পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনা মহামারির কারণে প্রায় দেড় বছর বন্ধ ছিলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন ধরে ঘরবন্দি থাকায় মানসিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন শিশু শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলেও শিশু শিক্ষার সঙ্কট কাটেনি। এখনো শতভাগ শিক্ষার্থী ফিরেনি ক্লাসরুমে। যদিও করোনাকালে পড়াশুনা অব্যাহত রাখতে সংসদ টেলিভিশনে ক্লাস সম্প্রচার করাসহ বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। কিন্তু এর সুফল পেয়েছে খুব কম শিক্ষার্থীই। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা পুরোটা সময়ই ছিল পড়াশুনার বাইরে। ইন্টারনেট, ডিভাইসের সল্পতা, অনলাইন ক্লাসের মান নিয়েও ছিল বিস্তর বিতর্ক।
জানা যায়, শহরাঞ্চলের নামিদামি স্কুলগুলো নিজেরাই জুম, গুগলসহ নানা মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাস নেয়। কিন্তু মফস্বল এলাকায় টেলিভিশন না থাকা, ডিভাইসের অভাব, ইন্টারনেটের উচ্চ দাম ও দুর্বল নেটওয়ার্কের কারণে অনেক শিক্ষার্থী ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। সংসদ টিভি ও অনলাইন ক্লাসের পড়ানোর মাধ্যম, মানের কারণে অধিকাংশ শিশুকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। একটি পরিসংখ্যানে জানা যায়, ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থীই ছিলো অনলাইন ক্লাসে অনুপস্থিত।
মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানায়, মহামারির সময়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয়েছে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের। মাদরাসাগুলো বন্ধ থাকার কারণে আবাসিক শিক্ষার্থীদের বাড়িতে চলে যেতে হয়। কিন্তু সেসব শিক্ষার্থীরা সবাই মাদরাসায় ফিরে আসেনি। হাফেজি, ইবতেদায়ী ও মাধ্যমিক শ্রেণির মাদরাসার শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হতে হয়েছে।
অনেক শিক্ষার্থীর বাবা-মায়ের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে যেতে হয়েছে। আবার গ্রামের শিক্ষার্থীদের অনেকে লেখাপড়া বন্ধ করে কাজে যোগ দিয়েছে। মেয়ে শিক্ষার্থীকে বসতে হয়েছে বিয়ের পিঁড়িতে। কেউ কাজ নিয়েছে ইটভাটায়, কেউ যাচ্ছে কলকারখানায়, কেউবা কাজ নিয়েছে গাড়ির হেলপারির। অটোরিকশার ড্রাইভিং সিটে বসে কোন কোন শিক্ষার্থী উপার্জনে নেমে পড়েছে। বেশিরভাগ শিশুই গৃহস্থের কাজে বাড়ির সদস্যদের সহায়তা করেছে। পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট বা অনলাইনে গেম খেলে সময় কাটিয়েছে।
শিশু শিক্ষার জন্য কিন্ডার গার্টেন ও বেসরকারি স্কুলগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশের নামিদামি সরকারি স্কুলে ভর্তির সীমিত আসন থাকায় অনেক শিশু এসব স্কুলে ভর্তি হতে পারে না। সেসব শিক্ষার্থীদের কিন্ডার গার্টেন অথবা বেসরকারি সরকার অনুমোদিত স্কুলে ভর্তি হতে হয়। অধিকাংশ এসব প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় উদ্যোগক্তারা পড়েছেন বিপাকে। করোনাকালে ভাড়া দিতে না পেরে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। আর বন্ধের পথে অনেক স্কুল। বেতন ভাতা না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন এসব স্কুলের শিক্ষকরা। কিছু প্রতিষ্ঠানকে অভিভাবকরা টিউশন ফি দিতে না পারার কারণেই লোকসানে পড়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠান আবার করোনাকালীন সময়ে পাঠদান না দিয়েও টিউশন ফি নিয়েছে শতভাগ। এমন অভিযোগও রয়েছে অভিভাবকদের।
রাজধানীর বাইরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোস্তফা কামাল জানান, করোনা মহামারির পর স্কুল খোলা হলেও ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিত ক্লাস চলে। ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণিতে সপ্তাহে দুইদিন এবং ১ম ও ২য় শ্রেণির ক্লাস হয় সপ্তাহে একদিন। এছাড়াও প্রতি ক্লাসকে ভাগ করে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমিয়ে ক্লাস নিতে হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালনা, ওয়ার্কশিট, বাড়ির কাজ মূল্যায়ন করছেন নিয়মিতই।
রাজধানীর লিটল জুয়েল্স কিডস স্কুলের পরিচালক রাজিব দাস জানান, খুব ভালো ভাবেই চলছিলো তাদের স্কুল। কিন্তু করোনায় সবকিছু স্থবির করে দিয়েছে। আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে। স্কুল খোলার পরও পূর্বের সব শিক্ষার্থী আসেনি। তারপরও অনলাইনে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের হেড অব ডেভেলপম্যান্ট কর্মকর্তা মো. আবু নাসের বলেন, অনেক অভিভাবকরা এখনো তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠনো থেকে বিরত রয়েছেন। কিছু শিক্ষার্থী স্বশরীরে ক্লাসে উপস্থিত হতে না পারলেও অনলাইনে ক্লাস করছে। আর যারা স্বশরীরে ক্লাসে উপস্থিত হচ্ছে তাদের স্বাস্থবিধি মেনে, হ্যান্ডসেনিটাইজার ব্যবহার করে ক্লাসে প্রবেশের সবরকমের ব্যবস্থা আমরা করেছি। তবে আস্তে আস্তে স্কুলে শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়বে বলে তিনি আশা করেন।
জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম)-এর উপ-পরিচালক মো. লুৎফর রহমান বলেন, করোনা মহামারিতে দীর্ঘদিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়। কিন্তু পারিবারিক কারণে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসেনি। অনেক অভিভাবকরা পরিস্থিতি এখনো অনুকূলে নেই মনে করে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।