Inqilab Logo

বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১, ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

৬২ বছরেও দেখেনি লাভের মুখ

যশোরে সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামার

শাহেদ রহমান, যশোর থেকে | প্রকাশের সময় : ১ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৬ এএম

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের দারিদ্র্য বিমোচন ও আমিষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে যশোর শহরের শঙ্করপুর এলাকায় ২৭ বিঘা জমির ওপরে যশোর সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামার গড়ে তোলা হয়। যশোর অঞ্চলে মুরগি বাচ্চার চাহিদা রয়েছে বছরে ৩৬ লাখের বেশি। অথচ এ খামারে বছরে মাত্র দুই লাখ বাচ্চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। ৬২ বছরে কখনও লাভের মুখ দেখেনি প্রতিষ্ঠানটি।
মুরগি খামার সূত্রে জানা যায়, গরমসহিষ্ণু ফাউমি জাতের মুরগির বাচ্চার চাহিদা এ অঞ্চলে বেশি। তবে এখানে চাহিদা অনুযায়ী মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান, যশোর অঞ্চলে এই মুরগির বাচ্চা পালনের চাহিদা অনেক বেশি। বাচ্চা উৎপাদনের আধুনিক যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। ঘর আধুনিকায়ন করে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ বাড়লে বাচ্চা উৎপাদন সম্ভব।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মুরগির বাচ্চা ফোটানোর ছয়টি আধুনিক যন্ত্র (ইনকিউবেটর) রয়েছে। প্রয়োজনীয় ডিমের জোগান না থাকায় ওই যন্ত্র বন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। মুরগি পালনের জন্য ২২টি শেড রয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি ব্যবহার অনুপযোগী। শেডগুলোর চাল টিনের ও মেঝে নিচু। বাচ্চা পালনের জন্য আধুনিক কোন ব্রুডার হাউজ নেই। মুরগি পালনের শেডগুলি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়নি। স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুরগির বিষ্ঠা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। ফলশ্রুতিতে দুর্বল বাচ্চা উৎপাদন হচ্ছে।
জুন-২০ থেকে অক্টোবর-২১ মাস পর্যন্ত ১৫০ জন উদ্যোক্তা ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৭৩০টি বাচ্চার জন্য আবেদন করেছেন।
এ ব্যাপারে খামারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. সফিকুর রহমান বলেন, বছরে মাত্র দুই লাখ বাচ্চা উৎপাদনের অনুমোদন রয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ২৫ হাজার বাচ্চা আবার সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও যশোরের নিজস্ব খামারে পালনের জন্য রাখতে হয়। অবশিষ্ট ৭৫ হাজার বাচ্চা বিক্রির সুযোগ রয়েছে। উষ্ণ জলবায়ুতে খোলা পদ্ধতিতে ফাউমি জাতের মুরগির বাচ্চা পালনের উপযোগী। এই মুরগির রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। খাদ্য কম লাগে। বর্তমানে এক দিনের মুরগির বাচ্চার চাহিদার ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে। আমাদের এখানে বছরে সরকারের ব্যয় হচ্ছে এক কোটি টাকা আর আয় ৭০ লাখের মতো। মুরগি রাখার ঘরসহ অন্যান্য অবকাঠামো প্রাচীন আমলের। এজন্য বরাদ্দ চেয়েছি। এটি পাওয়া গেলে উন্নত খামার হিসেবে এটিকে প্রতিষ্ঠা করা যাবে।
তা ছাড়া ২৮ জন জনবলের মধ্যে মাত্র ৭ জন জনবল নিয়ে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলছে। খামারটি পূর্ণভাবে চালু হলে বছরে ৪০ লাখ ৩২ হাজার মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হবে। গত অর্থ বছরের ৬৭% বাচ্চা হয়েছে এবং চলতি অর্থ বছরে বৃদ্ধি পেয়ে ৮৭% বাচ্চা হচ্ছে। একটি ঘুর্ণায়মান তহবিলের থাকলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন তিনি।
১২ টাকা দামের এক দিনের মুরগির বাচ্চা বেসরকারিভাবে দ্বিগুণ দামে উদ্যোক্তাদের কিনতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
যশোর সদরের লতিফা ইসমিন লতা নামের একজন উদ্যোক্তা বলেন, সরকারি খামারের মুগির বাচ্চা জন্য আবেদন করে ছয় মাস পর মাত্র ৫০০ বাচ্চা পেয়েছি। চার বছর ধরে মাত্র তিন বার মুরগি পেয়েছি। বেসরকারিভাবে মুরগীর বাচ্চা ২২-২৪ টাকায় কিনতে হয়। এদিকে মুরগীর খাবারের বস্তা প্রতি প্রায় ৫০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মুরগী পালনে ক্ষতি হচ্ছে বেশী।
যশোরের বেলভেকুটিয়ার মউনউদ্দিন হিমেল জানান, মুগীর পালন করার জন্য তিনটি শেড করি, প্রায় তিন হাজার বাচ্চা পালন করা সম্ভব। কিন্তু সরকারি খামারের মুরগির বাচ্চা জন্য আবেদন করলে ৬/৭ মাস পর ১০০ থেকে ২০০ বাচ্চা দেয়। তাই বেসরকারিভাবে বাচ্চা ক্রয় করি, যাতে দেখা যায় খরচের টাকা উঠেনা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ