Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৩২ মাসের বেতন বকেয়া রেখে আদমজী উম্মুল ক্বোরা হাইস্কুলের শিক্ষকদের বেতন চিরতরে বন্ধ

নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০২১, ৫:০৯ পিএম

সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী বিহারি কলোনীতে অবাঙ্গালীদের একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘আদমজী উম্মুল ক্বোরা হাইস্কুল’। স্কুলটিতে বর্তমানে সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থী লেখা-পড়া করছে। বিহারী কলোনীর ২ হাজার পরিবারের সন্তানরাই মূলত এই স্কুলের শিক্ষার্থী। ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক রিলিফ অরগানাইজেশন (আইআইআরও) নামে একটি সংস্থার অনুদানে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীরাও শিক্ষা উপকরণসহ নানা সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে সংস্থার কাছ থেকে। কিন্তু গত ৩২ মাস ধরে শিক্ষক-কর্মচারীরা কোন বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। শুধু তাই নয়, ৩২ মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া রেখেই সংস্থার পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে তারা আর বেতন-ভাতা দিতে পারবেন না। এই চিঠি পাওয়ার পর যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে শিক্ষক-কর্মচরীদের মাথায়। শঙ্কা দেখা দেয় স্কুলের ভবিষ্যত নিয়ে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে শত কস্টের মধ্যেও শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। তবে সেটা কত দিন? তাই তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। না হলে হয়তো একদিন স্কুলটি বন্ধ হয়ে থমকে যাবে কোমলমতী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন।
জানা যায়, ১৯৯৭ সালের ২৭ অক্টোবর আদমজী উম্মুল ক্বোরা জুনিয়র হাই স্কুলের যাত্রা শুরু হয়। তখন ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখা-পাড়া হতো। পর্যায়ক্রমে ১০ শ্রণি পর্যন্ত হাইস্কুলের পরিনত হয়। বর্তমানে স্কুলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯৯৫। শুরু থেকে ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক রিলিফ অরগানাইজেশন (আইআইআরও) নামে একটি সংস্থার অনুদানে চলতো স্কুলের কার্যক্রম। স্কুলের শিক্ষক, কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, শিক্ষার্থীদের স্কুল ব্যাগ, শীতের পোশাক, রমজানে ইফতার সামগ্রী, কোরবানীর ঈদে মাংস বিতরণ এবং এতিম শিক্ষার্থীদের সাহায্য সহযোগিতা করতো তারা। সংস্থাটির সার্বিক সহযোগিতা পাওয়ায় গরীব ও অসহায় পরিবারের সন্তানরাও স্কুল মুখী হয়। এতে দিন দিন স্কুলের শিক্ষার্থী বৃদ্ধি পায়। ভালোই চলছিল সবকিছু। পরীক্ষার ফলাফলও সন্তোষজনক। প্রধান শিক্ষকসহ ১৪ জন শিক্ষক এবং একজন পিয়ন ও একজন দারোয়ানের বেতন সংস্থা দিয়ে আসছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাস সংস্থার ১৬ জন শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন বকেয়া পড়ে। এই বকেয়া রেখেই ২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বেতন চলমান রাখে। কিন্তু ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবার ২১ মাসের বেতন বকেয়া পড়ে। চরম অর্থ সংকটে পড়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা। তারপরও শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে পাঠদান চলমান রাখে শিক্ষকরা। এরমধ্যে বিশ্বব্যাপি প্রাণঘাতি করোনা মহামারী শুরু হয়। দুর্যোগকালীন এই সময়ে শিক্ষকরা যখন বেতন-ভাতা ও কোন প্রকার সহায়তা না পেয়ে মানবেতন জীবন-যাপন করছিল তখন ৩২ মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ না করেই ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সংস্থা থেকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয় তারা আর বেতন-ভাতা দিতে পারবে না।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক হাকিম জয়নুল আবেদীন জানান, সরকারীভাবে আমরা প্রতি বছর নতুন বই পাই। আর স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরন, কোরবানীর ঈদ, রমজান মাসসহ বিভিন্ন সময় সাহায্য সহযোগিতা করে আসছিল ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক রিলিফ অরগানাইজেশন (আইআইআরও)। সংস্থা থেকে আমাদের ১৬ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে বেতন দেয়া হতো। তবে শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়ার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে খন্ডকালীন আরও ৯জন শিক্ষক যুক্ত করা হয়েছে। তাদের বেতন শিক্ষার্থীদের সামান্য বেতন থেকে পরিশোধ করা হয়। কিন্তু আমাদের ৩২ মাসের বেতন বকেয়া পড়েছে। আমরা অমানবিক কস্টের মধ্যে আছি। করোনা মহামারিতে সবাই সাহায্য সহযোগিতা পেলেও আমরা পাই নাই। উল্টো বেতন-ভাতা চিরতরে বন্ধের চিঠি পেলাম।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু সংস্থাটি সৌদি আরবের সেহেতু গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিষয়টি সৌদি দূতাবাসে স্বশরীরে গিয়ে অবগত করা হলেও তারা কোন প্রকার কর্ণপাত করেননি।
তাই সংস্থার কাছে আমাদের দাবী, বকেয়া বেতন ও এককালীন অর্থ দিয়ে আমাদের বিদায় করা হোক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ