২:৫১ পিএম

বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউ-এর ছোবলে বিপর্যস্ত পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটকে রক্ষায় সাড়ে ৯শ কোটি টাকার ‘উন্নয়ন প্রকল্পÑপ্রস্তাব’টি সংশোধন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডে দাখিলের পরে তা এখন পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ে। তবে প্রকল্প প্রস্তাবনায় আরো বেশ কয়েকটি বিষয় অন্তভর্’ক্ত করায় ব্যায় বৃদ্ধি পেয়ে ১২শ ৬ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। চলতি মাসেই এব্যাপারে পানি সম্পদ সচিবের সভাপতিত্বে এক সভায় ডিপিপি অনুমোদনের সম্ভবনার কথা জািনয়েয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল মহল।
ফলে চলতি মাসের শেষভাগে বা আগামী মাসের প্রথমেই কুয়কাটার ভাঙন রোধ সংক্রান্ত প্রকল্পÑপ্রস্তাবনাটি পরিকল্পনা কমিশনে পৌছার কথা রয়েছে। সংশোধীত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনের ‘প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি’ ও ‘কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি’তে অনুমোদনের পরে জাতীয় অর্থনৈতিক কমিশনের নির্বাহী কমিটি ‘একনেক’এর চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পেস হতে পারে। তবে সে পর্যন্ত পৌছতে কতদিন বা মাস লাগবে তা বলতে পারছেন না কেউ। গত মাসেই ডিপিপি’টি বোর্ড থেকে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ে পৌছার পরে এখনো তা বিবেচনায় কোন সভা হয়নি।
আগামী মার্চের মধ্যে কুয়াকাটা ভাঙন রোধের প্রকল্পটি একনেক-এর অনুমোদন মিললে চলতি বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর ‘আরএডিপি’তে অন্তভর্’ক্তির সম্ভবনা থকবে বলেও মনে করছেন একাধীক দায়িত্বশীল মহল। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে প্রকল্পটি নিয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় ও পরিকল্পনা কমিশনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা পরিহারের ওপর।
উপমহাদেশে পটুয়াখালীর সর্বদক্ষিণে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকেই সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসছে এ বিরল দৃশ্য দেখতে। বিদেশী পর্যটকদের খুব আনাগোনা না থাকলেও যেসব প্রবাসীরা দেশে আসেন তারা অন্তত একবার হলেও পরিবার পরিজন নিয়ে আসছেন কুয়াকাটায়। গত দুই দশকে কুয়াকাটায় আবাসন সুবিধা সহ নানামুখি উন্নয়ন হলেও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার প্রধান বাঁধা হয়ে উঠেছে বঙ্গোপসাগরের ভাঙন। পর্যটন কেন্দ্রটির মুল অকর্ষন সীবীচের পূর্বের রাবনাবাদ ও পশ্চিম প্রান্তের আন্ধারমানিক চ্যানেলের শ্রোত গতি পরিবর্তন করায় ১৯৯৮ সাল থেকে ভাঙন শুরু হয় এখানে। প্রথমে ঢেউ-এর আঘাতে বছরে এক মিটার করে সী বীচ বিলীন হতে শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে সে সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড বা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের তরফ থেকে তেমন কোন উদ্বেগ ছিলনা।
২০১০ সাল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিমিত কিছু উদ্যোগ গ্রহন করলেও তা টেকসই হয়নি। কয়েক দফায় জিউ টিউব ও সিসি ব্লক ফেলে মূল সী বীচটি সাগরের ঢেউ থেকে রক্ষার উদ্যোগ তেমন ফল দেয়নি।
পরবর্তিতে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে গবেষনা প্রতিষ্ঠান ‘আইডব্লিউএম’ এ লক্ষে ব্যাপক সমিক্ষা সম্পাদন করেছে। নেদারল্যান্ডের একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানও এলক্ষে অনলাইনে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে কিছু পরামর্শ দিয়েছে। আইডব্লিউএম-এর প্রস্তাবনায় কুয়াকাটা উপক’লীয় বণ্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ থেকে সী বীচ পর্যন্ত প্রায় ৭০টি গ্রোয়েনের মাধ্যমে ভাঙন রোধের প্রস্তাব দেয়া হয়। এলক্ষে মূল সীবীচ রক্ষায় দু প্রান্তের রাবনাবাদ ও আন্দামানিক চ্যানেল পর্যন্ত প্রায় ১১ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার এলাকায় সিসি ব্লকের সাহায্যে গ্রোয়েনগুলোতে জিও টেক্সটাইল-এর ওপর ৪৫ সেন্টিমিটার থেকে ১ মিটার সাইজের সিসি ব্লক সন্নিবেশের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় কুয়াকাটা সৈকতে একটি আদর্শ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে ‘ওয়াকিং বে’ ছাড়াও পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ‘লাইফ গার্ড স্টেশন’, বসার স্থান, ট্রইল, পার্কিং ল্যান্ডস্কেপ ও টয়লেট নির্মানের প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে সাড়ে ৯শ কোটি টাকা ব্যায় সাপেক্ষ ডিপিপি’টি পূণর্গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়। সে আলোকে কুয়াকাটা ভাঙন রোধের পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্রটিকে আওরো অকষণীয় করতে আরো কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পব্যায়ও সাড়ে ৯শ কোটি থেকে ১ হাজার ২০৬ কোটিতে উন্নীত হয়েছে।
নতুন পূণর্গঠনকৃত প্রকল্প-প্রস্তাবনায় কুয়াকাটা সৈকত সংলগ্ন উপক’লীয় বণ্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের ১২ কিলোমিটার বিটুমিনাস কার্পোটিং করে মেরিন ড্রাইভ রোডের আদলে নির্মানের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া বন বিভাগের ইকোপর্কের অভ্যন্তরে ৯শ মিটার ওয়াকিং সেল সহ ওয়াকওয়ে নির্মিত হবে ২.৬ কিলোমিটার। গঙ্গামতির কাছে মেরিন ড্রাইভ রোড দুটি নান্দনিক সেতুও নির্মিত হবে প্রকল্পের আওতায়। যার একটি হবে ঝুলন্ত সেতু। অপরটি আরসিসি।
প্রকল্পটির জন্য আইডব্লিউএম প্রথমে ৬৪৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার ব্যায় প্রস্তাব করলেও পরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৯৪৯ কোটিতে উন্নীত হয়। কিন্তু শেষপর্যন্ত তা ১ হাজার ২০৬ কোটিতে উন্নীত হচ্ছে। নেদারল্যান্ডের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সহ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন তদরকি করবে দেশীয় আধা সরকারী গবেষনা প্রতিষ্ঠান ‘আইডব্লিউএম’।
তবে বিভিন্ন মহল থেকে যত দ্রুত সম্ভব ভাঙন রোধ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের তাগিদ দেয়া হয়েছে। নচেত হতশ্রী কুয়াকাটার প্রতি দেশী বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষন হারাতে পারেন বলেও মন্তব্য করেছেন ট্যুর অপারেটরগন। পাশাপাশি ভাঙন পরিস্থিতি আরো তীব্রতর হতে পারে। সম্প্রতি বরিশালÑপটুয়াখালীÑকুয়াকাটা মহাসড়কে লেবুখালীতে পায়রা সেতু চালু হওয়ায় কুয়াকাটার সাথে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ আরো সহজতর হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ