Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পদ্মায় ইলিশের দেখা নেই, হতাশ জেলেরা

রেজাউল করিম রাজু | প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০২১, ২:১১ পিএম

পদ্মায় ইলিশ নেই। দিন দশেক হলো ইলিশ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা পার হয়েছে। তিন সপ্তাহ অপেক্ষার পর নৌকা জাল নিয়ে নদীতে নেমেছে ইলিশ ধরার জন্য। কিন্তু প্রত্যাশিত ইলিশের দেখা নেই। খুব কম সংখ্যক জেলের ভাগ্যে জুটছে দু’চারটি ইলিশ। তাও আবার পেটে ডিম ভরা। ছোট আকারের ইলিশও কিছু মিলছে। নদী থেকে অন্য মাছও হারিয়ে গেছে। দিনভর নৌকা জাল নিয়ে নদী চষে ফিরে মিলছে ছোট আকারের বাঘাইড়, রিঠা, পাঙ্গাশ, ঘেড়ে, বেলে, পাতাশী মাছ। কারো জালে দু’একটা কাতল ধরা পড়ছে। ইলিশ ধরতে গিয়ে এখন ধরতে হচ্ছে অন্য মাছ। নৌকা জালের খরচ উঠছেনা।
ভারতের ফারাক্কা ব্যারেজ গলিয়ে আসা গঙ্গা নদী এপারে নাম ধারন করেছে পদ্মা। সেই পদ্মায় এক সময়ের ইলিশ আর তার স্বাদ গন্ধ এখন অতীত। ফারাক্কা মেরে ফেলেছে পদ্মাকে গতি হারিয়েছে ইলিশের আনোগোনা। চুক্তি মোতাবেক পানি না দিলেও প্রতিবছর বর্ষা মওসুমে এপারে ঘোলা পানির সাথে ঠেলে দেয়া হয় বিপুল পরিমান বালি। সেই বালি একটু একটু করে জমতে জমতে নদীর তলদেশ ভরাটকরা হয়েছে আঠারো ফুট। নদী হারিয়েছে নাব্যতা। নদী মরে যাবার সাথে সাথে হারিয়েছে জীব বৈচিত্র আর নানা প্রজাতির মাছ শুশক ঘড়িয়াল।
বাপ দাদার পেশা বদলেছে জেলে সম্প্রদায়। যারা এখনো রয়েছে তারাও খুব একটা ভাল নেই। চাপাইনবাবগঞ্জর শিবগঞ্জ (পদ্মা নদীর যাত্রা শুরু) রাজশাহী গোদাগাড়ী, পবা, চারঘাট, বাঘা, নাটোরের লালপুর ও পাবনার ঈশ্বরদি হার্ডিঞ্জ পয়েন্ট পর্যন্ত খোঁজ নিয়ে জানা যায় নদীতে মাছের দুরবস্থার কথা। জেলেদের কথা ইলিশতো দূরে থাক অন্যান্য মাছদেরও আকাল চলছে।
জেলেদের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, গত ক’বছর ধরে নদীতে ইলিশের টান দেখা যাচ্ছে। গতবার কিছু মাছ পেলেও এবারের অবস্থা নাজুক। নদী তীরে সকাল বিকেল ভীড় করছেন খোঁজ খবর নিচ্ছেন টাটকা ইলিশের ভোক্তারা। তারাও নিরাশ হয়ে ফিরছেন।
রাজশাহীর ইলিশের আড়ৎ নিউ মার্কেটের পাশের আড়তে পর্যবেক্ষন করে দেখা যায় সেখানে খুব একটা হাঁক ডাক নেই। বড় বাজার সাহেব বাজারে কিছু ইলিশের দেখা গেলেও সবি সমুদ্র কিংবা বরিশালের। নিষেধাজ্ঞার আগে ধরা পড়া। আবার নিষেধাজ্ঞার মাঝেও লুকিয়ে ধরা মাছ বরফ দিয়ে রাখা। এসব মাছ এখন সরবরাহ করা হচ্ছে। এসব মাছের বেশীরভাগ নরম। স্বাদও নেই। কিন্তু দামের কমতি নেই। আধা কেজি হতে পৌনে এক কেজি সাইজের এসব ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ছয়শো হতে আকার ভেদে হাজার টাকার মধ্যে। মাছ ব্যবসায়ী রফিকুল বলেন, টাটকা মাছের সরবরাহ নেই। ফলে দাম চড়ায় থাকছে। সমুদ্র থেকে ফিরলে হয়তো মাছের সরবরাহ বাড়বে। তখন দাম কিছুটা কমলেও কমতে পারে। অব্সরপ্রাপ্ত প্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল বলেন, আগে এ মওসুমে দশ পনেরটা ইলিশ কিনে ফ্রিজে রাখতাম। বছরের অন্য সময় খাওয়া আর মেহমানদারী করা হতো। এবারে এখন পর্যন্ত একটা মাছ কিনে রাখতে পারেননি। সদরুল্লাহ নামের আরেকজন ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিবছর মেয়ের বাড়ি বেহাই বাড়ি ইলিশ পাঠাতেন। এবার এখনো তেমনটি হয়নি। কারন ভাল ইলিশ বাজারে নেই। পরিচিত মাছ বিক্রেতারা প্রতিবেদককে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন ভাল মাছ এলে খবর দেব। তাদের আশা ইলিশের সরবরাহ বাড়বে।
রাজশাহীর চারঘাটের জেলেরা বলছেন এবারের মত ইলিশের আকাল অতীতে আর কখনো দেখেননি। পিরোজপুরের মোজাম্মেল বলেন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার পর নদীতে জাল নিয়ে নেমে প্রায় খালি হাতে ফিরছেন। সেখানকার বাজারের মোস্তাকিন বলেন প্রত্যেক বছর নিষেধাজ্ঞা শেষ হলে পরদিন থেকে বাজারে ইলিশ আসতে থাকে। এবারের চিত্র ভিন্ন। বাজারে যা আসছে তার সবি সাগরের। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও ওলিউল মোল্লা বলেন আমাদের কাছে মনে হচ্ছে এবার পদ্মায় ইলিশ কম। ইলিশ মূলত সাগর থেকে নদীতে ¯্রােতের উজানে ডিম ছাড়ার জন্য নদীতে পাড়ি দেয়। দিনে দিনে পদ্মার নাব্যতা কমে আসছে। ফলে কাংখিত ¯্রােত হচ্ছেনা।
বাঘার চক রাজাপুর ইউনিয়ন মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি ওলিউর রহমান বলেন ইলিশ নিয়ে হতাশার কথা। তবে তিনি বলেন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বেশ কিছু জেলে ইলিশ ধরেছে। মৎস্য বিভাগের অভিযানে তাদের জালও খোয়া গেছে। মৎস্য কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা নদীতে নেমেছে। কিন্তু প্রত্যাশিত ইলিশের দেখা নেই। কিছু জাটকা সাইজের মিলছে। তবে এখন জাটকা ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ঈশ্বরদি হার্ডিজ্ঞ ব্রীজের নীচে নৌকা নিয়ে বসেছিলেন হজরত আলী। তিনি জানালেন বড় ইলিশের দেখা মিলছেনা। অন্য মাছও নেই। তাদের সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। অনেকে ইলিশের জাল বাদ দিয়ে অন্য মাছ ধরার সরজ্ঞাম ব্যবহার করছে।
ইলিশ ধরার মওসুমে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে। বাজারে সরবরাহ থাকে ভাল। ফলে অন্যান্য মাছের চাহিদা কমে। দামও কমে যায়। এবার ইলিশের সররাহ না থাকায় অন্যন্য মাছের দামে প্রভাব পড়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ