Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

দক্ষিনাঞ্চলে করোনা পরিস্থিতির আশাতীত উন্নতি, নমুনা পরীক্ষা আশংকাজনক হারে কমছে

স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকগন

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০২১, ১:৩৯ পিএম

দেশের দক্ষিনাঞ্চলে করোনা পরিস্থিতির আশাতীত উন্নতির সাথে নমুনা পরিক্ষাও আশংকাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় ইতোপূর্বে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা আড়াই হাজার থেকে এখন শূণ্যের কোঠায়। তবে নমুনা পরিক্ষার সংখ্যাও ৩ হাজার থেকে মাত্র ১২০ জন হ্রাস পেয়েছে। ইতোপূর্বে বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩শ শয্যার করোনা ও আইসোলেশন ওয়ার্ডের মেঝেতেও যেখানে কোভিড-১৯ রোগীর স্থান হতনা, এখন সেখানে মাত্র ১৭-১৮ জন চিকিৎসাধীন। তবে করোনা পরিস্থিতি উন্নতির সাথে নমুনা পরিক্ষায় সাধারন মানুষের আগ্রহে ভাটা পড়ায় উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সাথে স্বাস্থ্য বিভাগও। পাশপাশি নুন্যতম স্বাস্থ্য বিধিও কেউ অনুসরন না করায় স্বাস্থ্য বিভাগের উৎকন্ঠাও বাড়ছে।
গত জুলাই মাসই দক্ষিণাঞ্চলে করোনার মহাসংকটকাল অতিক্রম কালে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় প্রায় ৪১ হাজার নমুনা পরিক্ষায় শনাক্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৫ হাজার, মৃত্যু হয় ১৪০ জনের ওপরে। এরমধ্যে বরিশাল মহানগরীতেই আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ৩ হাজার। মৃত্যু হয়েছিল ১২ জনের।
অথচ গত মে মাসে এ অঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩৮০। মৃত্যু হয়েছিল ২৫ জনের। তবে গত আগষ্টের মধ্যভাগ থেকেই দক্ষিনাঞ্চলে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করলেও গোটা মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ৯ হাজার। মৃত্যু হয় ১৬৭ জনের। সেপ্টেম্বরে পরিস্থিতির নতুন মোড় নিয়ে সংক্রমনে আশাব্যঞ্জক উন্নতি হয়। এ মাসে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ১ হাজার ১৯৫ জনে হ্রাস পায়। মৃত্যু হয়েছিল ২৩ জনের। আর পুরো অক্টোবরে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ২১৭ জন। মারা গেছেন দুজন। চলতি মাসের প্রথম দিন দক্ষিণাঞ্চলে কোন আক্রান্তের খবর দেয়নি স্বাস্থ্য বিভাগ। ২ নভেম্বর তিনজনের অক্রান্তের খবর মিলেছে। কোন মৃত্যু সংবাদ নেই।
এনিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় গত ১৯ মাসে ২ লাখ ২১ হাজার ৯৭৫ জনের নমুনা পরিক্ষায় ৪৫ হাজার ২৬৮ জনের দেহে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৬৭৯ জনের। এরমধ্যে মহানগরীতে সাড়ে ১০ হাজার সহ বরিশাল জেলাতেই আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ হাজার ২৯৫ জন। সর্বশেষ হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলে শনাক্তের গড়হার ২০.৩৮% হলেও গত কয়েকদিনে তা ছিল ২%-এর নিচে। তবে গত ২৪ ঘন্টায় মাত্র ১৩২ জনের নমুনা পরিক্ষায় ৩ জনের দেহে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। আর এসময়ে ১১ জন সহ দক্ষিণাঞ্চলে সর্বমোট সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪৩ হাজার ৪৩৬ জন। গড় সুস্থতার হার এখন ৯৫.৯৫%।
এদিকে চিকিৎসক, নার্স এবং চিকিৎসা কর্মী সহ চিকিৎসা সহায়ক সরঞ্জামের সংকটের মধ্যেও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৯টি জেলার করোনা রোগী চিকিৎসায় বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলা ছাড়াও মাদারীপুর, শরিয়তপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার বিপুল সংখ্যক করোনা রোগীও গত ১৯ মাসে এ হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহন করেছেন। এমনকি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থান সংকুলন না হওয়ায় বাগেরহাটের অনেক করোনা রোগী শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
গত বছর মার্চের মধ্যভাগ থেকে চলতি বছরের অক্টোবরের শেষভাগ পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলার জেনারেল হাসপাতাল এবং ৪০টি উপজেলা হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যে ৫ হাজার ৯০৯ জন করোনা আক্রান্তকে ভর্তি করা হয়েছে, তার ২ হাজার ৩৫০ জনই শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের এসব হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশনে যে প্রায় ১২ হাজার জনকে ভর্তি করা হয়েছে, তার ৫ হাজার ১২ জনই ভর্তি হয়েছেন শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ইতোমধ্যে এ হাসপাতালটির করোনা ও আইসোলেশন ওয়ার্ডে ৭ হাজার ৩৬২ জন ভর্তি হয়েছেন। তবে চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র প্রদান সহ অন্য হাসপাতালে পাঠান হয়েছে ৫ হাজার ৯২১ জনকে। তবে গত ১৯ মাসে এ হাসপাতালের করোনা ও আইসোলেশন ওয়ার্ডে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৪২৬ জনের।
সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী দক্ষিণাঞ্চলে সর্বমোট ৪৫ হাজার ২৬৮ জন করোনা শনাক্তের মধ্যে পটুয়াখালীতে আক্রান্ত ৬ হাজার ২২১ জন। জেলাটিতে ১০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভোলাতে আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৮৮৫ জন । দ্বীপ জেলাটিতে মারা গেছেন ৯১ জন। পিরোজপুরে আক্রান্ত ৫ হাজার ২৮৯, মৃত্যু হয়েছে ৮৩ জনের। সর্বাধীক মৃত্যুহারের বরগুনাতে ৩ হাজার ৯৫২ জন আক্রান্তের মধ্যে মারা গেছেন ৯৭ জন। গড় মৃত্যুহার ২.৪৫%। আর সর্বোচ্চ সংক্রমন হারের দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে ছোট জেলা ঝালকাঠীতে এপর্যন্ত ১৯ হাজার ১৪ জনের নমুনা পরিক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪ হাজার ৬৫৩ জনের দেহে। গড় শনাক্তের হার ২৪.৪৭%। জেলাটিতে এপর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৬৯ জনের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ